রায়হান তন্ময়, জবি

  ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

জবিতে টিএসসির জায়গা দখল করে চাঁদাবাজি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) টিএসসির জায়গা দখল করে চাঁদাবাজি করছেন ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির নেতারা। তাদের অনুগত কর্মীরা এ চাঁদার টাকা তোলার কাজটি করেন। টিএসসির দোকানদারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তরিকুল ইসলামের একান্ত আস্থাভাজন কর্মী অ্যাকাউন্টিং বিভাগের মাসুম বিল্লাহ এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদন রাসেলের আস্থাভাজন কর্মী ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের আবদুল্লাহ আল মামুন চাঁদা তোলার কাজটি করে থাকেন। তবে যাদের বিরুদ্ধে এই চাঁদাবাজি ও টিএসসির জায়গা দখলের অভিযোগ তারা তা অস্বীকার করেছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের এই নেতারা তাদের কর্মীদের মাধ্যমে দীর্ঘদিন চাঁদাবাজি করে আসছে। টিএসসিতে বসানো হয়েছে চা দোকান, খিচুড়ি দোকান, সমুচা-শিঙাড়ার দোকান, শুকনো খাবারের দোকান। এসব দোকানের সংখ্যা কমপক্ষে ১০টি। তবে ক্যাম্পাস খোলা থাকলে মূল ফটকের পাশেই সকাল থেকেই বসে বেশ কয়েকটি ঝালমুড়ির দোকানসহ হালিমের দোকান। এছাড়া মূল ফটকের পাশেই বসানো হয়েছে মিরাজের একটি বার্গারের দোকান। জানা যায়, দোকানটি সভাপতি তরিকুল ইসলামের একান্ত কর্মী মিরাজের।

দোকানদারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চা-এর দোকান থেকে প্রতি মাসে ৩১ হাজার ৫০০, সমুচার দোকান থেকে মাসে ১৫ হাজার, খিচুড়ির দোকান থেকে ৩৬ হাজার টাকা চাঁদা তুলে। এ ছাড়া মূল ফটকের সামনের দোকান থেকেও নেওয়া হয় মাসে ২০ হাজার টাকা। সে হিসাবে প্রতি মাসে লক্ষাধিক টাকা চাঁদা তুলেন জবি ছাত্রলীগের নেতারা।

এদিকে এসব হোটেলে খাবারের দাম আশপাশের অন্যান্য হোটেলের চেয়ে বেশি। টিএসসির খাবারের দাম নিয়ে বাংলা বিভাগের চতুর্থ বর্র্ষের সাহেদ বলেন, অন্যান্য জায়গায় চা পাঁচ টাকা হলেও এখানে ছয় টাকা, কেক আট টাকা হলেও এখানে ১০ টাকা করে খেতে হয়। দাম বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলেন, আমাদের চাঁদা দিয়ে দোকান চালাতে হয়। তার ওপর ছাত্রলীগ নেতাদের আছে ফাও খাওয়া। একজন চা বিক্রেতা বলেন, আমরা যদি চাঁদা না দিতাম আর ফাও না খাওয়াতাম তবে অন্যান্য হোটেলের চেয়ে অনেক কম দামে খাওয়াতে পারতাম। জবি টিএসসি নিয়ে রসায়ন বিভাগের মাস্টার্স শিক্ষার্থী শামীম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কাছে এটা অবসর কাটানোর জায়গা ছিল। যদিও এখনো পূর্ণাঙ্গ টিএসসি হিসেবে জায়গাটি রূপ পায়নি। সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিজস্ব অর্থায়নে মুক্তমঞ্চ, বসার বেঞ্চ ও গাছ লাগিয়েছে। তবে দখলবাজদের কারণে আমরা এখান থেকে তেমন সুবিধা নিতে পারছি না।’ ২০১৪ সালের হল আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের বিপরীত পাশে জনসন রোডে ছয় কাঠা জমি দখল নিয়ে টিএসসি ঘোষণা দেন তারা। এরপরেই শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের টিএসটিতে ২০১৪ সালের ১৬ জুন রাতে প্রথমবারের মতো ব্যবসা খুলে বসেন জগন্নাথে তৎকালীন ছাত্রলীগ সভাপতি শরিফুল ইসলাম। শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মুখে আট দিনের মাথায় ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হন তিনি। কিন্তু ব্যবসা থেমে থাকেনি। তারপর থেকে বিভিন্নভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কতিপয় নেতা। টিএসসি নিয়ে জানতে চাইলে ছাত্র ইউনিয়ন জবি শাখার নেতা রুহুল আমীন বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে তাদের টিএসসির জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছি। এখানে আমরা গাছ লাগিয়েছি। তবে বিভিন্ন কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমার ব্যাপারে যে কথা বলা হচ্ছে তা রাজনৈতিক প্রতিহিংসাজনিত। তবে আমি রাসেল ভাইয়ের কর্মী। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জবি ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সভাপতি মো. তরিকুল ইসলাম জানান অভিযোগটির ব্যাপারে তিনি খোঁজ নেবেন। কেউ যদি জড়িত থাকে তবে আমরা ব্যবস্থা নিব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close