পাঠান সোহাগ
বর্ষবরণ উৎসব
জোর কদমে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি : ৬০ ভাগ কাজ শেষ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা প্রাঙ্গণে এখন উৎসবমুখর পরিবেশ। ওই চত্বরে এখন সাজ সাজ রব। জোরেশোরে মঙ্গল শোভযাত্রার প্রস্তুতি চলছে। জয়নুল গ্যালারির সামনে নবীন শিল্পীরা গভীর মনোযোগে ছবি আঁকছেন। আঁকা ছবি গ্যালারিতে বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এসব শিল্পকর্ম বিক্রির টাকা ব্যয় হবে পহেলা বৈশাখের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায়। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতির ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। কাজও চলছে জোর কদমে।
এবারের পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রার মূল প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে লালন সাঁইয়ের একটি গানের প্রথম কলি, ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’। বঙ্গাব্দ ১৪২৫ উদযাপনের জন্য মঙ্গল শোভাযাত্রার দায়িত্বে রয়েছেন চারুকলা অনুষদের ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। সহযোগিতা করছেন অনুষদের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। সঙ্গে শিক্ষক ও চারুশিল্পীরাও রয়েছেন। গত ১৫ মার্চ নিজ হাতে ছবি এঁকে এই প্রস্তুতিকার্যের উদ্বোধন করেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী।
গতকাল সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, কেউ কাগজ কেটে ফুল, প্যাঁচা, পাখপাখালির অবয়ব তৈরি করছেন। কেউ কেউ কাগজের ম- দিয়ে বিখ্যাত ব্যক্তি আর রাজা-রানির মুখোশ তৈরিতে ব্যস্ত রয়েছেন। কেউ নকশা করছেন মাটির সরায়। কেউ কেউ ব্যস্ত বানানো শিল্পকর্মগুলো সাজিয়ে রাখার কাজে। মাঠজুড়ে চলছে বাঁশের ফালি দিয়ে কাঠামো তৈরির কাজ।
সরেজমিন গিয়ে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই প্রথম টেপা পুতুলের রীতিতে ১২ ফুট লম্বা পুরুষের অবয়ব তৈরি হচ্ছে। এটি জেলের প্রতীক সঙ্গে থাকবে জাল। পাখি আর ছানা, বিশাল এক মহিষ থাকবে। সবচেয়ে আকর্ষণীয় কাঠামো হবে হরিণ ও হাতির। প্রধান প্রতীকটি হবে পায়রা উড়িয়ে দেওয়া মায়ের। এটি হবে ২০ ফুট লম্বা। বিশাল হাস্যোজ্জ্বল সূর্যমুখী, রাজা-রানি, বাঘ, ফুল, প্যাঁচার বড় বড় মুখোশ। পাশাপাশি শোভাযাত্রায় মাছ, বক, সূর্য, সাইকেলে চড়া ট্যাপা পুতুল, পাখির শিল্প কাঠামোও থাকবে।
তারা বলেন, দিন যতই ঘনিয়ে আসছে পরিবেশ তত ব্যস্ত আর কর্মমুখর হচ্ছে। একদিকে চলছে শিল্প কাঠামো নির্মাণকাজ। অন্যদিকে চলছে জলরঙের ছবি, সরাচিত্র, মুখোশ ও তৈরি পুতুল বিক্রি করে টাকা সংগ্রহ।
চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, পহেলা বৈশাখ নতুন বছরের প্রথম দিন। এইদিনে সকাল ৯টার পরপরই বের হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। এর উদ্বোধন করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান। সরকারি নির্দেশ মেনে বৈশাখী মেলার সব কার্যক্রম বিকেল ৫টার মধ্যে শেষ করার জন্য বলেন তিনি।
শোভাযাত্রার যুগ্ম সমন্বয়ক আফি আজাদ বলেন, ‘এবার ৯টি মোটিভ নিয়ে কাজ হচ্ছে। এ পর্যন্ত সমগ্র কাজের ৬০ ভাগ শেষ হয়েছে। ১২ এপ্রিলের মধ্যে সম্পূর্ণ কাজ শেষ হবে। তখন সব মোটিভ দৃশ্যমান হবে।’
শোভাযাত্রা কমিটিতে আছেন ফাহমিদা। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে যেসব শিল্পকর্ম আছে, সেগুলো ১০০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে শিল্পকর্ম নেবে-এমন অর্ডার দিয়ে যাচ্ছে। সঠিক সময়ে এগুলো তৈরি করে পৌঁছে দিতে হয়।’ জলরঙের চিত্রকর্ম বিক্রি সম্পর্কে প্রশান্ত রায় বলেন, ‘২০তম ব্যাচের সবাই ব্যস্ত সময় পার করছেন। নবীর শিল্পীদের আঁকা চিত্রকর্ম একটু কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। প্রবীণ শিল্পীদের চিত্রকর্ম বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকায়।’
"