আবদুল আলীম, নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জ বিআরটিএ কার্যালয়ে গাড়ির কাগজপত্র তৈরির হিড়িক
নারায়ণগঞ্জে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির কার্যালয়ে গাড়ি চালানোর অনুমতি (ড্রাইভিং লাইসেন্স) পেতে এবং যানবাহনের কাগজপত্র নবায়ন করতে আবেদন হঠাৎ বেড়ে গেছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা চালকের লাইসেন্স পরীক্ষা শুরু এবং পরবর্তীতে পুলিশের ট্রাফিক সপ্তাহ পালন এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
গতমাসে এ কার্যালয়ে নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন জমা পড়ে প্রায় ৫০০টি। আর গত ছয়দিনে এই কার্যালয়ে নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন জমা পড়েছে সাড়ে ৬০০টি। বিআরটিএ নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের কর্মকর্তারা এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তবে তাদের সেবার মান আগের মতোই আছে।
বিআরটিএর নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ে দালালদের দৌরাত্ম্যও বেড়ে গেছে গাড়ির কাগজপত্র ঠিক করতে আসা মানুষের ভিড়ে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বিআরটিএর নারায়ণগঞ্জ কার্যালয় মূল ফটকের বাইরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে তিন-চারজনের ছোট ছোট জটলা। কার্যালয়ের ভেতরেও দাড়ানোর তিল পরিমাণ জায়গা নেই। তবে সেবা নিতে আসা লোকজন অভিযোগ করেন, সাধারণ প্রক্রিয়ায় সেবা পেতে অযথা হয়রানি করা হচ্ছে। অথচ দালালদের দিয়ে দ্রুত কাজ হয়ে যাচ্ছে। সেবা গ্রহীতাদের সঙ্গে করছেন দর কষাকষি দালালরা। কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়াই সব করে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে গ্রাহক ধরছেন তারা। ড্রাইভিং লাইসেন্স করার সরকারি ফি তিন হাজার ৫০০ টাকা। পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে ছয়-সাত মাস সময় লাগে। শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স করার ছয় মাস পর ব্যবহারিক পরীক্ষার তারিখ দেওয়া হয়। দালালরা একটি মোটরসাইকেলের মালিকানা হস্তান্তরের জন্য দাবি করেন ছয় হাজার টাকা। একদিনেই কাজ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন কোনো কোনো দালাল। মোটরসাইকেলের মালিকানা হস্তান্তরের জন্য সরকার নির্ধারিত খরচ তিন হাজার ৬০০ টাকা। প্রক্রিয়া শেষ করতে দু-তিন দিন সময় নেয় বিআরটিএ। আর ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করতে আসা বিভিন্ন লোককে আট হাজার টাকায় কাজ করে দেওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছেন। সময় চাচ্ছেন এক মাস। বিআরটিএর দুজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরুর পর যানবাহনের কাগজপত্র ও চালকের লাইসেন্স নবায়ন করতে বিআরটিএতে ভিড় বেড়ে গেছে। আর পুলিশের ট্রাফিক সপ্তাহ পালন করাতে লাইসেন্স নবায়নের মাত্রাকে আরো বেগবান করেছে। ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি লোক এসেছে। সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা থেকে মমিনুর রহমান এসেছেন লাইসেন্স নবায়ন করতে। তিনি বলেন, ‘বেশি ভিড় আর ঝামেলা এড়াতে লাইসেন্স পেতে বাধ্য হয়ে এক দালালের সঙ্গে কন্ট্রাক্ট করেছি। ’
লাইসেন্স নবায়ন করতে বিআরটিএ নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ে আসেন নারায়ণগঞ্জ মিনিবাস মালিক ঐক্য সমিতির অতিরিক্ত সভাপতি রওশন আলী সরকার। তিনি বলেন, লাইসেন্স নবায়ন দুই রকমের। পেশাদার লাইসেন্স হলে এর জন্য পরীক্ষা দিতে হয়। অপেশাদার লাইসেন্স হলে এর জন্য পরীক্ষা দিতে হয় না। ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে বিআরটিএ অফিসে জমা দিলে লাইসেন্স মিলে। ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে বেশির ভাগ ড্রাইভারের। এখন লাইসেন্স নবায়ন করছে সবাই একত্রে। লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি কেউ চালাতে পারছে না। আমরা ড্রাইভারের লাইসেন্স ব্যতীত গাড়ি বের করতে দিচ্ছি না। মালিক সমিতির থেকেই আমাদের এ ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গাড়ি চালাতে লাইসেন্স রাখতেই হবে। তা না হলে গাড়ি দেওয়া হবে না।
বিআরটিএর নারায়ণগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পরিচালক (প্রকৌশল) সৈয়দ আইনুল হুদা চৌধুরী বলেন, গত সপ্তাহ থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদনকারীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। গাড়ির ফিটনেস ও রেজিস্ট্রেশনের জন্য মালিকেরাও ভিড় করছেন। মোটরযান মালিকানা বদলীর জন্যও অনেক আবেদন আসছে। ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়কে যাতে না চলতে পারে তার জন্য আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ব্যাহত ছিল। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমরা সড়ক নিরাপত্তা ও গণসচেতনামূলক সমাবেশ ও র্যালি করছি। এ ছাড়া পুলিশের ট্রাফিক সপ্তাহে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযানে আমাদের কর্মকর্তারাও সঙ্গে থাকছেন।
"