আসাফুর রহমান কাজল, খুলনা

  ১২ এপ্রিল, ২০১৯

বৈশাখের আয়োজনে ব্যস্ত খুবি চারুকলা

বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী আজ ২৯ চৈত্র। দ্বারে কড়া নাড়ছে নতুন বঙ্গাব্দ ১৪২৬। তাকে বরণ করতে চলছে নানামুখী আয়োজন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) চারুকলা অনুষদে চলছে রং-তুলির কাজ। বাঙালির প্রাণের উৎসবকে বরণের প্রস্তুতি। সবচেয়ে বেশি রং ছড়ানো এ আয়োজনে থাকছে বাংলার লোকজ সংস্কৃতির সব অনুষঙ্গই। এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন ওই অনুষদের শিক্ষার্থীরা, যেন দম ফেলবার ফুরসুত নেই তাদের। খুবির চারুকলা ইনস্টিটিউটে এমনই চিত্র দেখা যায়।

চৈত্রের দুপুরে চারুকলা অনুষদে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে ছবি আঁকাআঁকির নানা দৃশ্য। বৈশাখের প্রস্তুতি আরো আগেই শুরু হয়েছে এখানে। ইনস্টিটিউটের প্রতিটি কক্ষে চলছে কাজ। বাইরে টাট্টু ঘোড়া, গরুর গাড়ি তৈরির কাজ আর ট্যাপা পুতুলের গায়ে জড়ানো হচ্ছে কাপড়। কেউ সেলাই, কেউ ফ্রেম বাঁধার কাজ করছে। কাজের ফাঁকে গান গেয়ে, কেউ কেউ হাসির কথা বলে প্রস্তুতি আয়োজনকে জমিয়ে রাখছেন। টাট্টু ঘোড়া, হাতির ফ্রেম তৈরির কাজ মারিয়া, সোনিয়া, মোহনা, সোমা, খাদিজা, আশা মৌমিতা, রিতা। পাশের কক্ষে রং-তুলির কাজও থেমে নেই। সেখানে প্রজাপতি, প্যাঁচা, ফোডিংসহ নানাবিধ প্ল্যাকার্ড তৈরি হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে রাজা-রানির প্রতিকৃতি। নতুন প্রাণ জেগে উঠেছে যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ আঙ্গিনায়।

এসবই হচ্ছে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতিপর্ব। বাঙালির এই প্রাণের উৎসবের আয়োজকরা মঙ্গল শোভাযাত্রাকে দেখছেন কল্যাণের বারতা হিসেবে। এবারও অনুষদের আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও শিল্পীদের অংশগ্রহণে বের হবে শোভাযাত্রা। অশুভকে হটিয়ে মঙ্গলালোকে সিক্ত হবে লাল-সবুজের বাংলাদেশ।

এই শিল্প সৃজনের মাঝে অনুষদের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী ঐন্দ্রিলা হাজরা জানান, আমরা আরো আগে থেকে কাজ শুরু করে দিয়েছি। এটা আমরা অনুশীলন হিসেবে নিচ্ছি। এমনিতেই আঁকার অনুশীলন আমাদের সব সময়ে চলে। তবে বৈশাখ উপলক্ষে সবারই ইচ্ছা হয় নতুন ও আকর্ষণীয় কিছু আঁকতে। তাই আগে থেকেই সময় নিয়ে শুরু করেছি।

একই বর্ষের মিঠু মন্ডল জানান, প্রস্তুতির কমতি নেই। বৈরী আবহাওয়া কিছুটা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। তারপরও সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। এবারের আয়োজনে নতুন কিছু মাত্রা যুক্ত হবে।

ককশিড দিয়ে রাজার প্রতিকৃতি তৈরিতে ব্যস্ত নীল দাস। তিনি জানান, বাঙালির ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে। এই ঐতিহ্য রক্ষা করতে এবং নতুন প্রজন্মকে ঐতিহ্য জানাতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আমাদের সংস্কৃতি ভুলে যাওয়া সংস্কৃতিকে ফের অনুভবে আনতে চাই। আগে গ্রামে গ্রামে মেলা বসত। বিলুপ্ত হতে যাওয়া এমন অনেক প্রাণির প্রতিকৃতি নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা করব। এর মাধ্যমে বিলুপ্তির হাত থেকে এসব প্রাণীদের রক্ষার প্রত্যয় ব্যক্ত করতে চাই। সেইসঙ্গে আমাদের সংস্কৃতিকে মনে করিয়ে দিতে চাই। বাঁশ, ককশিট, গুনাতার, কাপড়, কাগজ এবং রঙের ব্যবহার করছি আমরা। আশা করছি পহেলা বৈশাখে সবাই মিলে সম্প্রীতির মঙ্গল শোভাযাত্রা করব।

খুবির চারুকলা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মো. শেখ সাদি ভূঁইয়া জানান, ২০০৯ সাল থেকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট বর্ণাঢ্য আয়োজন করে আসছে। এবার খুবি থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়ে সোনাডাঙ্গা হয়ে শিববাড়ী মোড়ে গিয়ে শেষ হবে।

পহেলা বৈশাখ বাংলাদেশের সব ধর্মের সব জাতির নিজস্ব উৎসব। বাংলাদেশ সম্প্রতির দেশ। মঙ্গল শোভাযাত্রায় সবাই অংশ নেবে। আগের দিন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে থাকছে চৈত্র সংক্রান্তি। এদিন বিকেল সাড়ে ৩টায় সাপ খেলা, পুতুল নাচ, ফানুস উড়ানো, ঘুড়ি উৎসব, লাঠি খেলা, দড়ি টানাসহ নানা আয়োজন থাকছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close