হাসান ইমন

  ২৫ আগস্ট, ২০১৮

হাতিরঝিলের পানিতে দুর্গন্ধ ভ্রমণপিপাসুদের অস্বস্তি

রাজধানীর সড়কে তীব্র যানজট আর গায়ে গায়ে লাগানো সুউচ্চ ভবন, ফুটপাত দখল হওয়া অলিগলির কোথাও এতটুকু ফাঁকা জায়গার খোঁজ পাওয়া দুষ্কর। একটু খোলা বাতাসে আড্ডা দেওয়া বা ঘুরে বেড়ানোর জায়গা এই নগরীতে খুবই অপ্রতুল। এর মধ্যে হাতিরঝিলের নান্দনিক সৌন্দর্য দশর্নাথীদের মুগ্ধ করে। ছুটির দিন বা অবসর পেলেই বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে ঝিলের পাড়ে বেড়াতে চলে আসেন অনেকেই। আর ঈদে হাতির ঝিলে ভিড় আরো বেড়ে যায়।

ইটপাথরের নগর জীবনের ব্যস্তা ভুলে একটু প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে হাতিরঝিলে ঘুরতে আসেন অনেকেই। কেউ আসেন পানির সঙ্গে মিশ্রিত ঠান্ডা বাতাস উপভোগ করতে। আবার কেউ আসেন বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে। কিন্তু এখন ঘুরতে আসা ভ্রমণপিপাসু মানুষ পড়তে হচ্ছে বিপদে। পানির দুর্গন্ধের কারণে হাতিরঝিলের পাড়ে বসা দূরে থাক, হেঁটে চলাও দায়।

এছাড়া এই দুর্গন্ধের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে হাতিরঝিলের আশপাশের বাসিন্দাদের। আর প্রথমবার ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা পড়ছেন বিব্রতকর অবস্থায়। এই দুর্গন্ধে স্থানীয় বাসিন্দাসহ ভ্রমণপিপাসুদেরর স্বাস্থ্যহানির কারণ হতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।

হাতিরঝিল প্রকল্পটি ২০১৩ সালের ২ জানুয়ারিতে উদ্বোধন হয়। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অধীনে ২০০৭ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজটি করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্ক অর্গানাইজেশন। প্রায় ৩০২ একর জমির ওপর ৯৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হাতিরঝিল প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য বৃষ্টির পানি ও পয়োনিষ্কাশনের মাধ্যমে রাজধানীর একটি বড় অংশের জলাবদ্ধতা দূর করা এবং নগরের নান্দনিক সৌন্দর্য় বৃদ্ধি করা। প্রকল্পে হাতিরঝিল ও বেগুনবাড়ি খালের সঙ্গে বনানী ও গুলশান লেকের সংযোগ দেওয়া হয়েছে।

পাঁচ বছর আগে এই প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষে উদ্বোধন করা হলেও স্বচ্ছ পানির দেখা মিলেছে কমই। প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ ও উন্নয়ন করা হয়েছে এ প্রকল্পের। অথচ হাতিরিঝিলের পানিতে মিশে আশপাশের বাসাবাড়ির ময়লা পানি, গৃহস্থালি ময়লা-আবর্জনা। তাছাড়া দর্শনার্থীদের ফলের খোসা এবং চানাচুর ও চিপসের প্যাকেট ফেলা হয় লেকের পানিতে। আবার হাতিরঝিলে প্রতিদিন হাজার হাজার লোকসমাগম হওয়ায় প্রকল্পের চারপাশে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় অনেক দোকান ও রেস্তোরাঁ। এসব দোকানের ময়লাও ফেলা হচ্ছে ঝিলের পানিতে। কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা ও উদাসীনতার কারণে ড্রেন দিয়ে বিভিন্ন এলাকার পচা আবর্জনা ঝিলের মধ্যে প্রবেশ করে নষ্ট করছে পানির স্বচ্ছতা। পানির স্বাভাবিক রং বদলে হয়েছে কালচে রঙের। সেই সঙ্গে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। পথচারী ও দর্শনার্থীরা ঝিলের পচা পানির গন্ধে অতিষ্ঠ।

এদিকে, তিন মাস আগে পানির দুগর্ন্ধ রোধ ও ময়লা শোষণ করতে ঝিলের পানিতে ভাসমান ট্রে তৈরি করে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছে। পরীক্ষামূলক এ কাযর্ক্রমটি এফডিসির অংশে করা হলেও কাক্সিক্ষত ফল পাওয়া যায়নি, পেলে পুরো লেকজুড়েই ভাসানোর পরিকল্পনা ছিল কর্তৃপক্ষের। ফের নতুন একটি প্রকল্প গ্রহণ করতে যাচ্ছে হাতিরঝিল প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া প্রকল্পের শুরু থেকে পানি শোধন ও দুর্গন্ধ দূর করতে নানা কার্যক্রম পরিচালনা করলেও সুফল মেলেনি।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, হাতিরঝিলের এফডিসি মোড় অংশ থেকে লেকের মধুবাগ ব্রিজ পর্যন্ত পানির রং কালচে। তাছাড়া সেই কালচে পানির দুর্গন্ধে টেকাই দায়। পানিতে ভাসতে দেখা গেছে, ফলের খোসা এবং চানাচুর ও চিপসের প্যাকেট। বৃষ্টিতে বাইরে থেকে ভেসে আসে শিল্পবর্জ্য। প্রকল্পের চারপাশে গড়ে ওঠা ছোট-বড় অনেক দোকান ও রেস্তোরাঁর ময়লা-আবজর্নাও পানিতে ফেলা হয়। সে সঙ্গে লেকের পাড় ঘেঁষে জমানো ময়লার স্তূপ থেকেও প্রতিদিন দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এফডিসির অংশের লেকের প্রবেশমুখেই আবজর্নার স্তূপ ও মনুষ্য মলমূত্রের দুর্গন্ধ তুলনামূলক বেশি। পানির রং সচরাচর স্বাভাবিক বা স্বচ্ছ দেখেন না আশপাশের বাসিন্দারা। কখনো কালো কুচকুচে বা সবুজ রঙের পানি থেকে প্রায়ই দুর্গন্ধ ছড়ে।

এই বিষয়ে হাতিরঝিল প্রকল্পের পরিচালক ও রাজউকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জামাল আক্তার ভূঁইয়া বলেন, ‘হাতিরঝিলের সঙ্গে মহাখালী, মগবাজারের টঙ্গী ডাইভারশন রোড, মধুবাগ, বেগুনবাড়ী, নিকেতন, তেজগাঁও, বাড্ডা ও রামপুরা এলাকায় ১০টি সংযোগ আছে। যেগুলো দিয়ে আশপাশ এলাকার বৃষ্টির পানিসহ ময়লা পানি, পয়োবর্জ্য ও শিল্পবর্জ্য এসে পড়ছে ঝিলে। তাছাড়া পান্থপথ, কারওয়ানবাজার ও কাঁঠালবাগান এলাকার পানির ড্রেন এবং সুয়ারেজ লাইন একসঙ্গে যুক্ত থাকায় ওইসব এলাকার শিল্পবর্জ্য, বাসাবাড়ির ময়লা পানিসহ সব ধরনের পচা-বাসি পানি হাতিরঝিলের পানিতে মিশছে। ফলে ঝিলের পানি স্বচ্ছতা হারাচ্ছে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close