এমএ রউফ, সিলেট

  ০৪ মে, ২০১৮

সিলেট মহানগরী তারের প্যাঁচে বন্দি

সিলেট নগরীর জিন্দাবাজার পয়েন্ট, চৌহাট্টা পয়েন্ট, আম্বরখানা পয়েন্ট, নয়াসড়ক, জেলরোড, ধোপাদিঘীরপাড়, নাইওরপুল, সোবহানীঘাট, শিবগঞ্জ, টিলাগড়সহ যেকোনো পয়েন্টে দাঁড়িয়ে চোখ বুলালেই নজরে পড়বে জঞ্জাল বিদ্যুতের খাম্বায় শতাধিক তার প্যাঁচানো। কোনোটি বিদ্যুতের, কোনোটি টেলিফোন, কোনোটি আবার ক্যাবল সিস্টেম ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কোম্পানির। কোন তার কিসের তা সাধারণ মানুষের পক্ষে বুঝে ওঠা দায়। শুধু সাধারণ মানুষই নয়, সংশ্লিষ্টরাও লাইন মেরামত করতে এসে চিনতে পারছেন না নিজেদের তার কোনটি। বিদ্যুতের তারের সঙ্গে টেলিফোন বা অন্য কোম্পানির তার জড়িয়ে গিয়েও প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। সিটি করপোরেশন বা এর সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই।

সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) সূত্র জানায়, আরিফুল হক চৌধুরী মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তারের জঞ্জাল পরিষ্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা ছিল। সিটি করপোরেশন থেকে তখন বলা হয়েছিল ওই প্রকল্পটি সফল হলে পরবর্তীতে নগরীর সব গুরুত্বপূর্ণ এলাকার ক্যাবল লাইন আন্ডারগ্রাউন্ডে নিয়ে যাওয়া হবে। এতে নগরীর সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি রাস্তাও প্রশস্ত হবে। কিন্তু সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া হত্যা মামলায় কারান্তরীণ ও পরবর্তীতে বরখাস্ত হওয়ার পর এই প্রকল্পটি থমকে যায়।

সিলেট নগরীতে বিদ্যুতের খাম্বায় বিদ্যুৎ ছাড়াও টেলিফোন, ক্যাবল সিস্টেম ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটসহ অন্তত ১০টি কোম্পানির তার টানা রয়েছে। একেকটি খুঁটিতে একেক কোম্পানির ১০-১৫টি তারও রয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই তারগুলো টানানো হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণভাবে। কোথাও কোথাও বিদ্যুতের তারের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে টেলিফোন ও ক্যাবল কোম্পানির তার। বিদ্যুতের শক খেয়ে অনেক কর্মী ওপর থেকে পড়ে গিয়ে পঙ্গু হয়েছেন। প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে একাধিকবার।

সিসিক প্রধান প্রকৌশলী নূর আজীজ বলেন, আরিফুল হক চৌধুরী মেয়র থাকাকালে আন্ডারগ্রাউন্ড দিয়ে তার টানার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তিনি বরখাস্ত হওয়ার পর পিডিবি ওই প্রকল্প বাস্তবায়নে সাড়া দিচ্ছে না।

বিভিন্ন কোম্পানির তার অপরিকল্পিতভাবে টানা ব্যাপারে প্রধান প্রকৌশলী নূর আজীজ বলেন, সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে সুবিন্যস্তভাবে তাদের তার টানার জন্য কয়েক দফা নোটিস দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের খুঁটিতে ঝুঁকিপূর্ণ ওইসব তার সরানো ও নিরাপদ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যে কয়েকটি এলাকায়।

আগে একবার পাতাল বিদ্যুৎ লাইন বসানোর উদ্যোগ নিয়েছিল সিসিক। এ বিষয়ে একটি প্রকল্প বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে (পিডিবি) পাঠানো হলেও তা পরবর্তী সময় বাতিল হয়ে যায়। সম্প্রতি নতুন করে আবার পিডিবি প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে। অনুমোদন পেলে কাজ শুরু করবে সিসিক।

সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নগরীর উন্নয়ন, অগ্রগতি ও দুর্ভোগ লাঘবে কয়েকটি আলোকিত উদ্যোগের মধ্যে পাতাল বিদ্যুৎ ছিল অন্যতম। তিনি নগরীর প্রাণকেন্দ্র বন্দরবাজার জিন্দাবাজার-চৌহাট্টা প্রধান সড়কের বিদ্যুৎ লাইন মাটির নিচ দিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন। দুই বছর আগে পাতাল লাইন করার জন্য পিডিবিতে প্রকল্পও প্রেরণ করা হয়। পাশাপাশি ওই সময় পাতাল বিদ্যুৎ লাইনের জন্য দরপত্রও আহ্বান করে সিসিক। এমনকি ক্যাবল ক্রয়ের প্রস্তুতিও নেওয়া হয়। ওই সময় সিটি মেয়র মামলার কারণে কারাগারে গেলে প্রকল্পটি মেয়রের অনুপস্থিতির কারণে বাতিল করে পিডিবি। কিন্তু মেয়র কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ওই বছরে আবার নগরীর ওই তিনটি এলাকায় পাতাল বিদ্যুৎ লাইন করতে প্রকল্প প্রেরণ করেন। সেটি পিডিবি গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছেন আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি জানান, প্রকল্পটি পিডিবি নতুন করে গ্রহণ করেছে। এটি বাস্তবায়ন হলে তারের জঞ্জাল থেকে নগরীর প্রাণকেন্দ্র মুক্তি পাবে। কেউ আর বিদ্যুতের খুঁটি ও তারের সঙ্গে যা খুশি তা জড়াতে পারবে না।

পিডিবি সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী রতন কুমার বিশ্বাস বলেন, সিটি করপোরেশন আমাদের বন্দরবাজার থেকে চৌহাট্টা পর্যন্ত সড়কের ওপরের বিদ্যুৎ লাইন মাটির নিচে নিতে সহযোগিতা চেয়েছে। বিষয়টি পিডিবির প্রধান কার্যালয় থেকে অনুমতি এলে সহযোগিতা করা হবে। তিনি জানান, উপশহরে ১১ কেভি লাইন মাটির নিচে স্থাপন করতে ১৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা এবং ৪০০ ভোল্টের ২৮ কিলোমিটার লাইনকে পাতাল লাইনে স্থাপন করতে ৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয় ধরে একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist