নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২১ জুলাই, ২০১৮

নানা সমস্যায় ঐতিহ্য হারাচ্ছে শ্যামবাজার

নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় পুরান ঢাকার শ্যামবাজার ঐতিহ্য হারাচ্ছে। বর্তমানে বাজারটি নানা সমস্যায় জর্জরিত। বাজার সংলগ্ন রাস্তাগুলো অপ্রশস্ত। এতে এ এলাকায় যানজট লেগেই থাকে। শ্যামবাজারের বিভিন্ন স্থানে ফেলে রাখা হয়েছে ময়লা-আবর্জনা। এতে চারদিকের পরিবেশ নোংরা হয়ে পড়েছে। অস্থায়ী দোকান বসার পর্যাপ্ত জায়গা নেই। অগ্নিকান্ড প্রতিরোধক ব্যবস্থা খুবই অপ্রতুল। স্থায়ী পরিচ্ছন্নতাকর্মী নেই। নদীপথে আসা কাঁচামাল বাজারে ওঠার ঘাট সংকট রয়েছে।

ঢাকার বাইরের পাইকারদের জন্য নেই বিশ্রামাগার। তবে সিটি করপোরেশনের কয়েকটি টয়লেট থাকলেও সেগুলো খুবই নোংরা। অথচ এক সময় এ বাজারটি খুবই জমজমাট ছিল। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কৃষিপণ্য শ্যামবাজার পর্যন্ত আসতে বিভিন্ন সড়কে অসহনীয় যানজটে পড়তে হয়। অনেক সময় যানবাহনেই পণ্য নষ্ট হয়। এতে লোকসান বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা শ্যামবাজারে আসার উৎসাহ হারাচ্ছেন।

ঢাকা সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে বাজারটি পরিচালিত হলেও অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা দূর করতে কর্তৃপক্ষ যেন নির্বিকার। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৪৩নং ওয়ার্ড ও সূত্রাপুর থানাধীন শ্যামবাজার। ২০০ বছর আগে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের পূর্ব দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরেই গড়ে ওঠে এ বাজার। পরে নদীর তীর থেকে প্রশস্ত হয়ে ফরাশগঞ্জ বিকে দাশ রোডে ছাড়িয়ে যায়। বুড়িগঙ্গার তীরের লালকুঠি থেকে ফরাশগঞ্জের সমিল পর্যন্ত মূলত শ্যামবাজার।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শ্যামবাজারের দিকে দাশ রোডে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, শুকনো মরিচ, হলুদ, ধনে, আলুসহ নানা কৃষি ভোগ্যপণ্যের ছোট বড় মিলে প্রায় ৩০০ আড়ত রয়েছে। এখানে ২৫ থেকে ৩০ জন আমদানিকারক রয়েছেন। বুড়িগঙ্গা নদীর পাশে বাকল্যান্ড বাধ এলাকায় সবজির আড়ত রয়েছে। নদীর তীর, সড়কের পাশসহ আড়তগুলোতে ছোট-বড় মিলে ২৫০টির বেশি ভিট রয়েছে।

শ্যামবাজারের মূল ব্যবসা পেঁয়াজ, আদা, রসুন, হলুদ ও শুকনা মরিচের আড়তদারী বলে জানিয়েছেন শ্যামবাজার কৃষিপণ্য বনিক সমিতি। সাধারণত ভোর ৫টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বেশি ভিড় হয়। তা ছাড়া প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত স্বাভাবিক লেনদেন চলে।

জানা গেছে, আগে নদীপথে আসা কাঁচামাল অন্তত ১২টি ঘাট দিয়ে নামানো হতো। বর্তমানে ২-৩টি ঘাট দিয়ে মালামাল নামানো হয়। আর পর্যায়ক্রমে লঞ্চ টার্মিনাল বৃদ্ধি করায় কিছুদিন পরপর পরিকল্পিতভাবে চালানো হচ্ছে বিআইডাব্লিউটির উচ্ছেদ অভিযান। আর বাজারে আসা কৃষিপণ্যের যানবাহন থেকে টার্মিনাল ইজারাদারদের চাঁদাবাজির কারণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন পাইকাররা। এদিকে স্থান সংকুলান হওয়ায় বর্তমানে নদীর পাশে রাস্তায় ও ফুটপাতে বসতে হচ্ছে পাইকারদের।

এ বিষয়ে অতিকুল্লাহ ট্রেডার্সের ম্যানেজার তাজুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নদী ও সড়কপথে হাজারো বেপারি আসেন শ্যামবাজারে। কয়েক হাজার টন শাকসবজি বিক্রি হয়। নদীর তীরে স্থায়ীভাবে বসতে না পারায় বর্তমানে আড়তের সামনে রাস্তায় বসাসহ নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন বেপারীরা।

শ্যামবাজারের সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তাঘাটসহ বাজার কর্দমাক্ত হয়ে পড়ে। তখন বিশ্রি অবস্থায় পড়েন বাজারে আসা মানুষজন। বিশ্রামের কোনো জায়গা না থাকায় ভিটের সামনেই ঘুমায় পাইকাররা। দুর্গন্ধ আর মশা-মাছির মধ্যেই কোনোমতে সময় পার করেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ফরাশগঞ্জ এলাকার রাস্তায় অবৈধ পিকআপ স্ট্যান্ড তৈরি করা হয়েছে। এ বাজারের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে অগ্নিকান্ড প্রতিরোধক ব্যবস্থার অভাব। ২৭ মার্চ অগ্নিকান্ডে লালকুঠি সংলগ্ন নর্থব্রক হল রোডে ১৫টি আড়তঘর পুড়ে যায়। আদা, রসুন, পেঁয়াজ, আলু ও ফলের এসব আড়তে কয়েক কোটি টাকার লোকসান গুনতে হয়েছে ব্যবসায়ীদের।

শ্যামবাজার কৃষিপণ্য আড়ত বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও মিতালী আড়তের মালিক হাজী মো. সেলিম যুগান্তরকে বলেন, ঐতিহ্যবাহী শ্যামবাজার থেকে বড় অঙ্কের রাজস্ব আদায় হলেও এ বাজারটির উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়নি। আর যানজটসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় বাজারটির জৌলুশ হারিয়ে যাচ্ছে। বাজারটির উন্নয়নে ও বাজার ব্যবস্থাপনায় সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে পারলে অবশ্যই বাজারের সুদিন ফিরে আসবে।

শ্যামবাজার কৃষিপণ্য আড়ত বণিক সমিতির সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর মো. সাহিদ যুগান্তরকে বলেন, শ্যামবাজারটি আজও নগরীর ঐতিহ্য বহন করে চলছে।

এ বাজারের উন্নয়নের বিষয়ে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট সবাইকে সজাগ হতে হবে। আর পরিকল্পিতভাবে বাজার ব্যবস্থাপনা করলে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist