তহিদুল ইসলাম, জাবি

  ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

জাবিতে ব্যাঙের ছাতার মতো ‘অবৈধ’ দোকান

উচ্ছেদে উদ্যোগ নেই প্রশাসনের

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাঙের ছাতার মতো যত্রতত্র ‘অবৈধ’ দোকানপাট গড়ে উঠছে। বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে এ রকম অনুমোদনহীন প্রায় শতাধিক অস্থায়ী দোকান, টঙ দোকান, ভ্রাম্যমাণ ও মৌসমি দোকান রয়েছে। তবে অনুমোদনহীন হলেও অদৃশ্য কারণে এসব দোকান উচ্ছেদ করতে পারছে না প্রশাসন। অভিযোগ আছে, উচ্ছেদ করতে অনীহা আছে খোদ প্রশাসনেরই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা গেটে ২৩টি, প্রধান ফটকে ২৬টি ও বিশ মাইল গেটে ৯৭টি এস্টেট অনুমোদিত দোকান রয়েছে। এস্টেট অনুমোদিত টঙ দোকান রয়েছে জয় বাংলা গেটে আটটি, টারজান পয়েন্টে ১৬টি, বিশ মাইল গেটে একটি, রাঙামাটিতে ১২টি, সুপারি তলায় ১৪টি, জেনারেটর কলাবাগানে ১৭টি, গেরুয়ার ঢালে তিনটি, ব্যাংকের পাশে একটি, নতুন জীববিজ্ঞান অনুষদের পাশে দুটি ও মুন্নি চত্বরে একটি। এ ছাড়া শহীদ সালাম-বরকত হল, আ ফ ম কামাল উদ্দিন হল, মীর মশাররফ হোসেন হল, মওলানা ভাসানী হল, শহীদ রফিক-জব্বার হল ও প্রশাসন হল সংলগ্ন কিছু দোকান বরাদ্দ দিয়েছে।

এর বাহিরে সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় শতাধিক দোকান গড়ে উঠেছে; যার কোনো অনুমোদন নেই। এসব ক্ষেত্রে কোথাও কোথাও শিক্ষক-কর্মকর্তারা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা দোকান বসাতে সাহায্য করেছেন। তবে দোকান বসানোর জন্য এস্টেট অফিস থেকে অনুমোদন নেওয়ার নিয়ম থাকলেও, তারা নিয়ম না মেনেই দোকান বসিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টার সংলগ্ন সবচেয়ে বেশি অবৈধ দোকান রয়েছে। এখানে পিঠা, চটপটি, চা, পোশাক বিক্রির প্রায় ৫০টি দোকান রয়েছে। তবে এসব দোকান বসানোর জন্য অনুমতি নেয়নি দোকানিরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবন সংলগ্ন মুরাদ চত্বরে ছয়টি দোকান রয়েছে। তবে এসব দোকান বসানোর জন্য এস্টেট অফিস থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এস্টেট অফিস বলছে এখানকার কয়েকজন শিক্ষকের কথায় দোকানিরা দোকান বসিয়েছেন। এভাবে বিশ মাইলের যাত্রী ছাউনির পাশে একটি, প্রধান ফটকে ১৬টি, লাইব্রেরির পাশে একটি, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের পাশে তিনটি ও একটি নির্মাণাধীন, সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের পূর্বপাশে দুটি, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ ভবনের সামনে একটি দোকান অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে। শহীদ রফিক-জব্বার হলের পাশেও রয়েছে কয়েকটি অনুমোদনহীন দোকান। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আরো কিছু অস্থায়ী ও ভ্রাম্যমাণ চটপটি, পিঠা, আচার প্রভৃতির দোকান রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে তারা কেউই অনুমোদন নেননি। এমনকি অনুমোদন না থাকায় এখান থেকে কোন ভাড়া পাচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবৈধ দোকান নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। প্রায়ই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে নতুন করে অননুমোদিত দোকান বসানো হচ্ছে। প্রশাসন একদিকে যেমন নতুন অবৈধ দোকান বসানো ঠেকাতে পারছে না, তেমনি ব্যর্থ পুরাতন অবৈধ দোকান উচ্ছেদেও। এসব দোকান বসানোয় একদিকে যেমন আইন মানা হচ্ছে না, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয় হারাচ্ছে ভাড়া। তার ওপর এসব দোকান অননুমোদিত হওয়ায় দোকানের ওপর প্রশাসনের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এসব অবৈধ দোকানের বিরুদ্ধে রয়েছে নানান অভিযোগ। দোকানিরা অনেক সময় ইচ্ছেমতো দাম রাখেন। খাবার তৈরি করেন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। তাছাড়া যত্রতত্র দোকান গড়ে ওঠায় নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। অনিয়ন্ত্রিতভাবে দোকান বাড়ায় ক্ষোভ বাড়ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে। সাবেক শিক্ষার্থীদের অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এর বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। শারমিন সিদ্দিকী নামের একজনের মন্তব্য, এটা কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটাতো এখন বাজারে পরিণত হয়েছে। আর প্রশাসন চোখ বন্ধ করে আছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেটের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নুরুল আমিন বলেন, সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে অসংখ্য দোকান অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে। তবে অনুমোদনহীন বলে এর সঠিক সংখ্যা আমাদের জানা নেই। অনেকে ছাত্রদের শেল্টারে দোকান বসিয়েছে। এসব দোকান যখনই উঠিয়ে দিতে যায়, তখনই ছাত্র নেতারা বাধা দেয়। আর অবৈধ দোকান অপসারণের দায়িত্ব নিরাপত্তা শাখার। আমরা নিরাপত্তা শাখাকে তাগিদ দিয়েছি এসব দোকান উচ্ছেদের জন্য। প্রশাসনকেও ফাইল দিয়েছি অবৈধ দোকান ভেঙে ফেলার জন্য, তবে কাজ হচ্ছে না। তবে নিরাপত্তা শাখা থেকে বলা হচ্ছে এস্টেট অফিস থেকে দোকান উচ্ছেদের বিষয়ে তাদেরকে লিখিত কিংবা মৌখিক কোনভাবেই জানানো হয়নি। প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দোকানপাট এস্টেট অফিসের অধীনে। তারা আমাদের কী করে তাগিদ দেয়। তারা কোনো চিঠি দেয়নি। মৌখিকভাবেও বলা হয়নি। কত দোকান বসেছে তার হিসাব তারা দিতে পারবে কি না, আল্লাহ্ মালুম। কারণ, নামে-বেনামে বহু দোকান দেওয়া হয়েছে তাদের থেকে। বরং তারা যেকোনো দিন ডাকুক তাদের এস্টেট শাখাকে সহায়তা দেওয়ার জন্যে। এস্টেট যদি দোকান উচ্ছেদ করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়, তাদেরকে কেউ যেন বাধা দিতে না পারে নিরাপত্তা শাখা সেজন্য ২৪ ঘণ্টা প্রস্তুত।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হক বলেন, আমি এ বিষয়ে জানি না। আগে খোঁজ-খবর নেই, তারপর মন্তব্য করব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist