নিজস্ব প্রতিবেদক
নগরীর নতুন ‘উৎপাত’ ডিজিটাল বিলবোর্ড
বেশ কিছুদিন ধরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার বিভিন্ন সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় স্থাপন করা হয়েছে অডিও ভিজুয়াল-সমৃদ্ধ ডিজিটাল বিলবোর্ড। সিটি করপোরেশন এসব বিলবোর্ড স্থাপনে কথিত সৌন্দর্য বর্ধনের যুক্তি দিলেও নাগরিকরা বলছেন, নগরের অনেক উৎপাতের মধ্যে এটি নতুন উৎপাত; যা বিরক্তির উদ্রেক করছে।
চক্ষু বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এ ব্যানার বিলবোর্ড দৃষ্টির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। রয়েছে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও। পাশাপাশি পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাবের কথা জানিয়েছেন পরিবেশবাদীরা।
২০১৬ সালের নভেম্বরে হাইকোর্ট ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন রাস্তা, ফুটপাত, সড়কদ্বীপ, রোড ডিভাইডারে লাগানো ব্যানার-ফেস্টুন তাৎক্ষণিক অপসারণের নির্দেশ দেওয়ার পর তা অপসারণে তৎপরতা দেখা যায় উভয় সিটি করপোরেশনেই। বিশেষ করে ঢকা উত্তরকে ব্যানার-পোস্টার মুক্ত করায় নাগরিক প্রশংসা পান প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। অপসারণে তোড়জোড় শুরু করেছিল দক্ষিণ সিটিও। কিন্তু সে কাজে স্থবিরতা আসে। উল্টো দক্ষিণ সিটির বিভিন্ন সড়কে নতুন করে স্থাপন করা হয় ডিজিটাল ব্যানার। যা দৃষ্টি-দূষণ ঘটাচ্ছে বলে অভিযোগ নাগরিকদের।
তারা বলছেন, এসব বিলবোর্ডের কারণে তারাও অনেকটা বিভ্রান্তিতে পড়ছেন। এভাবে বিলবোর্ডের আলোর ঝলকানিতে ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও সেদিকে তাকাতে হচ্ছে। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তারা। তাদের মতে, এসব বিলবোর্ড সৌন্দর্যের চেয়ে অসৌন্দর্যই বেশি। এসব বিলবোর্ড লাগানোর আগে ডিএসসিসিকে নগর পরিকল্পনাবিদদের সঙ্গে আলোচনার দরকার ছিল বলে মন্তব্য করেন তারা।
এ বিষয়ে কথা হয় মোটরসাইকেল চালক ইব্রাহীমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রাতে অফিস থেকে বের হয়ে কারওয়ান বাজার ইটিভি মোড় হয়ে বাংলামোটরের দিকে ফিরতে দেখি অনেক আলো, হঠাৎ করেই অন্ধকার। আবার আলোর ঝলকানি। এভাবে অন্ধকারের পর যখন আলোকিত হয়ে উঠল, তখন আর সামনের পথ দেখে উঠতে পারি না।’ তিনি বলেন, ‘তখন আমার গাড়ি একটি প্রাইভেট কারে ধাক্কা দেয়। বড় দুর্ঘটনা না ঘটলেও আমি ছিটকে পড়ে যাই।’
ডিজিটাল ব্যানার থেকে নির্গত আলোর প্রতিফলন দৃষ্টির ওপর যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে তা ব্যাখ্যা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের রেটিনা বিশেষজ্ঞ এবং সার্জন ডা. আফজাল মাহফুজ উল্লাহ বলেন, রাতের বেলা হঠাৎ চোখে আলো পড়লে চোখের রড সেল এবং কোণ কোষের ক্রিয়াশীলতা পরিবর্তন ঘটে। ফলে দৃষ্টিশক্তির ক্ষেত্রে অস্বাভাবিকতা সৃষ্টি হয়। তাছাড়া কেউ যদি অন্ধকার থেকে হঠাৎ আলোতে আসে বা আলো থেকে হঠাৎ অন্ধকারে যায় তখন চোখের দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণকারী রড ও কোণ কোষগুলো সঙ্গেই সঙ্গেই সক্রিয় না হওয়ার এক ধরনের ঝাপসা সৃষ্টি হয়। চোখের স্বাভাবিক দৃষ্টি ফিরে আসতে ১৫ সেকেন্ডের মতো সময় লাগে। তাছাড়া হঠাৎ করে চোখে আলো পড়ায় দৃষ্টিশক্তির ক্ষেত্রেও অনেক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
এ চক্ষু বিশেষজ্ঞ আরো বলেন, যদি এ বিলবোর্ড রাখতেই হয় তবে এর আলোর পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। এতটাই কমাতে হবে যাতে এটি দৃষ্টিগোচর হয়, কিন্তু চোখে কোনো আলো ফেলতে না পারে। এই ব্যানারগুলোর কাছে গেলে আপনি দেখবেন যে এর দিকে তাকানো যাচ্ছে না এবং অনেক দূর থেকে দেখা যায়। এত দূর থেকে দেখার তো দরকার নেই। এক্ষেত্রে এলইডি মনিটরের মতো দৃষ্টি সহনীয় করে তুলতে হবে। তাতে খরচ একটু বাড়লেও দৃষ্টির জন্য ক্ষতি এড়ানো যাবে।
এ বিষয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, বছর দেড়েক আগে থেকে ডিজিটাল ব্যানার স্থাপন করা শুরু হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি যে, এগুলোতে দৃষ্টি দূষণ হচ্ছে কি না, বা হলে সেটা কী ধরনের দূষণ ঘটাচ্ছে। সে ব্যাপারে প্রমাণসহ আমাদের কেউ কিছু জানায়নি। ফলে আমরা ভেবেছি যে, শহরের মানুষ এটিকে ভালোভাবে গ্রহণ করেছে। তাই এটাকে বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে দৃষ্টি দূষণের ব্যাপারে কারো যদি কোনো সাজেশন থাকে বা দৃষ্টি দূষণের নির্দিষ্ট কারণ যদি কেউ ব্যাখ্যা করতে পারে তবে বিলবোর্ডগুলোতে সংশোধন আনার চেষ্টা করা হবে বলে জানান এ প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ।
"