নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

ধুলায় অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী

ক্রমেই দুর্ভোগের নগরীতে পরিণত হচ্ছে রাজধানী। কোনো মৌসুমেই নগরবাসী স্বাচ্ছন্দ্যে রাস্তাঘাটে চলাচল করতে পারে না। বর্ষাকালে রাজধানীবাসীকে ভুগতে হয় জলাবদ্ধতায় আর শুষ্ক মৌসুমে পোহাতে হয় ধুলার দুর্ভোগ। উন্নয়নকাজের পাশাপাশি শুষ্ক মৌসুমে ঢাকা মহানগরীতে ধুলো দূষণের প্রকোপ অত্যন্ত বেড়ে যায়। বর্তমানে রাজধানীতে চলমান বিভিন্ন উন্নয়নমূলক নির্মাণকাজের কারণে ধুলার দুর্ভোগ অনেক বেশি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) বলছে, রাজধানীতে ড্রেনের ময়লা-আবর্জনা রাস্তার দুপাশে দীর্ঘদিন ফেলে রাখা হয়। এ ছাড়া রাজধানী জুড়ে চলছে উন্নয়নকাজ, ফলে যানবাহন চলাচলের সময় ধুলাবালি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় ধুলো দূষণের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। ধুলো দূষণে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, এলার্জি, চর্মরোগসহ নানা জটিল রোগব্যাধি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। ধুলো দূষণে জনদুর্ভোগের পাশাপাশি এক দিকে যেমন স্বাস্থ্যগত সমস্যা হচ্ছে, তেমনি আর্থিক ও পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব বিবেচনায় অবিলম্বে ধুলো দূষণ বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।

মিরপুর থেকে প্রতিদিন কারওয়ান বাজারে অফিস করেন বেসরকারি চাকরিজীবী সফিক আহমেদ। তিনি বলেন, ‘একদিকে অতিরিক্ত যানজট, নানা নাগরিক ভোগান্তি এর ওপর নতুন করে যুক্ত হয়েছে ধুলার দুর্ভোগ। মিরপুর থেকে শুরু করে পুরো রাজধানীতেই ধুলার বিড়ম্বনা। রাস্তায় হেঁটে যাওয়ার সময় নাকে মাস্ক পরতে হয়। আর বাতাসে ধুলা ছড়িয়ে পড়ায় জামাকাপড়, চুল, ত্বকে ধুলার প্রলেপ পড়ে যায়। এ ছাড়াও রয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টিও। এসব দুর্ভোগ থেকে নগরবাসী কি নিস্তার পাবে না? সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষর উচিত নাগরিকদের এমন দুর্ভোগ লাঘবে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।’

এদিকে উন্নয়নমূলক কাজের কারণে ঢাকা মহানগরীতে সৃষ্ট ধুলাবালি প্রতিরোধে সকাল-বিকেল রাস্তায় পানি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। গত ২৮ জানুয়ারি এ নির্দেশের পাশাপাশি ঢাকা শহরে যাদের কারণে বায়ুদূষণ হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সপ্তাহে দুবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে পরিবেশ অধিদফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আদালত বলেছেন, রাজধানীর যেসব জায়গায় উন্নয়ন ও সংস্কারকাজ চলছে, সেসব জায়গায় আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এমনভাবে ঘিরে ফেলতে হবে, যাতে শুকনো মৌসুমে ধুলা ছড়িয়ে বায়ুদূষণ বাড়তে না পারে। পাশাপাশি ‘ধুলাবালিপ্রবণ’এলাকাগুলোতে দিনে দুবার করে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

ধুলাবালির সমস্যা সমাধানে সড়কগুলোতে পানি ছিটানোর কাজ করছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। তবে পর্যাপ্ত জনবল ও গাড়ি না থাকায় সব এলাকাতেই পানি ছিটাতে পারছে না সংস্থা দুটি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা নিয়মিত সকাল-বিকেল সড়কে গাড়ি দিয়ে পানি ছিটানোর কাজ করছি। প্রতিদিন প্রাইমারি সড়কের ৫০ কিলোমিটার পানি ছিটানো হচ্ছে। আমাদের ১১টি গাড়ি দিয়ে প্রতিদিন সকাল-বিকেল পানি ছিটানো হয়। প্রতিটি গাড়িতে ১০ হাজার লিটার পানি থাকে। এ ছাড়া প্রতিদিন বইমেলাতে নিয়মিত পানি ছিটানো হচ্ছে। ’

পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, শুষ্ক মৌসুমে ঢাকা মহানগরীতে ধুলো দূষণের প্রকোপ অত্যন্ত বেড়ে যায়। এ মৌসুমেই হাজার হাজার ইটভাটায় ইট প্রস্তুত ও পোড়ানোর পাশাপাশি মহানগরীতে অপরিকল্পিতভাবে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, ড্রেনেজ ও রাস্তাঘাট উন্নয়ন, মেরামত ও সংস্কারকার্যক্রমের আওতায় রাস্তাঘাট খোঁড়াখুঁড়ি বেড়ে যায়। মেট্রোরেলসহ অন্যান্য মেগাপ্রকল্পের জন্য রাস্তা ও আশপাশের বিশাল এলাকা জুড়ে খোঁড়াখুঁড়ি, গ্যাস-পানি, বিদ্যুতের লাইন স্থাপনের সময় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, মাটি, বালু, ইটসহ নির্মাণসামগ্রী উন্মুক্তভাবে ট্রাকে করে শহরে পরিবহন করা, ড্রেন পরিষ্কার করে রাস্তার পাশে স্তূপ করে রাখা, দোকানপাট ও গৃহস্থালির আবর্জনা যেখানে-সেখানে ফেলে রাখা, মেরামতহীন ভাঙাচোরা রাস্তায় যানবাহন চলাচল, পাকা ভবন নির্মাণের সময় মাটি, বালু, ইটসহ অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী রাস্তা-ফুটপাতে ফেলে রাখা, পুরনো ভবন ভাঙা, মেশিনে ইটভাঙা, যানবাহনের কালো ধোঁয়া, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ধোঁয়া ইত্যাদি ধুলো দূষণের অন্যতম উৎস। এসব উৎস থেকে বিপুল পরিমাণ ধুলা বাতাসে মিশে জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, ধুলো দূষণের কারণে শিশুদের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেড়ে যায়। শিশুস্বাস্থ্য বিভাগে রোগীর প্রায় ৪০ শতাংশের বেশি শ্বাসকষ্টজনিত বিভিন্ন রোগে ভর্তি হয়। অন্যদিকে ঢাকা মহানগরীর প্রায় ৯০ শতাংশ জনগণ ভয়াবহ ধুলো দূষণের শিকার হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close