নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৭ আগস্ট, ২০১৮

সময়মতো কাজ করায় বর্জ্যরে স্তূপ জমেনি ল্যান্ডফিলে

সময়মতো কাজ করায় বর্জ্যরে স্তূপ জমেনি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার বর্জ্য অপসারণের নির্ধারিত স্থান মাতুয়াইল ও আমিনবাজার ল্যান্ডফিলে। নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে বর্জ্যবাহী গাড়ি ল্যান্ডফিলে নিয়ে আবর্জনা ফেলে। এরপর যন্ত্রপাতি দিয়ে তা ল-ভ- করে দেওয়া হয়। দুই সিটির কর্মকর্তারা বলছেন, পূর্ব পরিকল্পনা ও কর্মীদের নিরলস প্রচেষ্টায় ল্যান্ডফিলে বর্জ্যরে স্তূপ জমতে দেওয়া হয়নি। ঈদের চতুর্থ দিন এ দুটি ল্যান্ডফিল সরেজমিন ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

প্রতিবছরের কোরবানি ঈদের বর্জ্যরে হিসাব অনুযায়ী এবার ঈদে মহানগর এলাকায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য হতে পারে বলে ধারণা করেছিল দুই সিটি করপোরেশন। তবে ঈদের পর ৩৬ ঘণ্টায় ৩৩ হাজার ৪৮৩ মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণ করেছে দুই সংস্থা।

মাতুয়াইল ল্যান্ডফিলে গিয়ে দেখা গেছে, ঈদে পশুর বর্জ্য অপসারণের জন্য ল্যান্ডফিলের চারপাশে ৩টি স্পট প্রস্তুত রাখা হয়। এছাড়া প্রয়োজন অনুযায়ী আরও তিনটি স্থান প্রস্তুত রাখা হয়। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে নিয়োজিত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। প্ল্যাটফর্মগুলো আগে থেকে রেডি থাকায় স্কেভেটর ও বুলডোজার দিয়ে বর্জ্য ল-ভ- করে দূরে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কোনও প্ল্যাটফর্মেই বর্জ্যবাহী গাড়ির দীর্ঘ লাইন বা বর্জ্যরে স্তূপ পড়ে থাকতে দেখা যায়নি। ময়লার ট্রাকগুলো ঢেকে ডাম্পিংয়ের নির্দেশনা থাকলেও তা দেখা যায়নি।

এ বিষয়ে ডিএসসিসি’র নির্বাহী প্রকৌশলী আ হ ম আব্দুল্লাহ হারুন বলেন, ‘ঈদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আমরা ল্যান্ডফিলে ৬টি প্ল্যাটফর্ম প্রস্তুত রেখেছি। এরমধ্যে মাত্র তিনটি ব্যবহার হয়েছে। বাকি তিনটি অতিরিক্তি হিসেবে তৈরি ছিল। প্রয়োজন হলে সেগুলোও ব্যবহার করা হতো।’

তিনি বলেন, ‘যেহেতু এখন বৃষ্টির দিন। সে বিষয়টি মাথায় রেখেই ৬টি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে রাখা হয়। ব্যাপক বৃষ্টি থাকলেও আমাদের বর্জ্য অপসারণে কোনও সমস্যা হতো না। কারণ, বৃষ্টির সময় ল্যান্ডফিলের ময়লার মধ্যে পানি থাকার কারণে স্কেভেটর দিয়ে কাজ করা একটু ঝুঁকিপূর্ণ হয়। সেজন্য বর্জ্য এনে ল্যান্ডফিলে রাখার মতো আমরা যথেষ্ট প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে রাখি।’

ডিএসসিসি সূত্র জানিয়েছে, ঈদের দিন থেকে ২৫ আগস্ট সকাল ৭টা পর্যন্ত ৫ হাজার ১৯০টি ট্রিপের মাধ্যমে ১৯ হাজার ৮৯ মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। এছাড়া ঈদের আগের তিন দিন কোরবানি পশুর হাটের বর্জ্য অপসারণ শুরু করা হয়। হাটের বর্জ্যসহ ডিএসসিসি গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৬ হাজার ২২০টি ট্রিপের মাধ্যমে মোট ২৩ হাজার ৪৯ মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণ করেছে।

ডিএনসিসি’র ল্যান্ডফিল সূত্র জানিয়েছে, সংস্থাটি ঈদের দিন থেকে গত শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ২ হাজার ৪২৭টি ট্রিপের মাধ্যমে ১০ হাজার ৪৩৪ মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণ করেছে। ঈদের দ্বিতীয় দিন (২৩ আগস্ট) প্যানেল মেয়র জামাল মোস্তফা সংবাদ সম্মেলন করে ডিএনসিসিকে শতভাগ বর্জ্যমুক্ত ঘোষণা করার পরেও ৩৮৯টি ট্রিপে এক হাজার ৯৩৪ মেট্রিক টন বর্জ্য ডিএনসিসির ল্যান্ডফিলে এসেছে। বেলা দেড়টার পরেও একের পর এক বর্জ্যবাহী ট্রাক লান্ডফিলে যেতে দেখা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে, ডিএনসিসি’র অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আবুল হাসনাত আশরাফুল আলম বলেন, ‘ঈদের বর্জ্য অপসারণের জন্য আমাদের যথেষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ছিল। নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে বর্জ্যবাহী গাড়ি আসার পর সঙ্গে সঙ্গে তা ড্রেসিং কমপ্রেশন করা হয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিরলসভাবে কাজ করেছেন।’

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ল্যান্ডফিলটি উত্তর সিটি করপোরেশনের তুলায় দ্বিগুণ বড়। এটি ১৯৯০ সালে ৫০ একর জমির ওপর নির্মাণ করা হয়। পরে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে আরও ৫০ একর জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে সম্প্রসারণ করা হয়। অপরদিকে, উত্তর সিটির ল্যান্ডফিলটি ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ৫০ একর জমির ওপর নতুন করে নির্মাণ করা হয়। ২০০৭ সাল থেকে এতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শুরু হয়।

জাপানি বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতায় নির্মিত এই প্ল্যান্টের মেয়াদকাল নির্ধারণ করা হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু এখনও এতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চলছে। দেশে প্রথম নির্মিত রাজধানীর মাতুয়াইল ল্যান্ডফিলের পরে এটি নির্মিত হয় অত্যাধুনিক উপায়ে। দক্ষিণের মাতুয়াইল ল্যান্ডফিলের তুলনায় উত্তরের আমিনবাজার ল্যান্ডফিলের আয়তন অর্ধেক হলেও সেখানে এখনও অনেক জায়গা ফাঁকা রয়েছে। অত্যাধুনিক উপায়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ৭৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে গ্রহণ করা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close