নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৫ জুলাই, ২০১৮

দেশকে বসবাস উপযোগী করতে দরকার সমন্বিত পরিকল্পনা

পরিকল্পনা সংলাপে বক্তারা

পরিকল্পনা সংলাপে বক্তারা বলেন, দেশকে বসবাস উপযোগী করতে হলে পরিকল্পনা একান্তই দরকার, তবে সেটা হতে হবে সবদিক থেকে সমন্বিত। তা না হলে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো পরিকল্পনার অভাবে অন্যান্য শহর, নগর, অঞ্চল, জেলা, উপজেলা ও পৌরসভাগুলো ঘিঞ্জি ও বসবাস অনুপযোগী হবে। এর কারণ হিসেবে তারা জানান, প্রতিদিনই কোথাও কোথাও জলাশয় ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ হচ্ছে। আবার কোথাও অপরিকল্পিতভাবে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে দিন দিন কমছে খালি জায়গা। এতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য খেলার মাঠ এবং পার্কের অভাব হবে; যা বড় ধরনের সামাজিক সমস্যা তৈরি করবে।

গতকাল শনিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লেনারস (বিআইপি) আয়োজিত, প্লেনারস টাওয়ারে নগর পরিকল্পনা ও সেবা : পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহ ও পেশাজীবীদের ভূমিকা শীর্ষক পরিকল্পনা সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বিআইপির সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মোহাম্মদ খানের সঞ্চালনায় সভাপতির বক্তব্য দেন বিআইপির সভাপতি আবুল কালাম। এ ছাড়া আরো বক্তব্য দেন বিআইপির সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক মাযহারুল ইসলাম, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিকল্পনাবিদ রেজাউল করিম, ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম, বিআইপির প্রতিষ্ঠাতা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক গোলাম রহমান, বিআইপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক গোলাম মোর্তজা, আতিকুল খালিদ ও বিভিন্ন পৌরসভা থেকে আসা পরিকল্পনাবিদরা।

সংলাপে বক্তারা আরো বলেন, বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে ঢাকার বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে পূর্বদিকে পরিকল্পিতভাবে নগরায়ণ করার যে পরামর্শ দিয়েছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা ওই এলাকা কীভাবে গড়ে উঠবে, সে ব্যাপারে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) মহাপরিকল্পনায় বলা হয়েছে। আর বহুবিধ সমস্যায় জর্জরিত ঢাকার সমস্যার সমাধানে দেশের অন্যান্য মহানগর, জেলা ও উপজেলা শহরকে গড়ে তুলতে বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। এজন্য ঢাকাকে কেন্দ্র করে আর কারো কোনো পরিকল্পনা না করলেও চলবে। প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে ঢাকার পূর্বাঞ্চল পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা সম্ভব হলে ৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকার অর্থনৈতিক কার্যক্রম বাড়বে। সেখানে নতুন করে ৫০ লাখ মানুষের আবাসন ও ১৮ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। আর ঢাকা শহরের মানুষের মাথাপিছু আয় ৮ হাজার ডলার থেকে বেড়ে ৯ হাজার ২০০ ডলারে উন্নীত হবে। এজন্য বিশ্বব্যাংকের তিন সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পরামর্শ দিয়েছে।

সেগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ বন্যার হাত থেকে ঢাকার পূর্বাঞ্চল রক্ষা করতে এবং পানির গতি ঘোরাতে বালু নদীতে তীরে বাঁধ দিতে হবে, ক্রমবর্ধমান সাধারণ ট্রান্সপোর্ট ও পাবলিক ট্রান্সপোর্টে চলাচলে কার্যকর সমন্বয় করতে হবে এবং ঢাকার পূর্বাংশে একটি পরিকল্পিত বড় বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে তুলতে হবে। আর এ সুপারিশ বাস্তবায়নে প্রয়োজন হবে অন্তত দেড় হাজার কোটি টাকা। যে অর্থ বিনিয়োগ করতে আগ্রহী বিশ্বব্যাংক।

রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ ও সংশোধিত ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) প্রকল্প পরিচালক মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, পরিকল্পিত নগরায়ণ গড়ে তুলতে পরিকল্পনাবিদদের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে। সুষ্ঠু পরিকল্পনা সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারলে সেটা বাস্তবায়ন হয়। তিনি আরো বলেন, সাধারণ মানুষের কাছেও পরিকল্পনার গুরুত্ব তুলে ধরতে হবে। টেকসই উন্নয়ন করতে হলে আগে পরিকল্পনা করতে হবে। আর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সঠিক সময় সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

বিআইপির সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘সমস্যাবহুল ঢাকা শহর নিয়ে বিশ্বব্যাংকের পরিকল্পনা কোনো ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনবে না। আমরা এখন দেশব্যাপী পরিকল্পনার বিষয়ে ভাবছি।’ তিনি আরো বলেন, ঢাকা মহানগর ও আশপাশের এলাকা নিয়ে রাজউকের মহাপরিকল্পনা রয়েছে। সেই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলেই ঢাকার পূর্বাঞ্চলও পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠবে। বিদ্যমান অবস্থার মধ্যে বিশ্বব্যাংকের পরিকল্পনা অগ্রহণযোগ্য।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নগর পরিকল্পনাবিদ এ কে এম রেজাউল করিম বলেন, দেশে এখন পরিকল্পনাবিদের সংখ্যা ১ হাজার ৪০০ জন। অথচ এই সময়েও পরিকল্পনাবিদদের বাদ দিয়ে শহর পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

মিউনিসিপাল টাউন প্ল্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি আতিকুল খালিদ বলেন, দেশে ৩২৯ পৌরসভা রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ২৭টি পৌরসভায় পরিকল্পনাবিদ রয়েছে। বিধি মোতাবেক ১৭৬টি প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় পরিকল্পনাবিদ নিয়োগের বাধ্যবাধকতা থাকলেও সেটা করা হচ্ছে না। অন্যদিকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির পৌরসভায় পরিকল্পনাবিদ নিয়োগের কোনো পদই নেই।

তিনি আরো বলেন, ১৯৭৭ সালের অর্ডিন্যান্সের আলোকে প্রণীত ১৯৯২ সালের বিধিমালা দিয়ে চলছে দেশের পৌরসভাগুলো। অথচ স্থানীয় সরকার পৌরসভা আইন-২০০৯ প্রণীত হলেও কোনো বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়নি। এ আইন মোতাবেক পৌরসভা সার্ভিস কমিশন গঠনের বিষয়ে বলা থাকলেও সে ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। পৌরসভাগুলোতে পরিকল্পনা বিভাগ বলে কোনো বিভাগ নেই। একই গ্রেডের সহকারী প্রকৌশলীদের অধীনে কাজ করতে হচ্ছে। প্রথম শ্রেণির একটি পৌরসভায় একজন নগর পরিকল্পনাবিদ দিয়ে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এটা কোনোভাবেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নগর পরিকল্পনাবিদ মইনুল ইসলাম বলেন, দেশের ১১টি সিটি করপোরেশনে ১১ জন পরিকল্পনাবিদ কর্মরত রয়েছেন। এই স্বল্পসংখ্যক জনবল দিয়ে শহরের উন্নয়নকাজ করা সম্ভব নয়। ১২ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে একাই নগর পরিকল্পনা বিভাগে কাজ করছি। এর পরও ৭৬০ বর্গকিলোমিটারের নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২৮টি খাল, ৩৮টি পুকুর ও উš§ুক্ত স্থান নির্ধারণ করতে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist