তুহিন আহমদ, মহানগর (সিলেট)

  ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

সিলেটে ট্রাফিক আইন মানছেন না চালকরা

সিলেটের সড়কে চালকদের মধ্যে নিয়ম ভাঙার প্রতিযোগিতা চলছেই। নিয়ম মানতে পুলিশের নেওয়া পদক্ষেপগুলোকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েই নিয়ম ভাঙছেন চালকরা। নানা উদ্যোগের পরও চালকদের মধ্যে সড়কে নিয়ম মানার প্রবণতা তৈরি হচ্ছে না। সবশেষে মামলা ও জরিমানার পথই বেছে নিতে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশের।

সিলেট মহানগর ট্রাফিক পুলিশের তথ্যমতে, সড়কে আইন না মানার কারণে গত ১৩ মাসে সিলেট মহানগর এলাকায় যানবাহনের ওপর মামলা হয়েছে ৩১ হাজার ৮৮০টি। আর সবমিলিয়ে জরিমানা আদায় করে রাজস্ব খাতে জমা দেওয়া হয়েছে ২ কোটি ৭৬ লাখ ২০ হাজার ৪০০ টাকা। এসবের মধ্যে গেল বছর ২০১৮ সালে মামলা হয়েছে ২৫ হাজার ৫৯০টি আর চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মামলা হয়েছে ৬ হাজার ২৯০টি। ২০১৮ সালে আদায় করা হয় ২ কোটি ৫১ লাখ ৮০ হাজার ৪০০ টাকার আর চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে আদায় করা হয়েছে ২৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। সিলেটের সড়কে চালকদের মধ্যে নিয়ম ভাঙার প্রতিযোগিতা বন্ধে ট্রাফিক সপ্তাহসহ বিভিন্ন ধরণের সচেতনামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। বর্তমানে চালক ও পথচারীদের সচেতন করতে নগরজুড়ে মাইকিং কার্যক্রম চালাচ্ছে ট্রাফিক বিভাগ।

ট্রাফিক পুলিশ বলছে, সিলেটে সব সড়কেই আইন ভঙ্গ করছেন চালকরা। এর পরিমাণ প্রায় ৯০ ভাগ। মাত্র ১০ ভাগ সড়কের আইন মেনে চলছেন। এই ১০ ভাগ চালকের মতো বাকিরা সচেতন হলে অচিরেই ঝুঁকি ও যানজটমুক্ত শহর গড়ে তোলা সম্ভব।

মহানগর ট্রাফিক বিভাগ জানায়, সড়কে যান চলাচলে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস, ট্যাক্স, রোড পারমিট, ইনস্যুরেন্স ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স এ ছয়টি বৈধ কাগজপত্র সঙ্গে রাখতে হয়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসব কাগজ থাকলেও সঙ্গে না নিয়েই গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামেন চালকরা। আবার অনেকেরই এসব বৈধ কাগজও থাকে না। এছাড়াও আরও বিভিন্ন কারণে জরিমানা ও মামলা দিয়ে থাকে ট্রাফিক পুলিশ। ট্রাফিক আইনে সর্বোচ্চ জরিমানা রয়েছে ৫ হাজার টাকা অথবা ২ বছরের কারাদন্ড। সর্বনিম্ন জরিমানা ২০০ টাকার বিধান রয়েছে।

সিলেট ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, নগরে প্রতিদিনই ট্রাফিক আইন না মানার কারণে মামলা ও জরিমানা করে করা হচ্ছে। এসব সত্ত্বেও চালকরা সচেতন হচ্ছেন না। এমনকি ভুল পার্কিং, চুরি হওয়া গাড়ি, বৈধ কাগজ না থাকার কারণে গড়ে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০টি যানবাহন রেকারিং করা হয়। এক্ষেত্রে জরিমানা আদায় ও বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারলে গাড়িটি হস্তান্তর করা হয়। আর চুরি হওয়ার গাড়ির ব্যাপারে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হয় না। রুটিন ওয়ার্ক ছাড়াও বাড়তি কোনো তথ্য থাকলে গাড়ির কাগজ যাচাই করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়।

মহানগর ট্রাফিক বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে মামলার সংখ্যা ছিলো ৩০ হাজার ৯৯৮টি, তার মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছিলে ২৬ হাজার ২৭৫টি। জরিমানা আদায় করা হয়েছিল ১ কোটি ২৪ লাখ ৭ হাজার ২৫০ টাকা। ২০১৮ সালের এপ্রিলে ৫ হাজার ৪০৮টি মামলা এবং ২০১৭ সালের অক্টোবরে ৫ হাজার ৩১৪টি মামলা হয় যা ওই দুই বছরের সর্বোচ্চ সংখ্যক মামলার সংখ্যা ছিল। এছাড়া অন্যান্য মাসে গড় মামলার সংখ্যা ছিল প্রায় ৪ হাজার ৮০০টি।

নগরের জিন্দাবাজারে আবুল কাশেম নামের এক পথচারী বলেন, এখানে প্রতিদিনই মানুষের ভিড় থাকে। প্রায়ই দেখা যায় সড়কের পাশে যানবাহন পার্কিং করে রেখে যান চালকরা। এখানে রিকশার জটলাটাই বেশি লক্ষ্য করা যায়।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (ট্রাফিক) নিকুলিন চাকমা বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে আমার কাজ করছি। ব্যবসায়ী, পরিবহন সমিতি, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সবার সচেতনতার জন্য প্রতিনিয়ত প্রচার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। বিশেষ করে সড়কে মাইকিং করছি।

তিনি বলেন, ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের কাজ করা হচ্ছে। আইন না মানার প্রবণতা আমাদের মধ্যে বেশি কাজ করে। আমাদের এ বিষয়ে আরো সচেতন হতে হবে। তবে সড়কে নিয়ম ভাঙার প্রতিযোগিতা অনেকটা কমে এসছে।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, সড়কে সবচেয়ে বেশি মোটরসাইকেল আরোহীরা আইন ভঙ্গ করেন। তারা একটু সুযোগ পেলেই ফুটপাত দিয়ে চলাচল শুরু করেন। অধিকাংশদের হেলমেট থাকে না। উল্টোপথে চলেন। আমরা এই বিষয়গুলো খুব গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছি। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আমরা শক্ত অবস্থানে রয়েছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close