এসএইচএম তরিকুল, রাজশাহী

  ১৩ জানুয়ারি, ২০১৯

আমগাছে আগাম মুকুল লাভের স্বপ্ন মালিকের

এখন চলছে পৌষ মাস। শীতের ভরা মৌসুম। এরই মধ্যে আমের রাজধানী রাজশাহীতে শুধু আগাম মুকুলই নয়, দেখা মিলেছে গুটিরও (কোড়ালি)। রাজশাহী মহানগরীসহ আশপাশের উপজেলার কিছু স্থানে দেখে দিয়েছে আগাম মুকুল। ওইসব এলাকার বাতাসে বইছে মৌ মৌ গুঞ্জন ও সুবাস। অসময়ে এমন সুস্বাদু জাতের আমগাছে মুকুল দেখা দেওয়ায় পথচারীরাও থমকে দাঁড়িয়ে তা অবলকন করছেন। কেউ কেউ সেই আমের জাত নিয়ে কোনো ভিন্নতা আছে কি না তা জিজ্ঞাসা করছেন গাছের মালিককে। এসব গাছে মৌসুমের মতো তুলনামূলকভাবে কম মুকুল আসলেও খুশি আমগাছের মালিকরা। আগাম উৎপাদনে বেশি দামে আম বিক্রির আশায় স্বপ্ন দেখছেন তারা।

মহানগরীর লক্ষীপুর ভাটাপাড়া এলাকার আবদুল মজিদ মেমোরিয়ার কিন্ডার স্কুলের গাছে দেখা যায় বেশকিছু কোড়ালি। এ ছাড়াও একই দৃশ্য দেখা যায় মহানগরীর ভদ্রা আবাসিক এলাকা, গৌরহাঙ্গা, শিরোইল, ভেড়িপাড়া, পুলিশ লাইন, মালোপাড়া ও মেহেরচন্ডিতে। এ ছাড়াও পুঠিয়া উপজেলার শিলমাড়িয়া, তারাপুর, পবা উপজেলার মতিয়া বিল, দারুশা, গোদাগাড়ী উপজেলার গোগ্রাম, চারঘাট উপজেলার শলুয়াসহ অনেক স্থান থেকেও আমগাছে মুকুল দেখা গেছে এমন খবর নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধিরা। এসব গাছে মৌসুমের ন্যায় তুলনামূলকভাবে কম মুকুল আসলেও খুশি গাছিরা। আগাম উৎপাদনে বেশি দামে আম বিক্রির আশায় স্বপ্ন দেখছেন তারা। ফলে এসব গাছে পরিচর্যার মাত্রাও বাড়িয়ে দিয়েছে।

তবে আগাম মুকুল দেখে আম চাষিরা খুশি হলেও একাধিক কৃষি কর্মকর্তাদের মতে অসময়ের কোনো কিছুই সেভাবে ভালোর লক্ষণ হিসেবে দেখাটা তেমন যৌক্তিক নয়। কারণ, ঘন কুয়াশা এবং অতিরিক্ত মাত্রায় ঠান্ডা পড়লেই এসব গাছের মুকুল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এমনকি আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলে এসব মুকুল নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে সেসব গাছের মালিক বা ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে। তবে যেহেতু এবার এখন পর্যন্ত আবহাওয়া ফল উৎপাদনমুখী অনুকূলে রয়েছে, যে কারণে এখন পর্যন্ত আগাম মুকুল আসা সেসব আমগাছের মালিক বা ব্যবসায়ীদের ভয়ের কারণ নেই।

এ বিষয়ে রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আলীম উদ্দিন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রাজশাহীর প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মো. মঞ্জুরুল হক প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘গত দুই বছর থেকে রাজশাহী এলাকার কিছুসংখ্যক আম গাছে আগাম মুকুল দেখা দিচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। বর্তমানে যে আবহাওয়া বিরাজ করছে তা অব্যাহত থাকলে এসব গাছের আম তুলনামূলকভাবে চড়া দামেই বিক্রি হবে। তবে এসব গাছের ফলের সঙ্গে ভরা মৌসুসের চেয়ে খুব একটা বেশি পার্থক্য হবে না। কারণ, এগুলো আমের গ্রোথ কম হবে। শেষ পর্যন্ত আম পাড়ার উপযোগী হলে ফল মৌসুমের চেয়ে ১০-১৫ দিনের পার্থক্য থাকবে। আর কিছুদিন পর ফল মৌসুম শুরু হলে আগাম আসা সেসব গাছে আবারও মুকুল আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে অতিরিক্তি ঘন কুয়াশা ও ঠান্ডা পড়লে কৃষিবিদদের পরামর্শ অনুযায়ী ওইসব আমগাছে ছত্রাকনাশক ওষুধ স্প্রে করতে হবে। তাহলে ক্ষতির আশঙ্কা থাকবে না। আর স্বাভাবিকভাবে ফল মৌসুমে আম গাছে মাত্র দুই দফায় দুইবার পরিমিতভাবে ওষুধ স্প্রে করলেই যথেষ্ট। এ ক্ষেত্রে নিজ নিজ এলাকার কৃষিবিদদের পরামর্শ নিতে হবে। চলমান আবহওয়া অব্যাহত থাকলে এবার আমের ফলন বাড়বেÑ এমন প্রত্যাশা করছি।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close