পাঠান সোহাগ

  ১১ এপ্রিল, ২০১৮

মৃৎশিল্পীদের বৈশাখী ব্যস্ততা

আসছে পহেলা বৈশাখ ঘিরে ব্যস্ততা বেড়েছে রাজধানীর মৃৎশিল্পীদের। গরমের ক্লান্তি, বিষাদ আর জীর্ণতা ঝেড়ে তারা মেতে উঠেছেন কর্মব্যস্ততায়। বাঙালি সংস্কৃতির সর্বজনীন এই উৎসব উপলক্ষে প্রতি বছর চৈত্রের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয় তাদের ব্যস্ততা। গ্রাম কিংবা শহরÑ সব জায়গায় তাদের ব্যস্ততা বাড়ে। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার মিরপুর, ধানমন্ডি, গুলশান ও পুরান ঢাকাসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বরেও চোখে পড়ে তাদের কর্মব্যস্ততার চিত্র।

মৃৎশিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকরা জানালেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বৈশাখি মেলা উপলক্ষে এবার নতুন ও বাহারি খেলনা এবং তৈজসপত্র এসেছে। এগুলো বাঁশ, কাঠ, বেত ও নারিকেলের খোল দিয়ে তৈরি শোপিস। আছে টেবিল ল্যাম্প ও ঝাড়বাতি। পাটের ফাইলবক্স ও মাটির বিভিন্ন শোপিসও এসেছে। রয়েছে পাটের তৈরি কয়েন পার্স, হ্যান্ড পার্স, সাইড ব্যাগ, টিফিন ব্যাগ, চেয়ার দোলনা, রিং দোলনা। এসব কারুপণ্য কেউ দোকানে সাজিয়ে রাখছে। আবার কেউ রং-তুলি দিয়ে লাল-সবুজ রঙে বাঙালির ঐতিহ্য তুলে ধরছেন। কুলা, ডালা, চালনিতে আল্পনা আঁকছেন কেউ।

শাহাবাগ থেকে বাংলা একাডেমি। দক্ষিণে সামান্য হেঁটে গেলেই দোয়েল চত্বর। ফুটপাতের ওপর সারি সারি দোকান। সেখানে বৈশাখি মেলার জন্য পসরা সাজানো হয়েছে। নতুন-পুরাতন অনেক রকমের পণ্য আছে। দেখলে মন ভরে যায়। দোকানিরা জানালেন, ‘এখানে মৃৎশিল্পের ৪০ থেকে ৫০টি দোকান রয়েছে। মেলাকে কেন্দ্র করে প্রতিটি দোকানে ৫০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকার মৃৎ ও কারুপণ্য তুলেছেন। পয়লা বৈশাখের মেলার প্রস্তুতির জন্য পাইকারদের ব্যস্ততা বাড়ছে। স্বল্প পরিসরে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় মেলা বসলেও বৈশাখে ব্যস্ততা বেড়েছে দ্বিগুণ।’

দোয়েল চত্বরের মৃৎশিল্পী মো. ইদ্রিস বলেন, খেলনা জিনিস কম এনেছি। হাঁড়ি, কলস, ফুলদানি, ঘর সাজানোর জিনিসই বেশি। বৈশাখের সময় চাহিদা বেশি।’ সারা বছর এখানেই ব্যবসা করি। আগের দামই বিক্রি করব। তিনি বলেন, ‘শোপিস ৪০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। উচ্চ মধ্যবিত্ত ও বিত্তশালী শৌখিন মানুষরা এই পণ্যের ক্রেতা।’

বাংলা হ্যান্ডি ক্রাফট দোকানের মালিক মো. মনির বলেন, ‘মৃৎ ও কুটির শিল্পের তৈরি এ পণ্যগুলো মূলত রাজশাহী, কুষ্টিয়া, শরীয়তপুর, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, রাজবাড়ী, কুমিল্লা, পটুয়াখালী, সাভার ও ঢাকার রায়েরবাজার থেকে আনা হয়। ছাড়াও ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কুমোরদের তৈরি।’

ধানমন্ডির মৃৎশিল্প ব্যবসায়ী রাকিব বলেন, ‘পাইকারদের কাছ থেকে মালামাল কিনে রেখেছি। চৈত্রের শেষ সপ্তাহে থেকে বিক্রি বেড়েছে। ছোট ঢোল, লাটিম, দুই চাকার গাড়ি, মাটি দিয়ে তৈরি ফলের ব্যাংক, তালপাতা ও বেতের হাতপাখায় বিক্রি হচ্ছে বেশি। অনেকে অর্ডার দিয়েছে। সেগুলো তাদেরকে পৌঁছে দিতেই ব্যস্ত সময় পার করছি।’

মৃৎশিল্প ব্যবসায়ী পিন্টু পাল বলেন, ‘এ ব্যবসায় অল্প পুঁজিতে অধিক লাভ। ১০০ টাকার একটি পণ্যে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ মুনাফা হয়। এ সিজনে যে বিক্রি হবে তা দিয়ে সারা বছরের একটা খরচ উঠে আসবে। তাই আমরা গুরুত্ব সহকারে কাজ করছি।’

মহানগর মৃৎশিল্প ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য মৃৎ ও কারুশিল্প ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বৈশাখি মেলাকে কেন্দ্র করে ১৯৮০ সালে শিশু একাডেমি প্রাঙ্গণে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কুমোররা তৈরি পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসিয়েছিল। সেই থেকে শুরু। এখনো চলছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এবারের মেলায় কেমন জমবে বলা যাচ্ছে না। চারদিকে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতি শান্ত না হলে ব্যবসা ভালো হবে না।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist