বিশেষ প্রতিবেদক, রাজশাহী

  ১৯ জুলাই, ২০১৯

রামেক হাসপাতাল

চিকিৎসা নিতে আসা রোগী-স্বজনরা বিপাকে

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল চত্বর আবারও মাইক্রোবাস সিন্ডিকেটের দখলে চলে গেছে। যেখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের গাড়ি রাখার কথা। কিন্তু ওই স্থানেই সিন্ডিকেটের মাইক্রোবাসগুলো দখল করে স্ট্যান্ড বানিয়েছে। হুমকি-ধামকির ভয়ে বাহিরে থেকে আসা গাড়ির চালকরা কিছুই বলতে পারে না। ফলে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা পড়ছে বিপাকে। এর আগে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ওই স্থানে কিছুদিন গাড়ি বন্ধ ছিল।

এ বিষয়ে হাসপাতালের স্টাফরা জানান, হাসপাতালের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও পুলিশ বক্সের সঙ্গে আর্থিক বিনিময়ে স্থানীয় প্রভাবশালী গাড়ির চালকরা জরুরি বিভাগের সামনের এই চত্বরটি দখল করে নিজেদের মাইক্রোস্ট্যান্ড বানিয়েছে। তারা ভাড়াও নেয় অন্যান্য গাড়ির থেকে তিন-পাঁচ গুণ। তারপরও বাধ্য হয়ে রোগীর স্বজনরা তাদের গাড়িতে যায়। অথচ প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এসব মাইক্রোবাসের বেশির ভাগই অ্যাম্বুলেন্স নয়, কিন্তু রোগী বহনের জন্য তারা অ্যাম্বুলেন্স বলে চালিয়ে দেয়। এসব পরিবহনের অধিকাংশ গাড়িতেই নেই জীবন রক্ষাকারী অক্সিজেনের ব্যবস্থা। কয়েকটিতে থাকলেও তার মধ্যে সচল থাকার সংখ্যা কম। লোক দেখানোর জন্য জীবন রক্ষাকারী অক্সিজেন রাখার নামে তারা রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের তৎকালীন কমিশনার মো. মাহবুবর রহমানের নির্দেশে এক বছর আগে রামেক হাসপাতাল এলাকায় থাকা রোগী ও লাশবাহী মাইক্রোবাসগুলো হটিয়ে দেয়। পরে তিনি এখান থেকে বদলি হয়ে গেলে আবারও হাসপাতাল এলাকা দখল করে মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড বানানো হয়েছে। যে সিন্ডিকেটের কারণে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীবাহী গাড়ি রাখার জায়গা থাকে না। আবার তাদের হাসপাতাল থেকে কোনো রোগী ও লাশ নিয়ে যেতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। কোনো রোগী তাদের নির্ধারিত সেই গাড়িতে যেতে চাইলে বা গাড়ির চালক নিয়ে যেতে চাইলে হুমকি-ধামকি দেওয়া হয়। শুধু তাই নয় তাকে স্ট্যান্ডের খরচ বাবদ টাকা দিতে হয়। এ কারণে বাইরে থেকে আসা চালকরা কোনো ভাড়া নিয়ে যেতে পারেন না। এভাবে বছরের পর বছর চলে আসলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। তারা রোগী ও লাশ জিম্মি করে নিজেদের গাড়িতে যেতে বাধ্য করে। এছাড়াও অটোরিকশা চালকরাও জায়গা দখল করে তাদের অটোরিকশা রাখে। অনেক সময় এসব অটোরিকশার জন্য রোগীবাহী গাড়ি ঢুকতে সমস্যা হয়, কখনো কখনো কয়েক মিনিট সময় লেগে যায় হাসপাতালের মেইনগেট দিয়ে প্রবেশ করতে।

সূত্র মতে, হাসপাতালের স্ট্যান্ডে বর্তমান সময়ে গাড়ি রাখতে পারার কারণে তারা হাসপাতালের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে লোক পাঠিয়ে রোগী মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়। আর হাসপাতালে গেট পাস সিস্টেমের কারণে খোদ রোগীর একাধিক স্বজন যেতে না পারলেও দালালরা ঠিকই ওয়ার্ডে প্রবেশ করতে পারে। এত কিছুর পরও এসব গাড়ি চালক ও চিহ্নিত দালালরা বহাল তবিয়তে তাদের কাজ করে যাচ্ছে। রামেক হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, রোগী ও লাশবাহী গাড়িতে হাসপাতাল চত্বর ভর্তি রয়েছে। বাহিরে থেকে আসা রোগী বহনকারী গাড়ি সেখানে প্রবেশ করতে হিমশিম খাচ্ছে। আর চিহ্নিত গাড়ি সিন্ডিকেটের দালালরা সেখানে অবস্থান করছেন। তাদের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে পারে না। রামেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজন খাইরুল বলেন, ‘আসার সময় আমরা নিজেদের গাড়িতে এসেছিলাম। কিন্তু যাওয়ার সময় তারা আমাদের গাড়িতে যেতে বাধা দেয়। গেলে তাদের স্ট্যান্ডের খরচ এমনকি সেই ভাড়া পর্যন্ত দেওয়ার দাবি করে।’ আরেক রোগীর স্বজন আশরাফুল বলেন, ‘পুঠিয়া যাবার জন্য সর্বোচ্চ দেড় হাজার টাকার ভাড়া হলেও স্ট্যান্ডের গাড়ি চালকরা সাড়ে ৩ হাজার টাকার কমে যেতে চাচ্ছে না।’ অপর মৃত রোগীর স্বজন জামাল বলেন, ‘আমার রোগী মারা গেছে তাই গোদাগাড়িতে নেওয়ার জন্য বললে তারা ভাড়া হিসাবে ৬ হাজার টাকা দাবি করছে। অথচ, এ দূরত্বের জন্য অন্য মাইক্রোবাস সর্বোচ্চ দেড় হাজার টাকা ভাড়া নিবে। এখন কী করব, বাধ্য হয়েই এই সিন্ডিকেটের গাড়ি নিতে হচ্ছে। এ বিষয়ে রামেক হাসপাতালের উপপরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘হাসপাতাল চত্বর থেকে রোগী ও লাশবাহী গাড়ি হঠিয়ে দেওয়ার খুব শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হবে।’ এ বিষয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপির) মুখপাত্র অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (সদর) মো. গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট রাজপাড়া থানার ওসিকে নির্দেশ দেব।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close