আসাফুর রহমান কাজল, খুলনা

  ২৯ এপ্রিল, ২০১৯

নয়াবাটির হাটে মেলে হরেক পোষাপাখি

ছুটির দিনের নির্জীব সকাল। পাখির কিচিরমিচির কলতানে মুখরিত পরিবেশ। নানা রকম পাখিতে সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে এলাকাটি। এটি কোনো বন নয়, শখের পোষা পাখির হাট। এ হাট বসে প্রত্যেক শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত। এ হাটে দেখা মেলে নানা রংয়ের পাখি। খুলনার খালিশপুর নয়াবাটির মোড়ে বসে এ হাট। জেলার একমাত্র পাখির হাট এটি।

গত শুক্রবার সরেজমিন দেখা যায়, নানা প্রজাতির পাখি নিয়ে সেখানে বসে আছেন বিক্রেতারা। বিক্রিও হচ্ছে। বেশিরভাগ বিক্রেতাই বিভিন্ন জাতের কবুতর, শালিক, টিয়া, ময়না, কোয়েলসহ নানা জাতের বন্যপাখিও নিয়ে বসেছেন। সৌখিন পাখি প্রেমীদের কথা মাথায় রেখে এই হাটে আসে প্রায় সব ধরনের পোষা পাখি। এছাড়া এখানে পাওয়া যায়- বাজিগার, জাবা, ককাটেল, লাভবার্ড, মুনিয়া, প্রিন্স, অষ্ট্রেলিয়ান ঘুঘু, সিরাজি কবুতর, কিং কবুতর, গিরিবাজ, হুমার, জ্যাকোবিন, সাটিং, পায়রা, তিত, খরগোশ, বিলেতি ইঁদুর, মুরগি, কোয়েল পাখি, টার্কি ইত্যাদি।

নয়াবাটি বটতলার মোড়ে প্রতি শুক্রবার সকাল ৮টায় বসে এ হাট। চলে দুপুর পর্যন্ত। খুলনাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ী ও পাখী প্রেমীরা আসেন এখানে। কেউ পাখি কিনে খুশি হয়, কেউ বিক্রি করে আর কেউবা আসেন বিভিন্ন রকমের পাখি দেখতে। অনেকে এখান থেকে পাখি কিনে এখানেই বিক্রি করে লাভবান হন। এ হাটে ২শ টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকার পর্যন্ত পাখি বিক্রি হয়।

শখের বসে কবুতর পালন করেন শিরোমনি খানজাহান আলী কলেজের ¯œাতক পড়–য়া এ এস এম মেজবাউল করীম। কয়েকটি লোহার খাঁচায় জ্যাকোবিন, সাটিং জাতের ১০ জোড়া কবুতর নিয়ে বসেছেন। আধা ঘণ্টার মধ্যে ৩ হাজার টাকার পাখি বিক্রি করেছেন। আশা করছেন সব পাখিই বিক্রি হয়ে যাবে।

সাপ্তাহিক এ পাখির হাটে মেয়ে মারজান রাসুল ঈশিত্বকে নিয়ে শখের পাখি কিনেত আসেন নুজহাত নাইমা রাসুল অরিন। তাদের পছন্দের পাখি দেশীয় টিয়া। তিনি জানান, অনেকদিন ধরে মেয়ে আমার টিয়া পাখি পোষার বায়না ধরেছে। খোঁজ করে জানতে পারি, খালিশপুর নয়াবাটিতে পাখির হাট বসে। তাই আসলাম। এখানে অনেক পাখি। অন্যরকম পরিবেশ। এখানে আসলে পাখির কালকাকলিতে মন ভাল হয়ে যায়।

এলাকাবাসী জানান, প্রতি শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে এ হাট বসে। খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও যশোর জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের পাখিপ্রেমীরা ছুটে আসেন এখানে। রাস্তার কয়েক’শ গজের ওপরে এ হাটের কারণে নিজেদের চলাচলে সমস্যা হলেও এ হাট নিয়ে খুশি স্থানীয়রা।

পাখি ব্যবসায়ী রাশেদ মল্লিক জানান, এখানে পাখি বিক্রেতাদের জন্য পানিসহ অন্যান্য সকল সুবিধা রয়েছে। যারা দূর-দূরান্ত থেকে পাখি বিক্রি করতে আসে, তাদের জন্য স্বল্প খরচে খাওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। এখানে কোনো টোল বা খাজনা নেই। আমি ৮বছর ধরে এ হাটে পাখির ব্যবসা করি।

নগরীর বয়রা বাজার এলাকা থেকে নানা জাতের পাখি এনেছেন কুলসুম। ৩ বছর ধরে পাখির ব্যবসা কারায় এ হাটে তিনি ‘পাখি ভাবী’ নামে পরিচিত। তিনি শালিক, ময়না, মুনিয়া, বাজারিকা এবং কিছু কবুতর এনেছেন। এ কাজে আমি মনের তৃপ্তি পাই। পাখি যখন কথা বলে, তখন অন্যরকম ভাল লাগে। জানালেন ‘পাখি ভাবী’ কুলসুম।

নগরীর টুটপাড়া থেকে পারভেজ রহমান বাপ্পি এসেছেন পাখি দেখতে। খুলনায় থাকলে শুক্রবার সকালেই এ হাটে পাখি দেখতে আসেন বলে তিনি জানান।

স্থানীয় ১০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী তালাত হোসেন কাউট প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন পরিবেশে প্রতি শুক্রবার সকাল থেকে বসে এ হাট। দূর-দূরান্ত থেকে এখানে মানুষ আসে। কেউ কেনে, কেউ বেচে, আবার কেউ কেউ নানা রকেমর পাখি দেখতে আসে। এ হাটে কোনো ধরণের টোল নেওয়া হয় না। আগে এ হাটটি খালিশপুর চিত্রালী বাজার এলাকায় বসতো। কয়েক মাস হলো এখানে বসছে এ হাট।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close