এস এইচ এম তরিকুল, রাজশাহী
রাজশাহীতে সিন্ডিকেটের কবলে নিত্যপণ্যের বাজার
প্রবিত্র মাহে রমজানের শুরুতেই বেসামাল হয়ে পড়েছেন রাজশাহীর নিত্যপণ্য বিক্রেতারা। রমজানের পবিত্রতায় দাম কমানো তো দূরের কথা, পাল্লা দিয়ে ক্রেতাদের পকেট কাটতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে সরকারের ওই ঘোষণা মানছে না ব্যবসায়ীরা। তবে এর কারণ হিসাবে সরকারদলীয় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকেই দায়ী করেছেন তারা। আর প্রতিটি বাজারে তদারকি না থাকায় ভয়হীন দাম নিচ্ছেন ব্যবসায়ী ও দোকানিরা।
সরেজমিনে রাজশাহীর মহানগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছেÑ ডাল, চিনি, ছোলা, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, লবণসহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের দামই বেড়েছে। এ অজুহাতে সবজির বাজারেও আগুন। অব্যাহত দাম বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ। রমজানের পণ্য হিসাবে পরিচিত ছোলা, চিনি, পেঁয়াজ, মসুর ডালের দাম দুই দিনের ব্যবধানে পাঁচ-সাত টাকা বৃদ্ধি হয়ে গেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, সরকারদলীয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পণ্য গুদামজাত করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। আইনী ব্যবস্থা থাকলে এমনটি হতো না বলেও জানান তারা। এদিকে, দোকানগুলোতে মূল্য তালিকা টানানো হয়নি, নেই কোনো তদারকিও। যে কারণে ইচ্ছেমতো দাম নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
বিক্রেতারা জানান, ভোক্তা পর্যায়ে গত সপ্তাহে ছোলার দাম ছিল কেজিপ্রতি ৫৮-৬০ টাকা, আর এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকা। একই অবস্থা পেঁয়াজের ক্ষেত্রেও। দেশে উৎপাদিত ও আমদানি করা পেঁয়াজ কয়েক সপ্তাহ ধরে কেজি প্রতি বিক্রি হয়েছে ৩৩-৩৫ টাকা ও ২৮-৩০ টাকা, এখন দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা ও আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৩৫ টাকা। প্রতি কেজি চিনি ৪৫ টাকা থেকে বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৮-৬০ টাকায়।
এ ছাড়াও দেশি মসুর ডাল কেজিতে ১০-১৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১০৫-১১০ টাকায়। আর আমদানি করা মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকায়। অন্যদিকে, মুগডাল, খেসারি, ডাবলি, বুটসহ সবধরনের ডালে কেজিতে বেড়েছে ৫-১২ টাকা। তবে মানভেদে বাজারে নতুন চাল আসতে শুরু করায় পাইকারি বাজারে চালের দাম নিম্নমুখী। ভোক্তা পর্যায়েও কমে যাবে বলেও জানান ব্যবসায়ীরা।
নগরীর সাহেববাজার চাল বিক্রেতারা প্রতি কেজি হাইব্রিড চাল ৩৫, গুটিস্বর্ণা ৩৫ থেকে ৪০, এলসি চাল ৩৮-৪২, পারিজা ৪২-৪৪, আঠাশ চাল ৫০-৫৫, মিনিকেট ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি করছেন। প্রতি কেজি আটা খোলা ২৪-২৫ এবং প্যাকেট আটা ৩০-৩২ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পাইকারি দোকানি বলেছেন, ‘এক সপ্তাহের ব্যবধানে সিন্ডিকের কাছে প্রতিটা জিনিসের দাম বেশি হয়ে গেছে, সেখানে গিয়ে কেউ মাথা ঘামাচ্ছে না। যত চাপ আমাদের কাছে। একদিকে ক্রেতাদেরও দাম বাড়ার কারণ বলতে হবে আবার মিডিয়ার কাছেও। যেন রোজা এসে আরো বেশি কথা বলা লাগছে। প্রশাসন ব্যবস্থা নিলেই তো হয়, আমরাও বাঁচি, ক্রেতারাও বাঁচে। তারা এখন সিন্ডিকেটদের দেখতে পাবে না। যত মরণ আমাদের।’ প্রতিবাদ করায় সম্প্রতি মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওসিকে প্রায় এক লাখ টাকা দেওয়া লেগেছে বলেও জানান ওই ব্যবসায়ী।
জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর রাজশাহীর সহকারী পরিচালক অপূর্ব অধিকারী গত শনিবার প্রতিদিনের সংবাদকে মুঠোফোনের মাধ্যমে জানান, আজকে জেলা প্রশাসন, র্যাব ও ভোক্তা সংরক্ষণ এবং ক্যাবের সমন্বয়ে নগরীর সাহেব বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। বাজার মনিটরিংকালে স্বাভাবিক পর্যায়ে ছিল পণ্যের দাম। মূল্য তালিকা না টানানোয় কয়েকজন ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে। প্রতিদিনই এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শকের সরকারি মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি কেটে দেন।
"