তুহিন আহমদ, মহানগর (সিলেট)

  ২৬ এপ্রিল, ২০১৯

সিলেট ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা

সিলেটে দীর্ঘদিন থেকেই বেহাল ছাত্রলীগের রাজনীতি। দুই বছর আগে বিলুপ্ত হয় জেলা কমিটি। কমিটির চার বছর পর পূর্ণাঙ্গ হওয়ার আগেই বিলুপ্ত ঘোষণা হয়। ফলে দাফতরিক কোনো কার্যক্রম ছাড়াই এখন সিলেট ছাত্রলীগ। এখন কেন্দ্রের দিকেই তাকিয়ে আছেন সিলেটের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এমনকি তৃণমূল পর্যায়ে দলকে গতিশীল করতে ঢালাওভাবে নতুন করে সাজানো হবে সিলেট মহানগর ও জেলা ছাত্রলীগকে।

২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম তুষারকে ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ী বহিস্কারসহ মহানগর কমিটিও বাতিল ঘোষণা করা হয়। তবে গত ২৫ জানুয়ারি তুষারের স্থায়ী বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ।

২০১৫ সালে ২০ জুলাই ছাত্রলীগ সিলেট মহানগর শাখার চার সদস্য বিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই কমিটিতে সভাপতি আব্দুল বাসিত রুম্মান এবং সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম তুষার নির্বাচিত হন। সাংগঠনিক পদ পান সজল দাস অনিক এবং সৈকত চন্দ্র রিমি। এসময় মহানগর কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ করার নির্দেশও দেওয়া হয়। কিন্তু মেয়াদ শেষের তিন বছর পার করলেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি কমিটি। এনিয়ে কর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছিল। দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়ায় বয়সের কারণেও অনেক পদ প্রত্যাশীরা বাদ পড়ার দায়ভারের বিষয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেন। কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ করতে আংশিক কমিটি গঠনের আড়াই বছর পর কেন্দ্রে ১৫১ বিশিষ্ট কমিটির জন্য খসড়া তালিকা পাঠানো হয় বলে জানা যায়। পূর্ণাঙ্গ করার আগেই কমিটিকে বিলুপ্ত করা হয় কেন্দ্র থেকে।

এসব কিছুর পর বর্তমানে ত্যাগী ও যোগ্যদের নিয়ে দ্রুত নতুন কমিটি গঠন করে ছাত্রলীগকে গতিশীল করার আহবান জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা।

মহানগর ছাত্রলীগ নেতা আহমেদ তানভীর বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকেই ধীরগতিতে ছাত্রলীগের কার্যক্রম চলছি। জেলা কমিটি বিলুপ্ত হবার পর নতুন কমিটি গঠন হয়নি। মহানগর ছাত্রলীগের কমিটিও পূর্ণাঙ্গ না হয়ে সদ্য বিলুপ্ত হয়েছে। ফলে পরিচয়হীনতায় আছে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটির নেতৃবৃন্দের দিকেই চেয়ে আছে সিলেট ছাত্রলীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। দিন দিন আমেজবিহীন হয়ে যাচ্ছে ছাত্রলীগ। তবে আমরা আশা করি সেন্ট্রাল কমিটি গঠনের পরই তৃনমূলে দিকে নজর দেওয়া হবে। ’

সিলেট মহানগর ও জেলা ছাত্রলীগ সূত্র জানা যায়, মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম তুষারকে স্থায়ী বহিষ্কার ও কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণার পর পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত নতুন করে নেওয়া হয়েছিল। তবে ডাকসু নির্বাচনের কারণে বিষয়টি চাপা পড়ে যায়।

মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল বাসিত রুম্মান বলেন, ‘বর্তমানে কেন্দ্রীয় কমিটির দিকে আমরা তাকিয়ে আছি। এটি পূর্ণাঙ্গ হলেই তারা তৃণমূলের দিকে নজর দেওযা হবে। এদিকে, বারবার বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ায় অনেকবার কমিটি বাতিল ঘোষণা করা হয় সিলেট জেলা ছাত্রলীগের। সর্বশেষ গত বছরের ১৮ অক্টোবর রাতে জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। শুরুতে ২০১০ সালের ১০ জুলাই টিলাগড়ে খুন হন এমসি কলেজের গণিত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র উদয়েন্দু সিংহ পলাশ। ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলো পলাশ। তাকে খুনের ঘটনায় সেই সময় বিলুপ্ত ঘোষিত হয় জেলা ছাত্রলীগের কমিটি। বিলুপ্তির ৩ মাস পর ২০১০ সালের ২০ অক্টোবর পংকজ পুরকায়স্থকে সভাপতি ও ফরহাদ হোসেন খানকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন জেলা কমিটি গঠিত হয়। ওই সময় এমসি কলেজে ছাত্রলীগের প্রতিপক্ষ গ্রুপের ওপর গুলিবর্ষণ ও হামলা চালানো এবং সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকান্ডের কারণে পংকজ পুরকায়স্থকে ২০১৩ সালের ২২ জানুয়ারি সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। তবে পরবর্তী সময়ে ২২ ফেব্রুয়ারি দল থেকেই তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। এরপর ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান হিরণ মাহমুদ নিপু। ২০১৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সিপিবি-বাসদের আয়োজিত সমাবেশে হামলার ঘটনায় আবারো বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় জেলা ছাত্রলীগের কমিটিকে। পরবর্তী সময়ে ২০১৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর শাহরিয়ার আলম সামাদকে সভাপতি ও এম রায়হান চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা ছাত্রলীগের নতুন আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। তবে ২০১৫ সালের ২৫ মার্চ টিলাগড়ে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের জেরে কমিটি স্থগিত থাকে ৯ মাস। এরপর ছাত্রলীগ কর্মী মিয়াদ হত্যায় তৃতীয়বারের মতো কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মুহিবুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে নতুন কমিটি হওয়া খুবই প্রয়োজন। ২০১৭ সালের শেষের দিকে আমরা জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছিলাম। আমরা চাই দ্রুত কমিটি গঠন হোক। তবে এখন সেন্ট্রাল কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হচ্ছে। এটি গঠন হলেই আমাদের জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি দ্রুত গঠন হবে বলে আমরা আশাবাদী। সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদ বলেন, ‘মূলত সেন্ট্রাল কমিটির দিকেই আমরা এখন তাকিয়ে আছি। আমরা আশাবাদী খুব শীঘ্রই কমিটি গঠন হয়ে জেলা ছাত্রলীগের দল চাঙ্গা হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close