গ্লোবাল ইন্টারন্যাশনাল সিস্টেম (জিআইএস) কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে পরিকল্পনা-সংশ্লিষ্ট বহুবিধ সমস্যার সমাধান সম্ভব। এ ছাড়া ঢাকা শহরের ক্ষেত্রে সিসি টিভি ফুটেজের জিআইএস এনালাইসিসের মাধ্যমে অপরাধ দমনসহ নানাবিধ পরিকল্পনা সমস্যা চিহ্নিত করে তার সমাধান করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন পরিকল্পনাবিদ ড. এ কে এম আবুল কালাম।

গতকাল শনিবার রাজধানীর প্ল্যানার্স টাওয়ারে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) উদ্যোগে এবং ব্র্যাক-আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম, নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম, ইস্টার্ন হাউজিং এবং শেলটেকের সহায়তায় ‘বিশ্ব নগর পরিকল্পনা দিবস ২০১৮’ উদ্্যাপনের অংশ হিসেবে এবং বিশ্ব জিআইএস দিবস ২০১৮ উপলক্ষে নগর পরিকল্পনায় জিআইএসের প্রয়োগ শীর্ষক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আবুল কালাম আরো বলেন, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে জিআইএসের ব্যাপক প্রয়োগের সুযোগ রয়েছে এবং এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন বিআইপির সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান। পরে নগর পরিকল্পনায় জিআইএসের প্রয়োগ সম্পর্কিত পাঁচটি প্রতিবেদন উপস্থাপতি হয়। সেমিনারে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের জিআইএস এবং আরএস বিশেষজ্ঞ পরিকল্পনাবিদ মো. জাহিদ হাসান সিদ্দিকী। এ ছাড়া চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের প্রভাষক পরিকল্পনাবিদ কে এম আশরাফুল ইসলাম; পরিকল্পনাবিদ মো. মেহেদী হাসান খান; পরিকল্পনাবিদ মুনতাসির বিন হোসেন ও পরিকল্পনাবিদ আতিফ ইবনে জোহা সৃজন এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রায়হান কবীর পৃথক চারটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।

পরিকল্পনাবিদ মো. জাহিদ হাসান সিদ্দিকী তার ‘বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে জিআইএস এবং স্মার্ট শহর’ শীর্ষক উপস্থাপনায় বলেন, আধুনিক উদ্ভাবনা ও সৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দু শহরগুলো আজ অপরিকল্পিত নগরায়ণ জলাবায়ু পরিবর্তন, পরিবহন সমস্যার শিকার। এ সমস্যা মোকাবিলায় ‘স্মার্ট সিটি’ গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সমসাময়িক বিষয়গুলো বাংলাদেশর প্রেক্ষাপটে জিওস্প্যাশিয়াল প্রযুক্তির সর্বোত্তম প্রয়োগের মাধ্যমে নগর উন্নয়ন পরিকল্পনাকে স্মার্ট করার জন্য সমসাময়িক নগর সমস্যাগুলোর দিকে লক্ষ্য স্থির করতে হবে।

পরিকল্পনাবিদ মেহেদী হাসান খান তার ‘চট্টগ্রাম শহরের প্রেক্ষাপটে ভূমিধস সংবেদনশীলতা মডেলিংয়ের ঝুঁকি মূল্যায়ন’ শীর্ষক প্রবন্ধে বলেন, চট্টগ্রাম শহরের ভূমিধস সংবেদনশীলতা মডেলিং এবং এর ঝুঁকি মূল্যায়ন, চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধস একটি ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যার ফলে প্রতি বছর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনতে এলাকার ঝুঁকিপ্রবণ ওয়ার্ডগুলো জিআইএসের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়েছে। গবেষণা থেকে উঠে এসেছে ১৮ ভাগ এলাকা উচ্চঝুঁকিপ্রবণের মধ্যে রয়েছে।

রায়হান কবীর তার ‘খুলনা শহরের ওপর নগর তাপ দ্বীপের প্রভাব এবং ভূমি ব্যবহার ও ভূমি পরিবর্তনের মধ্যকার সম্পর্ক নির্ণয়’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলেন, খুলনা শহরের কাঠামোগত উন্নয়নে নিরাপদ প্রভাব পড়েছে বনায়নের ওপর। এর পরিপ্রেক্ষিত শহরের তাপমাত্রা অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে যাচ্ছে, যা দিন দিন আরবার হিট আইল্যান্ডে পরিণতি হচ্ছে।

পরিকল্পনাবিদ মুনতাসির বিন হোসেন ও পরিকল্পনাবিদ আতিফ ইবনে জোহা সৃজন ‘জিআইএস ব্যবহারের মাধ্যমে গণপরিবহনে প্রবেশগম্যতা পরিমাপ’ শীর্ষক প্রবন্ধে জিআইএস প্রয়োগের মাধ্যমে স্বল্প খরচে গণপরিবহন ব্যবহার করে কর্মস্থলে পৌঁছানোর উপযুক্ত রাস্তা নির্ধারণ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

পরিকল্পনাবিদ কে এম আশরাফুল ইসলাম তার ‘জিআইএসভিত্তিক কৌশলের মাধ্যমে চট্টগ্রাম শহরের উপকূলীয় তটরেখার স্থানান্তর পর্যালোচনা’ শীর্ষক প্রবন্ধে বলেন, বিগত ৪০ বছরে সময় ও অবস্থানের সাপেক্ষে চট্টগ্রাম শহরের উপকূলীয় তটরেখা পরিবর্তন হয়েছে। গবেষণায় জানা যায়, তটরেখা ক্রমান্বয়ে ভূমির দিকে সরে আসছে। এর পরিবর্তনের হার প্রতি বছরে উত্তর-দক্ষিণ মধ্যপার্শ্বে যথাক্রমে ২ দশমিক ৫৬ মিটার ৬ দশমিক ১ মিটার এবং ৪ দশমিক ৩৭ মিটার সর্বোপরি মোট ১২ দশমিক ৬৬ বর্গমিটার ভূমি হারিয়েছে গত ৪০ বছরে। গবেষণায় আরো দেখা গেছে, ভূমি হারাবে উপকূল এলাকায়, যা প্রায় ১১ দশমিক ৫৬ বর্গ কিলোমিটার।

সেমিনারে আরো বক্তব্য দেন বিআইপির সহসভাপতি পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন, যুগ্ম সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম, মামুন চৌধুরী, রবিউল আউয়াল, হামিদুল হাসানসহ ইনস্টিটিউটের অন্যান্য পরিকল্পনাবিদ সদস্য এবং দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল/গ্রামীণ পরিকল্পনা বিষয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

"