নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৯ অক্টোবর, ২০১৮

তিতাসে চলছে শুদ্ধি অভিযান

শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তিতাসে। আগে কোম্পানির কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তা আমলে নেওয়া হতো না। ফলে আস্কারা পেত দুর্নীতিবাজরা, থাকত ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। কিন্তু গত দুই দিনে এই চিত্র বদলে গেছে। গত বুধবার সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে ৫ কর্মকর্তাকে। গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের অর্থ অব্যবস্থাপনার কারণে তিনজন এবং বেনামে সিএসজি স্টেশন নির্মাণ করে মিটার টেম্পারিংয়ের মাধ্যমে গ্যাস চুরির অভিযোগে দুজনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আরো দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পরিচালনা পর্ষদে প্রস্তাব পাঠানো হবে। পরদিন বৃহস্পতিবার সাত কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে কোম্পানি। এছাড়া ২৪ কর্মকর্তাকে এক যোগে বদলি করা হয়েছে।

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ডিএমডি আবদুল ওয়াহাব এবং সাবেক পরিচালক (অর্থ) ও বর্তমানে বাপেক্সে কর্মরত জিএম শংকর কুমার দাসের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এ মামলা হয়েছে বলে তিতাস সূত্রে জানা গেছে।

তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ও পেট্রোবাংলার পরিচালক (প্রশাসন) মোস্তফা কামাল বলেন, তদন্তে দুর্নীতির প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় কয়েক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দিয়েছে পেট্রোবাংলা। কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বোর্ডের (পরিচালনা পর্ষদ) অনুমোদন প্রয়োজন। বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুসারে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।

এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফা কামাল বলেন, ‘এই অভিযানে সবার সহযোগিতা পাচ্ছি। চেষ্টা করছি। যদি এখানে কেউ খারাপ কিছু করে, তাহলে আমরা দেখে-শুনে ব্যবস্থা নিচ্ছি। কোনও মানুষকে শোকজ না করে তো কারও বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। সংবিধান অনুযায়ী মানুষের নিজের অবস্থার ব্যাখ্যা করার অধিকার মানুষের রয়েছে। আমরা চাকরিবিধি অনুযায়ী কাজ করছি। পরিবর্তন কিছু দরকার আছে।’

তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘আমরা সবমিলিয়ে সাতজনকে শোকজ করেছি। এরমধ্যে বরখাস্ত করা ৫ ছাড়াও দুই জন জিএম আছেন। জিএম দুই জনকে বরখাস্ত করতে গেলে বোর্ডের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। তাই, তাদের শুধু শোকজ করা হয়েছে। এরপর কোনও ব্যবস্থা নিতে গেলে বোর্ডের অনুমতি লাগবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পেট্রোবাংলা একটি তদন্ত কমিটি করেছিল। সেই কমিটির তদন্তের আলোকেই ব্যবস্থা নিতে তিতাসকে নির্দেশ দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সাময়িক বরাখাস্তসহ বিভাগীয় মামলা দায়ের করতে বলা হয়েছে। করপোরেশন যদি কোম্পানিকে কোনও নির্দেশ দেয়, তাহলে সেটি পালনীয় বিষয়। তাই আমরা করপোরেশনের নির্দেশ ও তিতাসের চাকরি বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

তিতাস সূত্র বলছে, আর্থিক অব্যবস্থাপনা ও বেনামে সিএনজি স্টেশন নির্মাণ করে মিটার টেম্পারিংয়ের মাধ্যমে গ্যাস চুরির অভিযোগ ছিল তিতাসের তাস কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। আর ছয় থেকে সাত বছর একই জায়গায় চাকরি করে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিল তিতাসের কিছু কর্মকর্তা।

সাত কর্মকর্তাকেই কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তিতাসের তদন্তে দুর্নীতির প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দিয়েছে পেট্রোবাংলা। এরমধ্যে ৫ অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার আরও দুই জনকে শোকজ করা হয়। সাময়িকভাবে বরখাস্ত হওয়া পাঁচ কর্মকর্তা হলেন-উপ-মহাব্যবস্থাপক (হিসাব) মো. আব্দুর রশিদ, ব্যবস্থাপক (হিসাব) মো. হুমায়ুন কবির খান, উপ-ব্যবস্থাপক (বেতন ও তহবিল বিভাগ) নাজমুল হক, মিটারিং ও ভিজিল্যান্স টিমের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. মহিদুর রহমান ও পাইপলাইন নির্মাণ বিভাগের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. গোলাম মোস্তফা খান।

তিতাসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘শোকজ করা নতুন দুই জনের মধ্যে একজন বর্তমানে তিতাসের ডিএমডি (গাজীপুর) হিসেবে কর্মরত আবদুল ওয়াহাব এবং অন্যজন তিতাসের সাবেক পরিচালক (অর্থ) ও বর্তমানে বাপেক্সে কর্মরত জিএম শংকর কুমার দাস।’

তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানি সূত্র জানায়, প্রতিমাসে গ্রাহক যে বিল দিয়ে তার একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্যাস উন্নয়ন তহবিল ও জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিলে জমা রাখতে হয়। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ও জ্বালানি বিভাগের নির্দেশনা রয়েছে, সরকারি কোনও ব্যংকে এই অর্থ রাখতে হবে। কিন্তু তিতাসের হিসাব বিভাগের পাঁচ কর্মকর্তা সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা একটি বেসরকারি ব্যাংকের কাওরান বাজার শাখায় রেখেছিলেন। তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর মশিউর রহমান অবসরে যাওয়ার পর সম্প্রতি পেট্রোবাংলার পরিচালক (প্রশাসন) মোস্তফা কামালকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি দায়িত্ব নিয়েই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেন।

১১ জনকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে। এর মধ্যে আছেন মিটারিং ও ভিজিল্যান্স শাখার ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. আনোয়ার পারভেজ, সোনারগাও আঞ্চলিক বিক্রয় অফিসের উপব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. মশিউর রহমান, একই অফিসের উপ ব্যবস্থাপক মো. আবু রায়হান, মেট্রো ঢাকা বিপণন বিভাগ-৪ এর উপ ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী বরুন কুমার রায়, আঞ্চলিক বিক্রয় অফিস নরসিংদীর উপ-ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী তাইফুর রহমান, আঞ্চলিক বিক্রয় বিভাগ সাভারের উপব্যবস্থাপক প্রকৌশলী সুমন দাশ, আঞ্চলিক বিক্রয় বিভাগ-সোনারগাঁও-এর উপ-ব্যবস্থাপক আবুল কালাম ভুইয়া, মিটার ও ভিজিল্যান্স শাখার উপ-ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম হাওলাদার, আঞ্চলিক বিক্রয় বিভাগ-সোনারগাঁও-এর সহকারী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান আজাদ, একই অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মোশাররফ হুসাইন, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. কাউছার আলম পলাশ

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close