প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
আবর্জনার স্তূপের নিচে চাপা পড়ে যাবে ঢাকা!
রাজধানী ঢাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে মানুষের তৈরি ময়লা-আবর্জনাও। প্রতিদিন এই শহরে পাঁচ হাজার টনের বেশি ময়লা তৈরি হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি থেকে বের হলেই দেখা যায় রাস্তাঘাটে ময়লা-আবর্জনা। কলার খোসা, কাগজ, প্লাস্টিকের ব্যাগ অথবা বোতল দেখা যাবে না ঢাকায়Ñএমন রাস্তা বা পাড়া খুব কমই আছে। চলতি পথে খোলা কনটেইনারের উপচেপড়া আবর্জনাকে নাকে হাত দিয়ে পাশ কাটানো অথবা ময়লাবহনকারী ট্রাক থেকে কিছু ওড়ে এসে গায়ে পড়বে কিনাÑসেই উদ্বেগ নিয়েই রাস্তা চলতে হয় বহু পথচারীকে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
ঢাকার রাস্তার এক পথচারী বলেন, ‘খুব বিশ্রী লাগে। এগুলো সহ্য করা যায়? কিন্তু কী করব আমাদের গরিব দেশ। তাই সহ্য করতে হয়।’
মিরপুরের আবাসিক এলাকার গাঘেঁষে সিটি করপোরেশনের ময়লা রাখার ভাগাড়। দিনের বেলাতেই ট্রাক থেকে ময়লা ঢালা হচ্ছে। গন্ধ শুধু রাস্তায় নয়, উঁচু বাড়িঘরেও। ড্রেনের পানি ময়লার কারণে রাস্তায় উপচে পড়েছে। পাশেই একটি ঝিলে এত জমে থাকা ময়লা যেন সেগুলোর ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া যায়। ভ্যানে করে ময়লা সংগ্রহ করে ট্রাকে তুলে দিচ্ছেন পাড়াভিত্তিক আবর্জনা সংগ্রহকারীরা। বিভিন্ন এলাকায় এভাবে জলাশয় বা ঝিলকে পরিণত হতে দেখা যায় ময়লা-আবর্জনার নর্দমায়।
তাদের একজন বলছেন, ‘আমরা মনে করেন বাসায় বাসায় যাই। বালতি কইরা, ঘাড়ে কইরা ময়লা টানি। সব বিল্ডিং থেকে ময়লা আইনা গাড়িতে দিয়া দেই।’
সেটি করতে গিয়ে এই কর্মী আবর্জনা কনটেইনারে ফেলার আগে তা রাস্তাতেই ফেলেছেন। আশপাশে তা থেকে বেছে বেছে বিক্রি করা যাবেÑএমন ময়লা রেখে দিচ্ছে কয়েকজন।
সিটি করপোরেশনের হিসাবমতে, ঢাকা শহরে চার হাজারের মতো এমন পাড়াভিত্তিক কর্মী রয়েছেন; যারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ময়লা সংগ্রহ করেন। এরা সবাই ছোট ছোট বেসরকারি সংস্থা বা আবাসিক সমিতিগুলো দ্বারা পরিচালিত।
দিনের বেলাতেই তারা ময়লা সংগ্রহ করছেন। যদিও সেটি হওয়ার কথা সন্ধ্যায়। কিন্তু দিনের বেলাতেই হয়। ঢাকার বাসাবাড়িতে তৈরি হওয়া দৈনিক পাঁচ হাজার টনের বেশি বর্জ্য সংগ্রহ করে দুই সিটি করপোরেশন। কিন্তু তৈরি হয় আরো বেশি যার হিসাব তাদের কাছে নেই। তারা ধারণা করছেন, শহরে তৈরি ময়লার ৮০ শতাংশই তারা পরিষ্কার করেন। কিন্তু ঢাকায় বাড়ি থেকে বের হলেই শহরকে এত আবর্জনাময় মনে হয় কেন?
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এম এ রাজাক বলেন, ‘ঢাকার কিছু অদ্ভুত ব্যাপার আছে। এখানে মেইন রোড, লেন, বাইলেন যেকোনো রাস্তা বলেন সবখানে দোকান, মুদিদোকান, হকার, চা বিক্রেতা, ফল বিক্রেতা, কাঁচাবাজার রয়েছে। তারা সারা দিন ধরে রাস্তায় ময়লা ফেলতে থাকেন। বাসাবাড়ি থেকেও ফেলা হচ্ছে। সিটি করপোরেশন সকালে একবার ময়লা পরিষ্কার করে। তারপরই সারা দিন ধরে ময়লা ফেললে শহরকে তো ময়লা লাগবেই।’ কিন্তু ঢাকায় বর্জ্য সংগ্রহ, পরিবহন ও তা ফেলার ক্ষেত্রেও ব্যবস্থাপনার বিষয়টি ঠিকভাবে হচ্ছে না।
"