নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২১ জুন, ২০১৮

এমপিওভুক্তির আন্দোলনে এক শিক্ষকের আক্ষেপ

আমার ছাত্র ঢাবিতে পড়ায় আমি বেতনের জন্য রাস্তায় ঘুমাই

কুষ্টিয়ার মিরপুরের অঞ্জনগাছী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জামিল উদ্দীন। নিজের স্কুলকে এমপিওভুক্ত করার জন্য গত ১১ দিন ধরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের বিপরীতের সড়কে বসে স্লোগান দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমার ছাত্র এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক। তাকে সুশিক্ষিত করলাম আমি। আর নিজেই বেতন পাই না। বেতনের জন্য রাস্তায় ঘুমাইলাম।’

গতকাল বুধবার আন্দোলনের ১১তম দিনেও অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা।

জামিল উদ্দীন বলেন, আমার তিন ছেলে-মেয়ে আছে। তারাও স্কুলে যায়। তাদের এবং সংসার চালানোর খরচের পাশাপাশি আরো অনেক খরচ রয়েছে। ২০০০ সাল থেকে এক টাকাও বেতন পাইনি অথচ আমার ছাত্র আসাদুল হক ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করছে। এ সময় মাটিতে বসে থাকা টাঙ্গাইলের জামুরিয়া পাবলিক হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক শারমিন নাহার কবিতা বলেন, ওই স্কুলের শিক্ষার্থী ছিলাম, এখন সেখানেই শিক্ষকতা করি। ১১ দিন ধরে বাচ্চাদের রেখে এখানে আছি। বেতন না পেয়ে খুব মানবেতর জীবনযাপন করছি। দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত এখানেই থাকব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের মা, আমাদের অভিভাবক। আমরা উনার আশ্বাসের অপেক্ষায় আছি।

কর্মসূচি চলাকালে হ্যান্ড মাইকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আযানও দেয়া হয় এখানে। পাশের কলে ওজু করে এখানেই তারা নামাজ আদায় করেন। আন্দোলন প্রসঙ্গে জয়পুরহাটের কাদোয়া আদর্শ নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, খালি হাতে ঘরে ফিরতে পারব না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এখানেই থাকব।

লালমনির হাটের পূর্ব ডাউয়াবাড়ি আদর্শ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাদিকুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পর শিক্ষামন্ত্রী আশ্বাস দিলেন, কিন্তু বাস্তবায়ন কিছুই হলো না। তিন বছর ধরে শিক্ষকতা করি, এক টাকাও বেতন পাইনি। তাই দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত এখান থেকে উঠব না।

কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন খুলনার ডুমুরিয়া এস কে বাকার কলেজের প্রভাষক সুজন কুমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, ২০০৪ সাল থেকে এই কলেজে চাকরি করছেন। কিন্তু এমপিওভুক্ত না হওয়ায় সরকার থেকে কোনো বেতন-ভাতা পান না। ফলে কষ্ট করে চলতে হচ্ছে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এখানেই থাকবেন বলে জানান তিনি। আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, দীর্ঘ ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে শিক্ষকতা করে এখনো বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। পরিবারের মৌলিক চাহিদা মেটাতে পারেন না। সমাজে তাদের কোনো সম্মান নেই। টিউশনি করিয়ে যা অর্থ আয় হয় তা দিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাতে হয়।

নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, ‘সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, গোয়েন্দা বিভাগ ও সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে জানতে চাই প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরও শিক্ষামন্ত্রী এমপিওভুক্তি বাস্তবায়ন না করার অপকৌশল ও দুঃসাহস কীভাবে দেখান? যদি চলতি বাজেটেই এমপিওভুক্ত বাস্তবায়ন না করা হয় তাহলে আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। এতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে দায়-দায়িত্ব শিক্ষামন্ত্রীকেই নিতে হবে।’

এর আগে গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষকরা। নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের ডাকে টানা ওই অবস্থান ও অনশনের এক পর্যায়ে গত ৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে তার তৎকালীন একান্ত সচিব সাজ্জাদুল হাসান সেখানে গিয়ে আশ্বাস দেন। এরপর শিক্ষক-কর্মচারীরা কর্মসূচি স্থগিত করেন। এরপর সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বলা হয়েছে আসন্ন অর্থবছরে নতুন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত ৭ জুন যে বাজেট প্রস্তাব করেন, সেখানে নতুন এমপিওভুক্তির বিষয়ে সুষ্পষ্ট কিছু বলা হয়নি। তাই ১০ জুন থেকে আবারো অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষকরা। এমনকি রাস্তায় বসে ঈদও করেন তারা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist