নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৫ জুলাই, ২০১৮

ডিএনসিসির পরিচ্ছন্নতা অভিযান

মাদকসেবী-ভবঘুরের দখলে আনোয়ারা পার্ক

ঘনবসতিপূর্ণ রাজধানীতে বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে যে কয়েকটি পার্ক রয়েছে, তার অনেকগুলোতেই অবসর কাটানোর সুযোগ নেই সাধারণ মানুষের। তেমনই একটি ঢাকার প্রাণকেন্দ্র ফার্মগেট এলাকার আনোয়ারা পার্ক। পার্কটির নাম আনোয়ারা হলেও সবার কাছে এটি পরিচিত ফার্মগেট পার্ক নামেই। পুরো পার্ক জুড়ে ছড়ানো-ছিটানো রয়েছে ময়লা। শুধু তাই নয়, ভ্যান, মালামালসহ নানা কিছু ছড়ানো-ছিটানো আছে এখানে। সিমেন্টের তৈরি বসার জায়গাগুলোতে ছিন্নমূল-ভবঘুরেরা আরামে ঘুমাচ্ছে। হকার ও ছিন্নমূল মানুষদের প্রায় দখলে পার্কটি।

গতকাল শনিবার ১২টার আগেও এমন দৃশ্য ছিল পার্কটিতে। কিন্তু ১২টায় হঠাৎ দৃশ্যপটের পরিবর্তন চোখে পড়ল। হকার, ছিন্নমূল মানুষের হঠাৎ ছুটাছুটি, আশেপাশের যেসব দোকান থেকে যারা ময়লা ফেলতে এসেছিলেন, তারা সেখানে ময়লা না ফেলে দ্রুত ময়লা নিয়ে পালাচ্ছেন। এর কারণ হিসেবে দেখা গেল, এখানে দখলমুক্ত ও পরিচ্ছন্নতা অভিযানে এসেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা।

জনদুর্ভোগ লাঘবে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নির্দেশে এ অভিযান পরিচালনা করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। পার্কটিতে অভিযান পরিচালনাকালে উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেসবাহুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এম এ রাজ্জাক, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (অঞ্চল-৫) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম অজিয়র রহমানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।

লোহার গ্রিল দিয়ে চারপাশ বেষ্টিত পার্কটির কয়েক জায়গার গ্রিল ভাঙা দেখা গেছে। এক পাশে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অত্যাধুনিক পাবলিক টয়লেট থাকলেও দক্ষিণ সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে বিভিন্ন স্থানে মূত্রত্যাগ করছেন অনেকে। পার্কের যেখানে-সেখানে রয়েছে ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ও। ঘুরতে আসা মানুষদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের নজরদারি নেই পার্কের প্রবেশপথ কিংবা ভেতরে। দিনের যেকোনো সময়েই দেখা মেলে সারি সারি ঘুমন্ত ভবঘুরেদের। প্রকাশ্যে মাদক সেবনকারীর সংখ্যাটাও নেহাত কম নয়। এক পাশে ছাপড়া ঘর তুলে বসবাস করছেন ছিন্নমূল মানুষেরা। সেসব ছাপড়া ঘর থেকেই জমজমাট মাদক ব্যবসা চলছে।

পার্কের দক্ষিণ পাশে পলিথিন টাঙিয়ে অস্থায়ীভাবে বসবাস করছেন মধ্য বয়সী হারিজ মিয়া। ঠেলাগাড়ি চালক হারিজ জানান, যখন যা পান তাই করেন। তিন সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে এখানে বসবাস করছেন তিনি। মাঝে-মধ্যে পুলিশ এসে ওঠিয়ে দিলেও আবার এখানেই বসত গড়েন তারা।

‘আমাগ আর যাওয়ার জায়গা কই? যা কামাই করি, তাই খাই। বউ-পোলাপান লইয়া কোনো জায়গায় থাকন তো লাগব’Ñ বলেন তিনি।

ফার্মগেটের রাজাবাজার এলাকার বাসিন্দা ফয়সাল অভিযোগ করে বলেন, ‘শত শত ভাসমান মানুষ পার্কে শুয়ে-বসে থাকেন। দেখলে মনে হবে, এটি কোনো আশ্রয়কেন্দ্র। এক পাশের অস্থায়ী ঘরগুলোতেই মাদক ব্যবসা আর মাদকসেবীদের আড্ডা চলে। রাত হলে পার্কের আশেপাশে ছিনতাইকারীর আনাগোনাও বেড়ে যায়’।

তিনি বলেন, ‘পার্কটি ছোট হতে পারে। কিন্তু সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে সাধারণ মানুষ হাঁটা-চলা করতে ও একটু বসতে পারতেন’। ঢুকতেই চোখে পড়বে চারদিকে ময়লার স্তূপ। পুরোটা জায়গা জুড়েই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে আবর্জনা। সেই আর্বজনের স্তূপ পরিণত হয়েছে ডাস্টবিনে। সীমানা প্রাচীরের লোহার রেলিং উধাও। সেই সঙ্গে ভেতরে গড়ে ওঠছে ছিন্নমূলদের অস্থায়ী বসতি। তীব্র দুর্গন্ধে টেকা দায়। ডাস্টবিনের মতো বিভিন্ন জায়গায় ফেলে রাখা হয়েছে ময়লা-আবর্জনা।

অভিযান পরিচালনাকালে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (অঞ্চল-৫) এস এম অজিয়র রহমান বলেন, ‘সব ধরনের জনদুর্ভোগ এড়াতে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নির্দেশে আমরা এই পার্কটিতে আজ অভিযান পরিচালনা করছি। পার্কটিতে ময়লা-আবর্জনা ফেলে অনেকেই পরিবেশ নোংরা করছিল, আমরা পরিচ্ছন্নতাকর্মী, গাড়িসহ এসে পার্কটির পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমে অংশ নিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘যারা এখানে আবর্জনা ফেলে, তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। আমরা এখানে হকার, ছিন্নমূলদের উচ্ছেদ করে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করার মাধ্যমে সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে কাজ করব। পার্কটির সার্বিক উন্নয়ন কাজের জন্য আমরা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে প্রস্তুত আছি। তবে মেট্রোরেলের কাজের জন্য কিছু মালামাল এখানে রাখা হচ্ছে। এটা ফাঁকা না হওয়া পর্যন্ত আমরা পার্কটির উন্নয়ন কাজে হাত দিতে পারছি না। তবে সমস্ত ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের মাধ্যমে পার্কটিতে সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে আজ থেকে কাজ শুরু করেছি আমরা।’

রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা ফার্মগেটে হাজারও গণপরিবহন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ, অফিসের নানা কর্মকা-ে ক্লান্ত পথিক একটুখানি জিরিয়ে নিতে ছুটে আসেন ফার্মগেট পার্কে। কিন্তু পার্কটিতে এমন ময়লা-আবর্জনা থাকায় দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ জানিয়ে আসছিলেন পার্কটিতে আগতরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist