reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৯ আগস্ট, ২০১৬

ধর্ম

ইসলামের শিক্ষা ও নীতিমালায় রয়েছে শান্তির দিশা

শাহীন হাসনাত

মানুষ তার ইচ্ছার দাস। মানুষের ভেতরে কর্মস্পৃহা ও ভালো কাজের উদ্যোগ নেওয়ার শক্তি যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে এর উল্টোটাও। তবে এটা সত্য যে, মানুষ চাইলে তার নিজের ভেতরটাকে নৈতিকতার গুণে গড়ে তুলতে পারে। এটা খুব কঠিন কোনো কাজ নয়। নিজের চিন্তা-চেতনা, মূল্যবোধ ও বিশ্বাসে এমনকি তার আচার-আচরণে যদি তার গুণ পরিলক্ষিত হয় তাহলে তা মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক উন্নতির ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম।

এ গুণ একজন মানুষের ইহকালীন ও পরকালীন সৌভাগ্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। নৈতিক গুণাবলির গুরুত্ব এত বেশি যে, একজন মানুষ যদি সব জ্ঞান ও বিজ্ঞান অর্জন করে এমনকি প্রকৃতির সব শক্তির ওপর নিজের আধিপত্য বিস্তারও করে তাতে কোনো লাভ নেই, যদি না ওই লোক নিজের ভেতরের শক্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। নিজের মন বা প্রবৃত্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে না পারলে প্রকৃত উন্নতি ও সৌভাগ্য অর্জন কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

জ্ঞান, শিল্প ও প্রযুক্তিগত সব উন্নয়ন সত্ত্বেও আচরণগত সংস্কার করা না হলে ওই উন্নয়ন হবে সেই প্রাসাদের মতো; যা গড়া হয়েছে সুপ্ত আগ্নেয়গিরিময় পাহাড়ের ওপর। সুতরাং মানুষের নৈতিক এবং আত্মিক প্রশিক্ষণ এককথায় মানুষ সৃষ্টির পরিকল্পনা গ্রহণ প্রত্যেক সমাজের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

বৈশ্বিক ব্যবস্থায় আজ যে অস্থিরতা, অশান্তি, গোলযোগ, বিচ্ছৃঙ্খলা, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, মারামারি, হানাহানি, অরাজকতাÑ সবই ওই নৈতিক এবং আত্মিক প্রশিক্ষণহীনতা থেকেই উৎসারিত। বর্তমান বিশ্ব শিল্প ও জ্ঞানের ভুবনে অনেক উন্নয়ন অর্জন করেছে। এগুলোর সাহায্যে তারা মানুষের পার্থিব জগতের বিচিত্র চাহিদা মেটাতেও সক্ষম হয়েছে। কিন্তু মানবীয় নীতিনৈতিকতার দৃষ্টিতে তাকালে দেখা যাবে এতকিছুর পরও মানুষ পতনের অতল গহ্বরে পড়ে আছে কিংবা সেদিকেই অগ্রসর হয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোনো শান্তি নেই।

এমতাবস্থায় শান্তি প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে মানুষের নৈতিকতাবোধ জাগ্রত করার পাশাপাশি ধর্মচর্চার পথে ফিরে আসতে হবে। কারণ ধর্মে বলা হয়েছে, মানুষের আত্মার ওপর নৈতিকতা কেমন প্রভাব রাখে। এটা আইন করে কিংবা জোর-জবরদস্তি করে প্রয়োগের বিষয় নয়।

ইসলামি স্কলারদের মতে, নিঃসন্দেহে মানুষের মনোদৈহিক সুস্থতার জন্য ইসলাম ধর্মে রয়েছে পরিপূর্ণ এবং যথার্থ দিকনির্দেশনা। আধুনিক গবেষণাতেও দেখা গেছে জ্ঞানীগুণীরা বলতে বাধ্য হয়েছেন, ধর্মীয় আচার-আচরণ, নৈতিকতা এবং বোধ ও বিশ্বাসের সঙ্গে মানুষের মনোদৈহিক সুস্থতার সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে, ইসলাম ধর্মে এমনসব হুকুম-আহকাম এবং নীতিমালা রয়েছে, যেগুলো মানুষের আত্মার প্রশান্তি নিশ্চিত করে এবং শারীরিক সুস্থতাও বজায় রাখে।

সামগ্রিকভাবে ইসলামি নীতিমালাকে তিনটি পর্যায়ে শ্রেণিবিন্যস্ত করা যায়। এগুলো হলো- এক. বিশ্বাসের মূলনীতি, দুই. আদেশ ও তিন. নৈতিকতা। এই তিনটি বিভাগ মানুষের স্বভাব প্রকৃতির সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ। এখন ধর্মীয় আদেশ যদি বলেÑ পবিত্র খাবার খাও এবং দূষিত খাবার পরিহার করো, তাহলে ধরে নিতে হবে মানুষের স্বাভাবিক চাহিদার সঙ্গে এই আদেশই যথোপযুক্ত এবং সেদিকে লক্ষ্য রেখেই ইসলাম এভাবে আদেশ দিয়েছে। কিংবা যদি বলেÑ তোমার স্রষ্টা আল্লাহতায়ালার সামনে বিনয়ী ও অনুগত হও এবং তাঁর ইবাদত কর, তাহলে বুঝতে হবে অবশ্যই মানবীয় প্রকৃতির সঙ্গে তার গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

একইভাবে সমজাতির প্রতি সদয় হওয়া, বাবা-মায়ের সেবা-যতœ করা, আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, মিথ্যা পরিহার করা, গীবত না করা, অহমিকা প্রদর্শন না করা ইত্যাদিসহ এ ধরনের অন্যান্য নৈতিক অবক্ষয়মূলক প্রবণতা থেকে যদি বিরত থাকার কথা বলা হয়, তাহলে বুঝতে হবে মানুষের স্বভাব প্রকৃতির সঙ্গে এটাই সামঞ্জস্যপূর্ণ। আসলে ধর্মের অর্থই হলোÑযৌক্তিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক ঔচিত্যবোধ ও বিশ্বাসগুলোর সঙ্গে সামগ্রিকভাবে সম্পৃক্ত থাকা।

কেননা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি, তাদের স্বাভাবিক চাহিদাগুলো মেটানোর জন্য যা যা দরকার সেগুলোর ভিত্তিমূলেই ধর্ম প্রতিষ্ঠিত। ধর্মীয় মূল্যবোধ চর্চাই হলো, মানুষের আত্মবিশ্বাসের বিকাশ নিজস্ব মেধার বিকাশসহ মানসিক সুস্থতার মৌলিক চালিকাশক্তি। তাই মানুষের সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন ও উন্নয়নের জন্য যা কিছু ক্ষতিকরÑ চাই অল্প সময়ের জন্যে হোক কিংবা দীর্ঘমেয়াদের জন্য, সে সবই হারাম বলে ঘোষণা করেছে ইসলাম। আর যেসব জিনিস উন্নয়ন ও বিকাশের অনুকূল সে সবই মানুষের জন্য হালাল ঘোষণা করা হয়েছে। এভাবেই ইসলামের শিক্ষা ও নীতিমালাগুলো মানুষের সব মনোদৈহিক সুস্থতা নিশ্চিত করেছে।

মানবজীবনে নৈতিকতার গুরুত্বটা কোথায়Ñ এমন প্রশ্ন মনে জাগতে পারে। এর জবাব হলো, মানুষের ভেতরে ভালো এবং মন্দের লড়াই নিরন্তর চলতে থাকে। মনের কামনা-বাসনা চরিতার্থ করতে মন্দশক্তি সবসময় চেষ্টা করে মানুষকে বিপথে টেনে নিতে। সে সময়নীতি নৈতিকতার চিন্তা শুভবোধ হয়ে সারাক্ষণ মন্দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকে। এভাবেই নৈতিক গুণগুলো মানুষকে প্রবৃত্তির বিপরীত স্রোত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। মানুষকে কখনো বিপথগামী হতে দেখলে নৈতিকতা অশনিসংকেত হিসেবে সতর্ক করে তোলে। মূলত এই শক্তিশালী নৈতিকতাই হলো সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহতায়ালার প্রতি বিশ্বাস, যেটাকে ঈমান বলা হয়। কেবল এই ঈমানই পারে মানব গঠনে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে এবং মানব অস্তিত্বের ওপর সমূহ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে।

অপরদিকে নৈতিকতার পূর্ণতা তখনই বিশ্বাসযোগ্যতা লাভ করে যখন তা অর্জিত হয় আল্লাহর প্রতি দ্বন্দ্বহীন ইমানের ভিত্তিতে। আর যে মানুষটির নৈতিকতার ভিত্তি এমন চিন্তা ও বিশ্বাসের ওপর প্রতিষ্ঠিত। সে কখনো কোনো মন্দ কাজের সঙ্গে নিজেকে জড়াতে পারে না। এমন নৈতিক চেতনা গড়ে উঠবে শুধু আল্লাহর হুকুম পালন তথা ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে। এমন ইবাদতের মানে হলোÑ সবক্ষেত্রে আত্মনিবেদিত হওয়া, আল্লাহর হুকুমের সামনে নিজেকে বিলীন করে দেওয়া।

বলা বাহুল্য, পৃথিবীর ইতিহাসে যুগে যুগে যত নবী-রসুল পৃথিবীতে এসেছেন, তাদের মৌলিকতম শিক্ষাই ছিল আল্লাহর প্রতি দৃঢ় ঈমান এবং তার ইবাদত করা। এর বাইরে অন্য কোনো কর্মসূচি তাদের ছিল না। এখন কেউ যদি সেই শাশ্বত শিক্ষায় ভিন্ন কিছু যোগ করে, সেটা অবশ্যই ইসলাম নয়; ভিন্ন কিছু।

লেখক : ধর্মীয় গবেষক ও শিক্ষক

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist