নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২০ জুলাই, ২০১৯

রাজধানীতে অভিনব প্রতারক

বাসাভাড়া চাইলেই মালিকের নামে মামলা

প্রথমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হোস্টেলের নামে বয়স্ক ও নিঃসন্তান বাড়িওয়ালাদের বাড়িভাড়া নেয় একটি চক্র। এরপর মিথ্যা মামলা দিয়ে নাজেহাল করে বাড়ি দখলের চেষ্টা করে তারা। প্রয়োজন পড়লে বাড়ির মালিককেই বানানো হয় ডাকাত। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে বাড়িভাড়া না দিয়ে উল্টো হয়রানির মামলা দেওয়া হয় বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে। রাজধানীর খিলক্ষেত ও নিকুঞ্জ এলাকায় এমনই অভিনব প্রতারক চক্রের সন্ধান পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা প্রয়োগকারী সংস্থা। পুলিশ বলছে, ওই চক্রের অত্যাচারে তারা রীতিমতো অতিষ্ঠ। খিলক্ষেত এলাকার এক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে অভিযোগ আসার পর, অনুসন্ধানে মিলল এই চক্রের প্রতারণার নানা কাহিনি। এমনকি, বাড়িভাড়া পরিশোধ না করে উল্টো হয়রানি করে মামলা করা হয়। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাড়িভাড়া নেওয়া হয় রেসিডেন্সিয়াল ল্যাবরেটরি কলেজ ও হোস্টেলের নাম দিয়ে। আজিজুর রহমান সুমন এই চক্রের হোতা। সুমনের বিরুদ্ধে খিলক্ষেত ও নিকুঞ্জ এলাকায় বেশ কটি মামলা ছাড়াও রয়েছে অন্তত ১০টি সাধারণ ডায়েরি।

ভুক্তভোগী সৈয়দ ইয়াসমিন জায়েদী বলেন, ‘বাড়িভাড়া নেওয়ার পর সে এখন আর আমাদেরই বাড়িতে ঢুকতে দেয় না। সে আমাদের থেকে ভাড়া নিয়ে আমাদেরই বলছে ডাকাত। বাড়ির মালিক হয়েও আমরা বাড়িতে ঢুকতে পারব না।’ এখন সে ভাড়াও ঠিকভাবে দিচ্ছে না, বাড়িও ছাড়ছে না বলে অভিযোগ করেন এই ভুক্তভোগী। আর ভুক্তভোগী সৈয়দ জাফর জায়েদী বলেন, ‘সে প্রথম থেকেই ভাড়া দিতে ঝামেলা করত। এরপর, ভাড়ার জন্য বারবার তাগাদা দিলে সে উল্টো আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দেয়।’ আরেক ঘটনায় জানা যায়, খিলক্ষেত ১নং রোডে ভাড়ার টাকা চাইতে গেলে ৮০ বছর বয়সি বাড়ির মালিক বাদশা মিয়াকে মারধর করে সুমন। বাদশা মিয়াকে উদ্ধারের সময় পুলিশের ওপরও হামলা চালায় সে। পাওনা ৩৫ লাখ টাকা পরিশোধের বদলে তার নামে দেওয়া হয় ডাকাতির মামলা।

সুমনের কাছে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা পাবেন বলে জানান বাড়ির মালিক বাদশা মিয়া। এখন সে টাকাও দিচ্ছে না উল্টো হয়রানি করছে বলেও জানান এই বাড়ির মালিক। ভাড়ার নামে প্রতারণা ও হয়রানির ব্যাপারে খোঁজ নিতে খিলক্ষেত থানায় গেলে পুলিশ জানায়, অনেক অভিযোগই তাদের কাছে এসেছে। তদন্ত করতে গিয়ে তাদেরও হয়রানির শিকার হতে হয়।

এ বিষয়ে খিলক্ষেত থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আদিল হোসেন বলেন, ‘সুমনের বিরুদ্ধে থানায় আট থেকে ১০টি জিডি রয়েছে। এছাড়া পুলিশকে হেনস্তা করার মামলাসহ দুটি মামলা আছে।’ তার জন্য থানায় দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তারাও অতিষ্ঠ বলে মন্তব্য করেন আদিল হোসেন। এমনকি পুলিশের ওপর হামলা করে উল্টো তাদের বিরুদ্ধেই আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানানো হয় পুলিশের পক্ষ থেকে।

বর্তমানে সুমনের দায়ের করা মামলার তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। বাড়িওয়ালাদের বিরুদ্ধে ভাড়াটিয়া সুমনের দায়ের করা মামলা আদালত খারিজ করে দেয়। নারাজির পর তা তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তদন্তকারী সংস্থাটি জানায়, মামলার সত্যতা পাওয়া যায়নি। উল্টো সুমনের বিরুদ্ধেই মিলছে নানা অভিযোগ। পিবিআইয়ের প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার গণমাধ্যমকে জানান, সে এমন সব বাড়িগুলো টার্গেট করে যে বাড়িগুলোর শক্তিশালি কোনো ওয়ারিশ নেই। এরপর সে দীর্ঘদিন ভাড়া দেয় না। বর্তমানে এই ঘটনার তদন্তে কাজ চলছে জানিয়ে তিনি এটিকে প্রতারণার একটা চক্র হিসেবেই অভিহিত করেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ আজিজুর রহমান সুমনের এই প্রতারণা চক্রে রয়েছেন তার পরিবারের সদস্য ও কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী। মূলত আইনের ফাঁকফোকরকেই অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন তারা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close