নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

হাজারীবাগের বিষাক্ত মাটি নিয়ে দুশ্চিন্তা!

ট্যানারি সরিয়ে নিলেও নতুন করে দুশ্চিন্তায় ফেলেছে হাজারীবাগ। পরিবেশবিদ ও নগর বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন এলাকাকে বিষাক্তমুক্ত করতে আগে ডাম্পিং স্টেশন চূড়ান্ত করতে হবে। ওই এলাকা এমনভাবে সংরক্ষণ করতে হবে যাতে পরিবেশ বা মানবদেহের কোনো ক্ষতি না হয়। কিন্তু ট্যানারির বর্জ্যে বিষাক্ত হওয়া মাটি সরিয়ে ফেলা নিয়ে দেখা দিয়েছে সমস্যা। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিষাক্ত এই মাটি মানুষের নাগালের বাইরে নেওয়া হবে। কিন্তু ৬৫ দশমিক ৫৯ একর আয়তনের হাজারীবাগ এলাকার মাটি অপসারণ বা স্থানান্তর করতে হলে সমপরিমাণ আয়তনের জায়গা প্রয়োজন। এ আয়তনের জায়গা রাজধানী বা আশপাশে কোথাও প্রস্তুত করা হয়নি। ফলে হাজারীবাগ প্রকল্প নিয়ে এরই মধ্যে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ট্যানারির বর্জ্য থেকে হাজারীবাগ এলাকার মাটিতে ক্রোমিয়াম, লেড ও আর্সেনিকের মতো ভারী ও বিষাক্ত ধাতু মিশে গেছে। দূষণের মাত্রা অবস্থান ভেদে মাটির গভীরে ৮ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত ছাড়িয়ে গেছে। এতে ভূগর্ভস্থ পানি বিষাক্ত হয়ে পড়ছে। বর্তমানে ওই এলাকায় গভীর নলকূপ ছাড়া বিশুদ্ধ পানির সন্ধান পাওয়া যায় না। ওই মাটিতে কোনো গাছও জন্মে না। বর্তমানে ওই এলাকায় যেসব গাছ আছে তা ক্রোমিয়াম ধাতুতে আক্রান্ত। পাশাপাশি পরিবেশের জন্যও এটা হুমকি হয়ে উঠেছে।

বিষাক্ত এই মাটি কোথায় স্থানান্তর করা হবে সে বিষয়ে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা তথ্য দিতে পারছেন না। প্রকল্প কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলছেন, নির্দিষ্ট কোনো একটি স্থানে স্থানান্তর করে আধুনিক প্রযুক্তি ও কেমিক্যাল দিয়ে ওই মাটিকে বিশুদ্ধ করা হবে। এজন্য দুটি পদ্ধতি অবলম্বন করা হবে। প্রথমত, দূষিত মাটিতে বটগাছসহ এমন গাছ লাগালো হবে যেসব গাছ ফল দেয় না। দ্বিতীয়ত, অ্যারোভিক রিঅ্যাকশনের মাধ্যমে মাটি শোধন করা যাবে। ফলে নির্দিষ্ট বছরের পর ওই মাটি বিশুদ্ধ হয়ে যাবে। রাজউকের পরিসংখ্যান বলছে, হাজারীবাগে কোনো ইটিপি বা সিইটিপি ছিল না। ফলে প্রতিদিন ৭৫ মেট্রিক টন কঠিন বর্জ্য ও ২১ হাজার ৬০০ ঘনমিটার তরল বর্জ্য পরিশোধন ছাড়াই সরাসরি ড্রেন দিয়ে মাটি, পানি ও নদীতে গিয়ে পড়ত। ফলে এলাকার মাটি, পানি ও বায়ু দূষিত হয়ে পড়ে।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্রোমিয়াম মাটি ও পরিবেশের জন্য ধীরগতির বিষ। যা কখনও ধ্বংস হয় না বরং ধীরে ধীরে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে এবং মাটির সঙ্গে মিশে থাকে। এতে ট্যানারি শ্রমিকের পাশাপাশি আশপাশের মানুষও জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এসব রাসায়নিক পদার্থের কারণে ফুসফুস, পাকস্থলি, শ্বাসনালির ক্যানসার হচ্ছে। এছাড়া মানুষের চিন্তাশক্তি কমে যায়।

২০১৩ সালে এই সংস্থার আরেক জরিপ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিশ্বের শীর্ষ ১০টি রাসায়নিক ঝুঁকিবহুল এলাকার মধ্যে হাজারীবাগ একটি। ট্যানারির বর্জ্যরে প্রভাবে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ সরাসরি স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, হাজারীবাগে ৮ হাজারের বেশি শ্রমিক পরিপাক, চর্ম ও অন্যান্য বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত। ট্যানারি শিল্পের সঙ্গে জড়িত ৯০ শতাংশ শ্রমিকই ৫০ বছর বয়সের আগেই মারা যায়।

হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সাভারে স্থানান্তর করা হলেও হাজারীবাগের মাটি ও পানিতে ক্রোমিয়াম থেকে গেছে। এ অবস্থায় জাপান ও সিঙ্গাপুরের আদলে হাজারীবাগ এলাকার ভূমির উন্নয়ন করতে চায় রাজউক। প্রকল্পের আওতায় হাজারীবাগের ৮ ফুট গভীর পর্যন্ত মাটি অপসারণ করে বিশুদ্ধ মাটি দিয়ে ভরাট করা হবে। যাতে দূষিত মাটি নতুন প্রকল্প এলাকা ও ভূগর্ভস্থ পানির ক্ষতি করতে না পারে। এজন্য এলাকার স্থানীয় জমি মালিকদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক ও আলাপ আলোচনা করা হয়েছে। জমি মালিকরা ইতিবাচক সাড়াও দিয়েছেন বলে জানিয়েছে রাজউক।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close