সেখ জিয়াউল হক, রাজশাহী

  ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

রাজশাহী রেলস্টেশনে প্রকাশ্যে ধূমপান!

শুক্রবার বিকেল ৩টা। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের ভেতরে একজন যাত্রী ধূমপান করছেন। দূরদূরান্ত থেকে আসা হাজারো যাত্রীর মধ্যে তিনি কোনো অপরাধবোধ ছাড়াই করছেন ধূমপান। আশপাশের মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথাতো অনেক দূরের কথাÑ পাবলিক প্লেসে ধূমপান করা যে অপরাধ সেই আইনটাও মানছেন না তিনি। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের ভেতরে এমন দৃশ্য প্রাত্যাহিক জীবনের একটি অংশ। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, জনগণ নিজেরা সতর্ক না হলে ধূমপান বন্ধ করা কঠিন। তারপরও স্টেশনটিকে ধূমপানমুক্ত ঘোষণা করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

শুক্রবার বিকেলে সরেজমিন দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা অনেক যাত্রী রেলওয়ে স্টেশনের ভেতরে অবস্থান করছেন। তাদের অনেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করছেন। কেউ গন্তব্যে যাওয়ার উদ্দেশে স্টেশনের ভেতরে অপেক্ষা করছেন, কেউ ট্রেন ধরার জন্য যাচ্ছেন প্ল্যাটফরমে। আবার কেউবা ট্রেন থেকে নেমে প্ল্যাটফরম দিয়ে হেটে স্টেশনের ভেতর দিয়ে বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছেন। এমন লোকসমাগমের ভেতর ধূমপান করার দৃশ্য দেখে অনেক যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

খুলনার পাইকগাছা যাবেন যাত্রী আবদুল্লাহ বিন মারুফ। গন্তব্যে যাওয়ার উদ্দেশে তিনি রেলওয়ে স্টেশন ভবনে অবস্থান করছেন। এ সময় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, স্টেশন ভবন একটি পাবলিক প্লেস হওয়া সত্ত্বেও লোকজন দেদার ধূমপান করছে। অথচ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই আমরা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ দেখছি না।

সরেজমিন দেখা গেছে, স্টেশনের ভেতরে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এবং ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট-এসিডির যৌথ উদ্যোগে কিছু সতর্কীকরণ সাইনেজ রয়েছে। কিন্তু রেলওয়ে ভবনের প্রবেশ ও বাহির পথে আইন অনুযায়ী ‘ধূমপান হইতে বিরত থাকুন, ইহা শাস্তিযোগ্য অপরাধ’ সংবলিত নোটিশ বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকার কথা থাকলেও এর কোনোটিই দেখা যায়নি।

আবদুল আওয়াল নামে এক যাত্রী বলেন, রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক প্লেস। তাই স্টেশন ভবনের প্রবেশ ও বাহিরপথে ধূমপানের বিধিনিষেধ সম্পর্কিত সতর্কীকরণ বাণী থাকা জরুরি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্টেশনের এক কর্মচারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রেলওয়ে স্টেশনের ভেতরেই অন্তত দুই থেকে তিনটি দোকানে সিগারেট পাওয়া যায়। যার কারণে ধূমপায়ীরা এ দোকান থেকে সিগারেট নিয়ে ভেতরেই ধূমপান করেন। দেখা গেছে, রেলওয়ে স্টেশনের ভেতরে অন্তত দুই থেকে তিনটি কনফেকশনারি দোকানে সিগারেট বিক্রি করা হয়। অথচ দোকানগুলোতে ধূমপান সম্পর্কিত কোনো সতর্কীকরণ বাণী নেই।

রেলওয়ে স্টেশনের ভেতরে এভাবে দেদার ধূমপান করা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর উল্লেখ করে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, রেলওয়ে স্টেশনের অভ্যন্তরে নারী-শিশু থেকে শুরু করে নানান বয়সী মানুষের সমাগম সব সময় বিরাজমান। এমন গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক প্লেসে ধূমপান জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ফলে অনেকেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তাই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

রাজশাহী বার কাউন্সিলের সভাপতি অ্যাডভোকেট লোকমান আলী বলেন, ২০০৫ সালে (সংশোধন ২০১৩) ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) নামে একটি আইন পাস হয়েছে। আইনের ৪ এর (১) উপধারায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে যে, কোনো ব্যক্তি পাবলিক প্লেস বা পাবলিক পরিবহনে ধূমপান করতে পারবে না। কেউ করলে ৩০০ টাকা অর্থদন্ড করার বিধান রয়েছে।

স্টেশন ভবনের ভেতরে ধূমপানের আলাদা ব্যবস্থা করার বিষয়ে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার আমজাদ হোসেন বলেন, যারা ধূমপান করে তাদের আগে সচেতন হতে হবে। কেননা যারা পাবলিক প্লেসে ধূমপান করে তাদের বলতে গেলে উল্টো খারাপ কথা শুনিয়ে দেয়। স্টেশন ভবন ধূমপানমুক্ত করতে আমাদের পদক্ষেপ তো থাকবেই। পাশাপাশি এ ব্যাপারে প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) খোন্দকার শহিদুল ইসলাম বলেন, স্টেশন ভবনকে (স্টেশন লাউঞ্জ) আমরা ধূমপানমুক্ত ঘোষণা করতেই পারি। স্টেশনের ভেতরে বড় বড় অক্ষরে সতর্কীকরণ সাইনেজে লেখা থাকবে- ‘এটি একটি ধূমপানমুক্ত এলাকা, এখানে ধূমপান নিষিদ্ধ’। তারপরও স্টেশনের অভ্যন্তরে কাউকে ধূমপান করতে দেখলে ধূমপানকারীদের পাকড়াও করতে আমাদের নিরাপত্তাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close