পাঠান সোহাগ

  ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

বাড়ছে রোগীর চাপ, রয়েছে চিকিৎসক ও জনবল সংকট

প্রায় ছয় বছর হলো শুরু হয়েছে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের যাত্রা। ২০১২ সালের ১৩ মে যখন হাসপাতালটির যাত্রা শুরু হয়, তখন মানুষ জানত না। তাই প্রথম দিকে রোগীর চাপ ছিল কম। দিনে দিনে রোগীর চাপ বাড়ছে। বর্তমানে বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৪৫০০ রোগী চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। আর আন্তঃবিভাগে ৫০০ শয্যার হাসপাতালে ৭০০ রোগী ভর্তি থাকে। প্রতিদিন বিভিন্ন বিভাগের ৪টি ওটিতে ৪৮টি অস্ত্রোপচার হচ্ছে। এ ছাড়া গাইনি বিভাগের অস্ত্রোপচার ২৪ ঘণ্টায় চলছে। এভাবে রোগীর চাপ বাড়তে থাকায় এখন চিকিৎসক ও জনবল সংকটে পড়েছে হাসপাতালটি।

ঢাকা সেনানিবাসের আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজের পাশে এবং হোটেল র‌্যাডিসন ব্লু এর বিপরিতে ১২ তলার দুটি ভবন নিয়েই ৫০০ শয্যার এই হাসপাতাল। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, জনবল সংকটে সেখানে আটটি অপারেশন থিয়েটারের (ওটি) মধ্যে চালু আছে চারটি। আইসিইউ এবং সিসিইউ ব্যবস্থাও রয়েছে। বেইজমেন্টে দ্বিতীয় তলার রয়েছে প্যাথলজি ও এক্স-রেসহ বিভিন্ন টেস্টের ব্যবস্থা। লিফট রয়েছে ৭টি। ৮৪টি কেবিন (ভিআইপিসহ) আছে। রোগী বহনের জন্য ২টি এম্বুলেন্স রয়েছে।

অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তি ও চিকিৎসা সরঞ্জামে সুসজ্জিত এই হাসপাতালে কম খরচেই চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায়। তবে ভালো সেবার জন্য যে সংখ্যক চিকিৎসক, টেকনিশিয়ান ও অন্যান্য জনবল থাকা প্রয়োজন, তা না থাকায় ধুঁকছে হাসপাতালটি। মাত্র ৪০ শতাংশ জনবল দিয়ে এখানে সেবা কার্যক্রম চলছে। জনবল সংকটে এখনো অনেক বিভাগ চালু করা যায়নি।

এদিকে, জনবলের ঘাটতি নিয়েই জরুরি বিভাগসহ মেডিসিন, অর্থোপেডিক্স, গাইনি অ্যান্ড অবস, চর্ম ও যৌন, নাক-কান-গলা, চক্ষু এবং ডেন্টাল বিভাগ চলছে। পাশাপাশি বার্ন ইউনিট, সোয়াইন ফ্লু ও ইবোলা ইউনিটও খোলা হয়েছে। এ ছাড়া কম জনবল নিয়েই চলছে নিউরো সার্জারি, কার্ডিয়াক সার্জারি, ইউরোলজি, নিউরোলজি, নেফ্রোলজি, মনোরোগ, ফিজিক্যাল মেডিসিন, এনআইসিইউ, ডায়ালাইসিস এবং ব্লাড ব্যাংক। একই অবস্থা টিবি ডটস কর্নার, টিকাদান কেন্দ্র ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগেও।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিটি স্ক্যান, আলট্রাসনোগ্রাম, এন্ডোসকপি, এমআরআই, এক্স-রে, রক্তের বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা করার সুবিধা রয়েছে হাসপাতালটিতে। ওই হাসপাতাল ভবনের নিচতলার বেইজমেন্টে রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগে উন্নত মেশিন দ্বারা পরীক্ষা নিরীক্ষার সুবিধা আছে। তবে এইসব পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ হাসপাতালের প্রশাসনেও পর্যাপ্ত জনবল নেই।

একেক জন কর্মী তিন থেকে চারটি দায়িত্ব পালন করছেন বলে অভিযোগও করেছেন কেউ কেউ। অভিযোগকারিরা বলেন, কর্তৃপক্ষ চাপে ফেলে আমাদের দিয়ে কাজ করিয়ে নিচ্ছে। নতুন জনবল নিয়োগ দিচ্ছে না।

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক লে. কর্নেল মো. ছগির মিয়া বলেন, কাগজে পত্রে হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠার পর মঞ্জুরিকৃত পদের সংখ্যা ছিল ৬২২টি। পূরণকৃত পদের সংখ্যা (আউটসোর্সিংসহ) ৫৫৪টি। শূন্য পদ আছে ৬৮টি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ৩৯৬ জনবল দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

মো. ছগির মিয়া জানাচ্ছেন, ‘কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের অধীনে থেকেই পরিচালিত হচ্ছে কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল। সেখানেও অনেক জনবল স্থানান্তর হয়েছে। এতে আরো ঘাটতিতে পড়েছে হাসপাতালটি।’

‘এই হাসপাতালে রোগী সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় শয্যা সংখ্যা আরো এক হাজার বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৩৪৪টি পদে জনবল নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে। এর সকল প্রক্রিয়া শেষ। এখন শুধু অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায়।’

সরেজমিনে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সপ্তমতলা পর্যন্ত চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম। অষ্টম, নবম ও দশম তলা আংশিক ব্যবহার করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে রোগী আসে এখানে। বহির্বিভাগে দেখা গেছে দীর্ঘ লাইন। আন্তঃবিভাগে শয্যা না পেয়ে মেঝেতে অবস্থান করছেন বহু রোগী। মেডিসিন বিভাগের ভর্তি হওয়া রোগী স্বজন সামসুল আলম জানান, ‘শয্যা বাড়ানোর সুযোগ সত্ত্বেও মেঝেতে অবস্থান করছেন রোগীরা।’ লিফটে এক সঙ্গে ১০-১২ জনের বেশি উঠতে পারে না। ধারণ ক্ষমতা কম। এমন অভিযোগ অনেকের।

হাসপাতালটির নিচতলায় ওষুধ বিতরণের কাউন্টারে দেখা গেছে দীর্ঘ লাইন। লাইনে দাঁড়ানো শাহরিয়ার বলেন, ‘বিনামূল্যে দেওয়া ওষুধ পেতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তিন দিনের বেশি ওষুধ দেওয়া হয় না। এ ছাড়া এখানে পর্যাপ্ত ফ্রি ওষুধও নেই।’

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বলেন, মন্ত্রণালয়ের একটি দল পরিদর্শনে আসার কথা। এই দলটি পরির্শন করে গেলে নতুন বিভাগ, জনবলসহ সকল পরিল্পনা বাস্তবায়ন করা যাবে। জনবল ও বাজেট সংকটের কারণে হাসপাতালটি পূর্র্ণাঙ্গরূপে চালু হচ্ছে না। এই হাসপাতালটি মেডিকেল কলেজ অধিভুক্ত না থাকায় অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকের কোনো পদ নেই। এখানে জুনিয়র কনসালটেন্ট সর্বোচ্চ পদ।

তিনি আরো বলেন, এ হাসপাতালে ৩৩টি কিডনি ডায়ালাইসিস মেশিন আছে। প্রতিটি মেশিন দিয়ে প্রতিদিন দুজন করে মোট ৬৬জন রোগীর কিডনি ডায়ালাইসিস করানো যায়। এখানে পর্যাপ্ত এনেসথেসিওলজিস্ট নেই। স্থানীয়ভাবে ট্রেনিং দিয়ে এনেসথেসিওলজিস্ট কাজ করানো হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close