মাসুদ রানা, বরিশাল

  ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

অবহেলায় ধুঁকছে বরিশালের দুটি ওয়াটার প্লান্ট

বরিশাল সিটি করপোরেশনের অবহেলায় অচল হয়ে আছে দুটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কাগজে-কলমে প্লান্ট বুঝে নিলেও বাস্তবে বুঝে নিতে অগ্রসর হতে চাচ্ছে না করপোরেশন। বারবার ঠিকাদারদের দিয়ে চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এদিকে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে রেখেছে রুপাতলী প্লান্ট। একই কারণে বেলতলা প্লান্টটি নামে মাত্র চালানো হয়।

সেখানে আবার নদীভাঙনে প্রি-সেডিমেন্টেশনের একপাশ বিলীন হওয়ায় ভাটা জোয়ারের ওপর নির্ভর করে মেশিন চালু হয়। ফলে নগরে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। এমনও দেখা গেছে, রুপাতলী এলাকার অধিকাংশ মানুষ পানি পাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, প্লান্ট ঠিকমতো সচল না রাখলে বরিশালবাসীর এ সম্পদ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যেহেতু দিন দিন পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় গরমকালে চাপাকলে ঠিকমতো পানি উঠে না সেহেতু ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট সচল রাখা জরুরি।

সিটি করপোরেশনের পানি বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, মেয়র পরিবর্তন হওয়ায় প্লান্ট দুটি বুঝে নিতে কালক্ষেপণ হচ্ছে। বিশুদ্ধ পানির চাহিদা মেটাতে কীর্তনখোলার তীরে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে জনস্বাস্থ্য অধিদফতর বরিশালের বেলতলায় ২০১২ সালে ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে এবং নগরের রুপাতলীতে ২০১৩ সালে ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি সারফেজ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের নির্মাণ কাজ শুরু করে। ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে রুপাতলী ও আগস্ট মাসে বরিশাল জনস্বাস্থ্য অধিদফতর সিটি করপোরেশনের কাছে কাগজে-কলমে হস্তান্তর করে এবং চুক্তি অনুযায়ী ফের প্লান্ট চালু করার পর নগরীতে সুপেয় পানি সংকট অনেকটা কমে আসে। এ প্লান্ট দুটি থেকে দৈনিক ১ কোটি ৬০ লাখ লিটার করে মোট ৩ কোটি ২০ লাখ লিটার বিশুদ্ধ পানি নগরবাসীর মাঝে সরবরাহের ক্ষমতা রয়েছে।

দুই মাস আগে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে রুপাতলী প্লান্ট বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সরেজমিন দেখা গেছে, ওই প্লান্টটি বন্ধ রাখায় রুপাতলী ২৩, ২৪ ও ২৫নং ওয়ার্ডের জনগণ পানি পাচ্ছে না। এদিকে সচল না থাকায় প্লান্টের যন্ত্রাংশ মরিচা ধরতে শুরু করেছে এবং রিজার্ভ ট্যাংকে শ্যাওলার স্তূপ পড়ে আছে। পাইপের জোড়াগুলোও নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে।

সেখানে কেয়ারটেকার হিসেবে দায়িত্বে থাকা বাদশাহ খান প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, ‘কিছুদিন আগে মেয়র এসেছিল; পরিদর্শন করে গেছেন। সে সময় ঠিকাদারকে আরো এক মাস প্লান্ট চালানোর নির্দেশ দিয়ে যান।

প্লান্ট নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আলী আকবর মিজান বলেন, প্লান্ট চালাতে বিদ্যুৎ বিল, জনবল ও পানি শোধনের জন্য ফিটকিরি ও ব্লিসিন পাউডার বাবদ প্রতি মাসে অনেক টাকা খরচ হয়। আমার চুক্তির মেয়াদ শেষ। আমার পক্ষে আর এত টাকা খরচ করে প্লান্ট চালু রাখা সম্ভব না। তার মতে সিটি করপোরেশন দ্রুত এ প্লান্ট চালুর ব্যাপারে আন্তরিক না হলে দিন দিন অকেজো হয়ে পড়বে মেশিন ও যন্ত্রাংশ।

অপরদিকে বেলতলা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট যৌথভাবে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান আর কে কনস্ট্রাকশন ও মেঘনা ট্রেডার্সের ম্যানেজার অনিল রায় জানান, চুক্তির মেয়াদ শেষ তারপরও সিটি করপোরেশনের মেয়রের অনুরোধে এখনো আমরা প্লান্ট চালু রেখেছি। প্রি-সেডিমেন্টেশন (রিজার্ভ পুকুর) নদীতে ভেঙে যাওয়ায় ভাটা জোয়ারের সময় প্লান্টের মেশিন চালু করা হয়। এভাবে একটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট চলতে পারে না। তার মতে, নগরবাসীর এ সম্পদ রক্ষায় সিটি করপোরেশনের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের পানি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ওমর ফারুক বলেন, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট থেকে পানি সাপ্লাইয়ের বিষয়ে বিভিন্ন সমস্যা ছিল। পাশাপাশি করপোরেশনের নতুন মেয়রকে নতুন প্লান্ট বুঝিয়ে দেওয়ার বিষয় আছে বলেই একটু দেরি হচ্ছে।

তবে ভিন্ন কথা জানিয়ে বরিশাল জনস্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মাইনুল হাসান বলেন, প্লান্টে সমস্যা ছিল না, আন্তরিকতার অভাবে সমস্যা দেখা দিয়েছে। নলকূপের পানির চেয়েও ওয়াটার ট্রিটমেন্টের পানি বিশুদ্ধ। এ পানিতে আর্সেনিক, সিসা, আয়রন, পিএইচের মাত্রা বাংলাদেশের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী আছে। তাই নগরবাসীর বিশুদ্ধ পানির চাহিদা মেটাতে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট সচল রাখা অতি জরুরি। তা না হলে অকেজো হয়ে পড়বে প্লান্টের মেশিনারিজ ও যন্ত্রাংশ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close