সিলেট প্রতিনিধি

  ০১ নভেম্বর, ২০১৮

সিলেট আধুনিক কারাগার

ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ৭ বছর পর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে নবনির্মিত সিলেট আধুনিক কেন্দ্রীয় কারাগার। আজ ২ হাজার বন্দি ধারণক্ষমতা ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত কারাগারটির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল ১০টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সিলেটের প্রশাসন ও বিশিষ্টজনরা উপস্থিতিত থাকবেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আবদুল জলিল জানান, এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। চলছে শেষ মুহূর্তের আলোকসজ্জার কাজ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন কারাগারের উদ্বোধন হলেও বন্দি স্থানান্তরের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তেমুখী-বাদাঘাট সড়ক। সড়কটির বেহাল দশার কারণে ডিসেম্বরের আগে বন্দি স্থানান্তরের কোনো সম্ভাবনা নেই। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) এক কর্মকর্তা জানান, নভেম্বরে (চলতি মাসে) সড়কটির সংস্কার কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।

কবে নাগাদ বন্দি স্থানান্তর করা হবে? এমন এক প্রশ্নের জবাবে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আবদুল জলিল বলেন, ডিসেম্বর নাগাদ কিছু বন্দিকে স্থানান্তর করা হবে। তবে নতুন কারাগারে আপাতত সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিদের স্থানান্তর করা হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন নতুন কারাগার নির্মিত হলেও ২০০ বছরের পুরনো কারাগারটিও ব্যবহার করা হবে।

তিনি জানান, কারাগারের বর্তমান ৪৫৫ জনবলের মধ্যে ৩৯৯ জন রয়েছেন। বাকি পদগুলো শূন্য। এই জনবল দ্বারা ৩ শিফটে দায়িত্ব পালন করেন কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। নতুন কারাগার চালু হওয়ার পর দুই কারাগারে এই জনবল দিয়ে দায়িত্ব পালন করাতে হবে। আর নতুনটি চালু হওয়ার পর লোকবল আরো বাড়ানোর চাহিদা দেওয়া হবে।

২০১০ সালে একনেকে পাস হয় সিলেটের নতুন কারাগার নির্মাণ ও স্থানান্তরের প্রকল্প। এরপর ২০১১ সালের ১১ আগস্ট অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন সিলেট শহরতলীর বাদাঘাটে কারাগারের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

প্রকল্প স্থলে সংরক্ষিত তথ্য ও কারাগার সূত্রে জানা গেছে, ৩০ একর জায়গার ওপর নির্মিত কারা কম্পাউন্ডজুড়ে ছড়িয়ে থাকবে ৬৪টি ভবন। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে নির্মিতব্য নতুন কেন্দ্রীয় কারাগারে জায়গা হবে ২ হাজার বন্দির। বন্দিদের রাখা হবে ৭টি ভবনে। এ ভবনগুলোর মধ্যে পুরুষ বন্দিদের জন্য ৪টি এবং নারী বন্দিদের জন্য রয়েছে ৩টি ভবন। পুরুষ বন্দিদের ৪টি ভবনই ৬ তলাবিশিষ্ট আর নারী বন্দিদের জন্য নির্ধারিত ভবনের মধ্যে একটি চারতলা এবং দুটি দ্বিতল ভবন রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে ৫টি হাসপাতাল, এর মধ্যে ৪টি শুধুমাত্র বন্দিদের জন্য, অন্যটি কারাগার সংশ্লিষ্টদের। বন্দিদের জন্য নির্ধারিত হাসপাতালের মধ্যে পুরুষ ও নারীদের জন্য ১টি করে ৫ তলাবিশিষ্ট হাসপাতাল, একটি করে দোতলা যক্ষ্মা ও মানসিক হাসপাতাল। রান্নার কাজের জন্য রয়েছে একতলা ৫টি ভবন। খাবার মজুত রাখার জন্য রয়েছে একতলা ৪টি ভবন, দোতলা একটি রেস্ট হাউসও আছে। চারতলাবিশিষ্ট একটি ডে কেয়ার সেন্টার রয়েছে, মসজিদ, স্কুল, আছে লাইব্রেরিও। সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের ৩০ একর জায়গার মধ্যে মূল কারাগারের ভেতরে রয়েছে ১৪ একর ও বাইরে রয়েছে ১৬ একর জায়গা। কারাগারের বাইরের জায়গায় থাকছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন, ক্যান্টিন, বন্দিদের সঙ্গে সাক্ষাৎকার রুম, অ্যাডমিন অফিস, কেন্দ্রীয় মসজিদ ও স্কুল।

প্রসঙ্গত, পুরনো ও জরাজীর্ণ হয়ে পড়া সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি কয়েদি থাকার কারণে ২০১০ সালে একনেকে ১৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার নির্মাণ ও স্থানান্তর প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছিল। যার নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৫ সালের জুন মাসে। এরপর তিন দফা মেয়াদ বাড়িয়েও চলতি মাস পর্যন্ত ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকিটা শেষ হতে এখনো মাসখানেক লেগে যেতে পারে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close