কুবি প্রতিনিধি
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে সন্ত্রাসী হামলা
কুবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে ঘোষণা দেয় যেখানেই কুবি শিক্ষার্থী পাওয়া যাবে সেখানেই গণধোলাই
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীদের বাসে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে সব ধরনের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে দিনভর বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল সোমবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। এর আগে রোববার হামলার পরে রাত সাড়ে ৯টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের আলোচনা হলেও বিকাল ৫টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মামলার কোনো সিদ্ধান্ত জানা যায়নি।
জানা যায়, রোববার সন্ধ্যায় কুমিল্লা নগরীর পুলিশ লাইন এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীদের বাসে হামলা চালায় কুমিল্লা সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগ এবং মহানগর ছাত্রলীগের বেশ কিছু নেতাকর্মী। হামলার সময় পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জসহ রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এই ঘটনায় প্রায় ৪০ জন আহত হন।
সন্ত্রাসী ও পুলিশের হামলার প্রতিবাদে সোমবার সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এই সময়ে কয়েকজন পুলিশ সদস্য প্রশাসনিক ভবনে প্রবেশ করলে শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে তাদের ধাওয়া দেয়। পরে প্রক্টরিয়াল বডি এবং অন্য শিক্ষকরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। দুপুরে প্রশাসনিক ভবনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কুমিল্লা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তানভীর সালেহীন ইমন ও সদর দক্ষিণ মডেল ওসি নজরুল ইসলাম, জেলা প্রশাসনের পক্ষে সদর দক্ষিণ উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুপালি মন্ডলসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আলোচনায় বসেন। কুমিল্লা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, কুমিল্লা সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে আজ মঙ্গলবার একটি আলোচনা হওয়ার কথা জানা যায়। তবে হামলার ঘটনায় সোমবার বিকাল পর্যন্ত মামলার কোনো সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নেয়নি বলে জানান প্রক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন।
এদিকে শিক্ষার্থীরা সোমবার ক্লাসে যাননি। ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে অপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন করায় অনুষ্ঠিত হয়নি অনেক চূড়ান্ত পরীক্ষা। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নুরুল করিম চৌধুরী এ প্রতিবেদককে জানান, সোমবার একটি স্নাতকোত্তর ও ছয়টি স্নাতকের চূড়ান্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। বিকাল ৪টা পর্যন্ত দুইটি বিভাগের পরীক্ষা স্থগিতের কথা জানিয়েছে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ ও মাযহারুল ইসলাম হানিফ সাংবাদিকদের জানান, তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। পুলিশ প্রশাসন তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছে। তবে মঙ্গলবারের মধ্যে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কঠোর আন্দোলন করবেন বলেও জানান তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দীন বলেন, জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। আগামীকাল (মঙ্গলবার) পুলিশের সঙ্গে আমাদের আরো একটি আলোচনা হবে। এরপর মামলা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী এই প্রতিবেদককে জানায়, সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে ঘোষণা দেয় যেখানেই কুবি শিক্ষার্থী পাওয়া যাবে সেখানেই গণধোলাই হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন আমাদের নিরাপত্তার জন্য এখনো কার্যত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না নেওয়ায় আমরা যারা শহরে রয়েছি তারা আতঙ্কে দিন পার করছি।
মারধরের ঘটনায় আহত হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিবর্তনের সভাপতি ওয়াসি মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, হঠাৎ বাস থামানো হয়। পুলিশ আমাদের মারতে থাকে। এক পর্যায়ে বায়জিদ ইসলাম গল্প, সজিব দাস বাঁধন ও আমি এক পুলিশ কর্মকর্তার কাছে মারধরের ঘটনা জানতে চাই। তখন পুলিশ আমাদের পুলিশ লাইনের ভেতরে নিয়ে মারধর করে।
মারধরের সময় ঘটনাস্থলে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুস সালাম উপস্থিত ছিলেন বলে এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান। এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুঠোফোনে বলেন, একটা বাসই শুধু ভাঙচুর করা হয়েছে। আর আমরা সহনীয় মাত্রায় কাজ করি। অনেক কিছুই হয়ত শোনা যাবে। তিনি ব্যস্ততার কথা বলে ফোন কেটে দেন।
"