হাসান ইমন

  ০৭ জানুয়ারি, ২০১৯

ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতে

ডিএসসিসির ৭৭৬ কোটি টাকার নতুন প্রকল্প

ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতের জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাভুক্ত এলাকার নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে সংস্থাটি। এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৭৬ কোটি টাকা। আগামী মাস থেকে ডিএসসিসির ৫৭টি ওয়ার্ডে এর কাজ শুরু হবে। তবে সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া কাজ করলে কোনো প্রকল্পই কাজে আসবে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, নতুন করে ৭৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প’ নামে আরো একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সংস্থাটি। তিন বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের কাজ আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে মাঠে গড়াবে। প্রকল্পের আওতায় ডিএসসিসি এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক নির্মাণ, নর্দমা, জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ নির্মাণ ও সংস্কার, ফুটপাত নির্মাণ ও প্রশস্ত করা হবে।

এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, এ রকমের বিচ্ছিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে কোনো সমস্যাই সমাধান সম্ভব নয়। এর আগেও এ রকম প্রকল্প তৈরি করে টাকা নষ্ট করা হয়েছে। কোনো কাজে আসেনি। কারণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, উন্মুক্ত পয়ঃনিষ্কাশনের কারণে ড্রেনগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ঢাকার সমস্যাগুলোর সঙ্গে কয়েকটি সেবা সংস্থা জড়িত। এদের মধ্যে সমন্বয় না হলে কোনো প্রকল্পই কাজে আসবে না বরং এসব প্রকল্পের কারণে নাগরিক দুর্ভোগ আরো বাড়বে। তাই এর সুফল পেতে সব সংস্থাগুলোর সমন্বয় করা ছাড়াও স্থানীয় কাউন্সিলর ও এলাকাবাসীর মতামত এবং অংশগ্রহণ প্রয়োজন।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান বলেন, বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় ডিএসসিসি এলাকার ৫৭টি ওয়ার্ডেরই কোনো না কোনো রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ভিত্তিতেই খরচের হিসাব করা হয়েছে। এসব সড়কের অনেক অংশের আস্তরণ উঠে গেছে। অনেক গভীর খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। আবার নর্দমার অংশও ভেঙে গেছে।

এই কর্মকর্তা আরো বলেন, এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ডিএসসিসির বাসিন্দারা স্বাচ্ছন্দে চলাফেরা করতে পারবে। ড্রেনগুলো প্রশস্ত করা হলে বর্ষার মৌসুমে জলাবদ্ধা কিছুটা হলেও নিরসন হবে।

তালিকা অনুযায়ী বিভিন্ন অঞ্চলের প্রতিটি ওয়ার্ডের কোনো না কোনো সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সে অনুযায়ী হিসাব দেখানো হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এগুলোর মধ্যে এমন অনেক সড়কও রয়েছে, যেগুলো গত এক থেকে দুই বছরের মধ্যে মেরামত করা হয়। কোনো কোনো সড়ক মেরামত করা হয়েছিল যেগুলোর ভেতরে খোয়া বা বালু দেওয়া (ম্যাকাডম) হয়নি। মেরামত হয়েছে শুধু ওপরে আলকাতরার আস্তরণ দিয়ে। আবার কিছু সড়ক ভালোভাবে নির্মাণ করা হলেও পরে আর সংরক্ষণ করা হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুষ্ঠুভাবে নির্মাণের পর শুধু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অনেক সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

দুই সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, রাজধানীতে ২ হাজার ২৮৯ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে ডিএসসিসির আওতায় প্রায় এক হাজার কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে ডিএসসিসির এলাকায় এবার ২০০ কিলোমিটারেরও বেশি সড়ক নষ্ট। সিটি করপোরেশনের সড়ক সংস্কারের চিত্র বলছে, প্রতি বছর সংস্কারযোগ্য সড়কের পরিমাণে তেমন হেরফের হচ্ছে না, বরং প্রতি বছরই বরাদ্দ বাড়ছে। গত বছর ডিএসসিসির ২৫০ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার করেছে। চলতি বছর ২০০ কিলোমিটার সংস্কারের জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া দক্ষিণ সিটির অবকাঠামো উন্নয়নে চলমান রয়েছে প্রায় সাড়ে ১২০০ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প। যা ২০১৮ সালের শেষের দিকে গিয়ে সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও চলছে ধীর গতিতে। মেয়র সাঈদ খোকনের নির্বাচনী ওয়াদা গ্রিন ও ক্লিন ঢাকার অংশ হিসেবে এ প্রকল্পের আওতায় রয়েছে আরো বেশকিছু ছোট ছোট প্রকল্প। তারই ধারাবাহিকতায় নির্মাণ ও আধুনিকীকরণ করা হচ্ছে ১৯টি পার্ক ও ১২টি খেলার মাঠ। এ ছাড়াও রয়েছে কমিউনিটি সেন্টার, পুলিশ বক্স, বাস-বে, আধুনিক জবাইখান, যাত্রী ছাউনি, পাবলিক টয়লেট নির্মাণ।

এ ছাড়া দক্ষিণ সিটিতে নতুন যুক্ত হওয়া ৮ ইউনিয়নের মধ্যে মাতুয়াইল, সারুলিয়া, ধনিয়া ও শ্যামপুর ইউনিয়নে ৭৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে রাস্তা, নর্দমা, ফুটপাত, এলইডি বাতি স্থাপনসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। অন্যদিকে ৪৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নাসিরাবাদ, দক্ষিণগাঁও, ডেমরা ও মান্ডা ইউনিয়নের অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলতি মাস থেকে শুরু হয়েছে। এসব এলাকার উন্নয়ন কাজের মধ্যে রয়েছে ৬৫ দশমিক ৭২ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ, ৭ দশমিক ৯৫ কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণ, ১৭টি আরসিসি ব্রিজ নির্মাণ, ৮৪ কিলোমিটার নর্দমা নির্মাণ, ১১৬ দশমিক ১৮ কিলোমিটার রাস্তায় এলইডি বাতি স্থাপনসহ ইউটিলিটি লাইন স্থানান্তর।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close