রাজশাহী প্রতিনিধি
পুলিশ বক্স ও হাসপাতাল কর্মকর্তাদের যোগসাজশ
রামেকে মাইক্রোবাস সিন্ডিকেট গুনতে হয় পাঁচ গুণ ভাড়া
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মাইক্রোবাস সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন রোগীর স্বজনরা। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ বক্স ও হাসপাতাল প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই চলছে এই সিন্ডিকেট ব্যবসা। যে কারণেই তারা নীরব ভূমিকাতেই শুধু নয়, রোগী মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাইক্রোবাস সিন্ডিকেটের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে তথ্য। রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে আদায় করা হয় মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া, যা স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ গুণ।
জানা গেছে, যখন আপনজনের লাশ নিয়ে স্বজনরা বিপাকে, শোকে আত্মহারা, কথা বলার মতো শক্তি বা ভাষা পর্যন্ত থাকে না, বাড়ি ফেরার জন্য মাইক্রোবাস ভাড়া করতে আসেন। ঠিক সেসময়ই শোকাহত পরিবারের ওপর ইচ্ছামতো ভাড়ার বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে মাইক্রোবাস ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। দূর-দূরান্ত থেকে আসা অসহায় অভিভাবকদের হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। আবার ন্যায্যমূল্যে বাহির থেকে মাইক্রোবাস আনলেও সেই গাড়িতে লাশ তুলতে দেয় না এই সিন্ডিকেট। এ কারণে বাধ্য হয়ে গাড়ি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কর্তৃক পাঁচ থেকে দশ গুণ বেশি ভাড়া মেনে নিতে হয় রোঘরি স্বজনদের। তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতাল পুলিশ বক্সের সহায়তা চাইলেও এ বিষয়ে না কি তাদের কিছু করার নেই বলেও সাফ জানিয়ে দেন।
সম্প্রতি রামেক হাসপাতালের এই লাশ বহনকারী মাইক্রোবাস ব্যবসায়ীরা ভাড়া নিয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সিন্ডিকেটের বাইরে কোনো মাইক্রোবাস বা সিএনজি গাড়ি হাসপাতালে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। জরুরিভিত্তিতে বহিরাগত কোনো গাড়ি হাসপাতালে প্রবেশ করলে গাড়ির চালককে মারপিট করে বের করে দেওয়া হয় এমন অভিযোগ নিত্যদিনের। হাসপাতালের মূল ফটকের ভেতরে জরুরি বিভাগের সামনে সিরিয়াল অনুযায়ী মাইক্রোবাস রাখা থাকে। এছাড়াও লক্ষ্মীপুর মোড় হতে রামেক হাসপাতালের মূল ফটক পর্যন্ত এ সকল লাশবহনকারী গাড়ি অর্ধেক রাস্তা দখল করে রাখা থাকে। এসব গাড়ির বেশির ভাগই ত্রুটিপূর্ণ ও ফিটনেসবিহীন। তার পরও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকায় থাকে। এ ব্যাপারে হাসপাতাল বক্স পুলিশের স্বচ্ছতা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে রোগীর অভিভাবকদের মনে।
এ বিষয়ে রাজশাহীর পুঠিয়া সদরের বিজিবি সদস্য মিঠু বলেন, তার পিতা শিক্ষক শাহাদৎ হোসাইন গত সোমবার (২৯ জানুয়ারি) সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলে তিনি মাইক্রো ভাড়া করতে এসেই পড়েন বিপাকে। লাশ নিয়ে যাওয়ার কোনো তথ্য না বললেও রেজিস্ট্রার সবকিছু বলে দিচ্ছেন মাইক্রোস সিন্ডিকেটের সদস্যরা। যা শুনে তিনি চরম দুঃখের মধ্যেও আশ্চার্য হন। তবে ৩০ কিমি লাশ বহনের ভাড়া শুনেই যেন বাকরুদ্ধ হয়ে যান তিনি। এই রাস্তার জন্য প্রতিনিয়তই আটশ থেকে বারোশ টাকায় অন্য মাইক্রোবাস চলাচল করলেও হাসপাতাল সিন্ডিকেটের দাবি পাঁচ হাজার দুইশ টাকা। যেন সত্যিই মগের মুল্লুক। এ বিষয়টি নিয়ে হাসপাতাল পুলিশ বক্স্রের সহায়তা চাইতে গেলে দায়িত্বরত কনস্টেবল মোতাহার বলেন, আমাদের কথা মাইক্রোবাস চালকরা শোনে না। স্যার থাকলে হয়তো চেষ্টা করে দেখা যেত। তারা কোথায় জানতে চাইলে বলেন, গতকাল রাতে বাড়ি গেছেন কখোন আসবেন জানি না।
আকরাম নামে এক রোগীর অভিভাবক বলেন, উপশহরে একটি লাশ নিয়ে গেল ৫ হাজার ৩০০ টাকায়। যার রাস্তা পথ সর্বোচ্চ ২-৩ কিমি দুর্গাপুরের আমগাছি এলাকার মিন্টু বলেন, তারাও বাধ্য হয়ে সিন্ডিকেটের দাবি মোতাবেক ৫ হাজার ৩০০ টাকায় লাশ নিয়ে যাওয়ার জন্য মাইক্রো ঠিক করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে হাসপাকাল পুলিশ বক্সের ইনচার্জ আতাউর রহমান বলেন, এ বিষয়ে আমাদের করার কিছুই নেই। পরিচালকই ভালো জানেন।
এ বিষয়ে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিলুর রহমানের সাথে মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) বিকালে সেলফোনের মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি সদর) ইফতে খায়ের আলম বলেন, ‘ আমার জানা ছিল না। কেউ কখনো অভিযোগও করেনি। এখন জানলাম, মানবিক বিবেচনায় খুবই গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখা হবে।’
"