নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকার পরিবহনে নৈরাজ্য
সিটিং সার্ভিসের নামে চিটিং কারবারি!
রাজধানীর গণপরিবহনে সিটিং সার্ভিসের নামে নৈরাজ্য দিনদিন ভয়ংকর আকার ধারণ করছে। সাধারণ মানুষের মতে, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, ত্রুটিপূর্ণ ও নিম্নমানের যানবাহন এবং অতিরিক্ত যাত্রী বহনসহ নানা অভিযোগে নগরীতে বিষফোঁড়া হিসেবে দেখা দিয়েছে এই সিটিং সার্ভিস। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সঠিক কোনো নীতিমালা না থাকায় এ নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। বিআরটিএ বলছে, খুব শিগগিরই নীতিমালা তৈরি করে সিটিং সার্ভিসের অনুমতি দিয়ে সমস্যার সমাধান করা হবে।
সিটিং কিংবা গেইটলক অথবা বিরতিহীন নামে কোনো শব্দ সিটিং বাস সার্ভিসের রুট পার্মিটের কোথাও লেখা না থাকলেও নিজেদের প্রভাব এরই মধ্যে বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে গণপরিবহন সংশ্লিষ্টরা। কর্তৃপক্ষকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে, অর্থলোভেই মূলত নগরীতে সিটিং সার্ভিস নাম দিয়ে সীমাহীন যাত্রী দুর্ভোগের কারণ তৈরি করেছে পরিবহন মালিকরা।
যাত্রী পরিবহনে নগরীতে প্রায় ১০ হাজার গণপরিবহনের চাহিদা থাকলেও রয়েছে প্রায় ৭ হাজার বাস। তাই পরিবহন সংকট থাকা অবস্থায় আবারো সিটিং-এর নামে যাত্রী পরিবহনের পরিমাণ কমিয়ে ফেলা হচ্ছে। এতে জনদুর্ভোগ বাড়ছে বলে মনে করেন সাধারণ যাত্রীরা। তারা বলেন, নাম রাখছে সিটিং কিন্তু কাজের বেলায় চিটিং। ২০ সিটের জায়গায় ৫০ সিট লাগায়। তারা লিখে রাখছে, বিরতিহীন সার্ভিস। আসলে তারা চরিত্রহীন। আমরা সিটিং হিসেবে উঠে দেখি এটা পুরোপুরি লোকাল। বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ উঠাচ্ছে নামাচ্ছে। কিন্তু ভাড়া নিচ্ছে দুই থেকে তিন গুণ।
কোনো সুষ্ঠু তদারকি বা নীতিমালা এতদিন না থাকায় সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে বলে নিজেরাই স্বীকার করে নিয়েছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কামাল বলেন, সিটিং সার্ভিসে স্ট্যান্ডিং প্যাসেঞ্জার থাকে। একজন লোক পল্লবীতে থেকে ফার্মগেট উঠে গেল, কিন্তু তার মতিঝিল পর্যন্ত ভাড়া। এটা এখন চলছে। আমরা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি, কিন্তু এখনো পুরোপুরি সম্ভব হয়নি।
এদিকে শিগগিরই ভাড়া নির্ধারণ, বাসের রং ও সীমিত স্টপেজ করার সুপারিশের মাধ্যমে নীতিমালা ঠিক করে সমস্যা সমাধান করার কথা জানিয়েছে পরিবহন নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিআরটিএ। সংস্থাটির সচিব শওকত আলী বলেন, যদি কেউ সিটিং সার্ভিস চালাতে চায় তাহলে তাকে নিয়মনীতি আইনের মধ্যে চালাতে হবে। তবে, পরিবহন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সিটিং সার্ভিস নগরীতে যেমন যানজট বাড়াবে, তেমনি বাড়াবে জনদুর্ভোগও।
নগর পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. সালেহউদ্দিন বলেন, সিটিং সার্ভিসের কারণে ছোট গাড়ির সংখ্যা বেড়ে গেছে। প্রতিবছর ৩৫ হাজার কোটি টাকা নষ্ট হচ্ছে যানজটে এই ঢাকা শহরে। আর তাই সবার আগে বাস মালিক, যাত্রী ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থার ঐক্যমত্যের ভিত্তিতেই কেবল সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব বলে মত দেন বিশেষজ্ঞরা।
"