আসাফুর রহমান কাজল, খুলনা (মহানগর)

  ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

খুলনায় মাসোহারা দিয়ে চলে অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসা

সড়কের বিভিন্ন স্পটে পুলিশ প্রশাসনকে নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে শহর থেকে উপজেলায় অবৈধভাবে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসা চলছে অহরহ। অ্যাম্বুলেন্সে রোগীর স্থায়ী শয্যা, অক্সিজেন সিলিন্ডার-মাস্ক, চিকিৎসক বসার ব্যবস্থা, স্ট্রেচার ও সাইরেন থাকার কথা থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছে না। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মাইক্রোবাসের পাশাপাশি পিকআপকে অ্যাম্বুলেন্স বানিয়ে ব্যক্তি মালিকানায় ব্যবহার করা হচ্ছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের সামনে অবস্থান করা এসব অ্যাম্বুলেন্স ঝুঁকি নিয়ে রোগীকে আনা নেওয়া করছে।

খুলনার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সূত্র মতে, খুলনা জেলায় সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন রেজিস্ট্রেশনকৃত অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা রয়েছে ৫৬টি। রেজিস্ট্রেশনকৃত অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে খুলনা সদর উপজেলায় রয়েছে ১১টি। এছাড়া বেসরকারিভাবে ব্যক্তিমালিকানাধীন অ্যাম্বুলেন্স সংখ্যা রয়েছে সাতটি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, খুলনা জেলায় বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স সংখ্যা রয়েছে প্রায় ১২০ থেকে ১৪০টি মতো। যার মধ্যে অধিকাংশ অ্যাম্বুলেন্সই রেজিস্ট্রেশনবিহীন, ফিটনেসবিহীন, লক্কর ঝক্কর অবস্থা। গত সপ্তাহে খুমেক হাসপাতাল থেকে লক্কর ঝক্কর একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে রোগী বহনের চিত্র চোখে পড়ে। দেখা যায়, ওই অ্যাম্বুলেন্সটির (খুলনা মেট্রো চ-১১-০০৮৮) সামনের দরজা খুলে পড়ায় চালক গামছা দিয়ে বেঁধে নিচ্ছেন, পেছন সাইডের বাম্পার ঝুলে রয়েছে। নেই এসি ও অক্সিজেন। স্পটে স্পটে ট্রাফিক বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে মাসিক মাসোহারা দিয়ে টোকেনের মাধ্যমে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা।

খুমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর আত্মীয় সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবসা দুর্বৃত্তদের হাতে বন্দি হয়ে গেছে। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া নির্ধারণ করে। অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে নেই কোনো অক্সিজেন, এসি এমনকি সিটও ভালো নেই। এ সব অ্যাম্বুলেন্সে রোগী নিয়ে যাওয়াটাই ঝুঁকিপূর্ণ।’

গত কয়েকদিনে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ১১-৩১৮৩, ১১-১২২৪, ১১-১৪৮৩, ১৪-০৪৫৮, ৫৪-০৭১৭, ৫৪-০১৯২, ১১-০৯৮৮, ৭১-০৫২৩, ১৩-১১৪৫, ১১-০০০২, ১১-০০৫৩, ১৪-০৬০০, ১৪-০২০৫, ১২-৯০৩৯, ১৪-৪৮১১, ০২-২৯৮০, ১১-২৭৬৮, ৫১-২১০৫, ১১-০২২১, ১১-০০৯২, ৫১-০৪৮৫, ৭১-০০৮৫, ১২-৪৯৭৫, ০২-০০১৫, ১২-৮৬৬০, ১১-৬৪২৩, ১১-০০৫০ এসব অ্যাম্বুলেন্স সিরিয়ালের রয়েছে ‘চ’, ‘গ’, ‘ব’ ও ‘ঠ’ দিয়ে নম্বর।

খুলনা বিআরটিএ মোটরযান পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘ঠ’ সিরিয়ালে পিকআপের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয় এবং ‘গ’ সিরিয়ালে প্রাইভেট কারের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়। অ্যাম্বুলেন্সে রেজিস্ট্রেশনকৃত গাড়িগুলোতে ‘ছ’ দিয়ে সিরিয়াল নম্বর হবে। যা বেআইনি। যেসব অ্যাম্বুলেন্স ‘ছ’ সিরিয়াল দিয়ে ‘৭১’ দিয়ে নম্বর শুরু হয়েছে শুধুমাত্র সেগুলোই অ্যাম্বুলেন্স নম্বর।

খুলনা বিআরটিএ এর সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.) মো. আবুল বাসার প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, বেসরকারিভাবে অ্যাম্বুলেন্স রেজিস্ট্রেশনের অনুমতি দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে রোগী বহনের অ্যাম্বুলেন্সের যাবতীয় যন্ত্রপাতি ও উপকরণ থাকতে হবে। এছাড়া কিছু শর্তও রয়েছে। সেগুলো পূরণ করলেই অ্যাম্বুলেন্স রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়। এছাড়া বাইরে থেকে অ্যাম্বুলেন্স আমদানি করলে সেগুলোকে রেজিস্টেশন দিয়ে থাকি।

খুলনার ১১ অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ীর (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) কাছ থেকে জানা গেছে, অবৈধ ওই অ্যাম্বুলেন্সগুলো শহর ও উপজেলায় চলাচল করার জন্য ট্রাফিক বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে মাসিক, সাপ্তাহিক চুক্তিতে অর্থ দিতে হয়। খুলনা মহাসড়কে, উপজেলা, বাগেরহাট, নওয়াপাড়া, নড়াইল, সাতক্ষীরা ও পিরোজপুরে সড়কের কয়েকটি স্পটে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট ও ট্রাফিক পরিদর্শকদেরকে (টিআই) মাসোহারা দিতে হয়।

কেএমপির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) কামরুল ইসলাম বলেন, ফিটনেস ও রেজিস্ট্রেশনবিহীন যেসব গাড়ি আছে বা যেগুলো রেজিস্ট্রেশন রয়েছে সেই তালিকা যদি বিআরটিএ থেকে আমাদের দেয় তাহলে অবৈধ অ্যাম্বুলেন্সগুলো শনাক্ত করতে সুবিধা হতো আমাদের। বিআরটিএ কর্মকর্তা অভিযানে নামলে আমরা সার্বিক সহযোগিতা করব। সড়কে ট্রাফিক বিভাগের কোনো কর্মকর্তা যদি অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে থাকে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close