বিশেষ প্রতিবেদক, রাজশাহী
রাজশাহী নগরবাসীর গলার কাঁটা অটোরিকশা
বারবার সময় বেঁধে দেওয়া হলেও অটোরিকশার লাগাম টেনে ধরতে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক)। চলাচলে সুবিধা পেলেও নিয়ন্ত্রণহীন এ বাহনটির কারণে নগরীতে যানজট এখন নিত্যদিনের ঘটনা। যে কারণে কম খরচে চলাচলের এই বাহনটি এখন গলার কাঁটার ভূমিকায়। যত্রতত্রভাবে এসব অটোরিকশার চলাচলে নিয়ন্ত্রণ করতে রাসিকের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুই রঙে (লাল-সবুজ) রাঙানোর ঘোষণা করা হয়। রাসিক কর্তৃক ঢাকঢোল পিটিয়ে গত ১ জুলাই থেকে মহানগরীতে দুই শিফটে এসব অটোরিকশা চলাচলের জন্য ঘোষণা করা হলেও তা কার্যকর হয়নি। বর্তমানে মহানগরীতে প্রায় ৩০ হাজার অটোরিকশার চলাচল থাকলেও রাসিকের অনলাইনে নিবন্ধনের জন্য রোববার পর্যন্ত আবেদন পড়েছে ৩ হাজারেরও কম। ফলে নিয়ন্ত্রণহীন এসব অটোরিকশার লাগাম ধরতে এখন পর্যন্ত রাসিকের নেওয়া সব উদ্যোগই ভেস্তে গেছে। ছোট এই নগরীতে চলাচলরত নিয়ন্ত্রণহীন এসব অটোরিকশার নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে ট্রাফিক বিভাগও।
এদিকে দিনের শুরুতে রাজশাহী কলেজ গেট, সোনাদিঘীর মোড়, সাহেব বাজার ও আলুপট্টির মোড়সহ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কের চিত্র দেখলে মনে হয় অটোরিকশা মেলা। যেদিকেই চোখ যায় সেদিকেই শুধু অটোরিকশা। কারণ যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে তারা যাত্রী ওঠা-নামানো করে। ফলে সৃষ্টি হয় যানজটের। ভোরের আলো পূর্ব দিগন্তে ফোটার সঙ্গে সঙ্গে রাজশাহী নগরীর প্রধান প্রধান সড়কগুলো থেকে শুরু করে অলিগলির রাস্তাগুলোও এখন চলে যাচ্ছে অটোরিকশার দখলে। পরিস্থিতি দেখলে মনে হয় যাত্রীর চেয়ে অটোরিকশার সংখ্যাই বেশি। বিপুল পরিমাণ এই অটোরিকশার জট থামাতে হিমশিম খাচ্ছেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) ট্রাফিক বিভাগও। আর নিয়ন্ত্রণহীন এসব অটোরিকশার কারণে প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। ঘটছে প্রাণহানির ঘটনাও।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ব্যাটারি চালিত তিন শ্রেণির অটোরিকশা চলে রাজশাহীতে। এর মধ্যে ৮ জন যাত্রীবাহী অটোরিকশা রয়েছে প্রায় ২৫ হাজার এবং তিনজন ও দুজন যাত্রীবাহী ছোট অটোরিকশা রয়েছে আরো প্রায় ৫ হাজার। সব মিলিয়ে অন্তত ৩০ হাজার অটোরিকশা চলাচল করছে ছোট্ট এই নগরীতে। তবে এগুলোর মধ্যে মাত্র ১৪ হাজার ২৬২টি অটোরিকশার নিবন্ধন দেয়া হয়েছিল ২০১১-১৩ সালের মধ্যে। এরপর আর অটোরিকশার নিবন্ধন দেওয়া না হলেও সব অটোরিকশাতেও সিটি করপোরেশনের নিবন্ধন নম্বর দেখা যায়। যদিও এরই মধ্যে অটোরিকশার নীতিমালা তৈরি করে আগের সব নিবন্ধন বাতিল করে নতুনভাবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে নির্দেশনা দেয় রাসিক।
সূত্র মতে, অটোরিকশা চালকদের অসহযোগিতার কারণেই দুই শিফটে দুই রঙের অটোরিকশা চলাচলের ব্যবস্থা এখনো করতে পারেনি রাসিক। অথচ নগরীতে এখনো প্রতিদিন প্রধান প্রধান সড়ক দখলে থাকছে অটোরিকশার। আগের সব নিবন্ধন বাতিল করা হলেও সেই অটোরিকশাগুলোই আগের ভুয়া নিবন্ধন নিয়ে চলছে নগরীর রাস্তাগুলোতে। কারণ যে সময়ে অটোরিকশার নিবন্ধন দেওয়া হয়েছিল সেই অটোরিকশাগুলো এরই মধ্যে অন্তত ৮০ শতাংশ পুরোনো হয়ে অকেজো হয়ে পড়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, সিটি করপোরেশনেরই একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তারা পুরোনো লাইসেন্সের নম্বর বিক্রি করেছেন অবৈধভাবে। যার কারণে এখন অটোরিকশাগুলো রাসিকের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে।
গতকাল রাজশাহী নগরীর ব্যস্ততম এলাকার সাহেব বাজারে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, আশপাশের চারদিকে অটোরিকশা আর অটোরিকশা। যেন ধাপ ফেলানোরও জায়গা নেই কোথাও। অটোরিকশার ভিড়ে মানুষগুলোও চোখে দেখা যায় না। সাহেব বাজারের অটোরিকশার যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি নামানো হয়েছে কমিউনিটি ট্রাফিক সদস্যদেরও। কিন্তু কে শোনে কার কথা। এত অটোরিকশার ভিড়ে কেউ কাউকে সামাল দিতে পারছেন না। অটোরিকশার দাপটে এখন গোটা শহর যেন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘ছোট এ শহরের যানজটের মূল কারণই হচ্ছে বেপরোয়া অটোরিকশা চালকরা। এদের নিয়ন্ত্রণ করাই কঠিন। ফলে দুর্ঘটনাও ঘটে প্রচুর। তবে এ বিষয়টি অধিকতর গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। আশাকরি খুব শিগগিরই এর সমাধান আসবে।’
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা আবু সালেহ বলেন, ‘বর্তমানে ব্যাটারিচালিত রিকশার এই বাহনটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে প্রতিয়মান। সিটি করপোরেশেনের পক্ষ থেকে এগুলো বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও পরবর্তিতে সেই সিদ্ধান্ত শিথিল করা হয়েছে। তবে দ্রুতই দুই শিফটে দুই রঙের অটোরিকশা চলাচলে আমরা কঠোর অবস্থানে যাব।’
এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণে দুই রঙ (লাল-সবুজ) করে দুই শিফটে (সকাল-দুপুর) পরিচালনার বিষয়টি দ্রুত কার্যকর করা হবে। এ লক্ষ্যে সব প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এ সিদ্ধান্ত অমান্যকারী চালকরা মহানগরীতে কোনোভাবেই অটোরিকশা চালাতে পারবে না।’
"