সাহিদ রহমান অরিন
বোরিং বোলিং!
চলমান দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বাংলাদেশ দলের বোলিং পারফরমেন্স শুরু থেকেই ছিল আতশী কাচের নিচে। টাইগারদের ঘুনে ধরা সেই বোলিং-আপ নিয়ে দেশজুড়ে এবার বয়ে যাচ্ছে সমালোচনার ঝড় ।
টেস্ট সিরিজে টানা দুই ম্যাচে স্বাগতিকদের পৌনে পাঁচশর বেশি রান উপহার দিয়েছে কোর্টনিওয়ালসের শিষ্যরা। ব্লুমফন্টেইনে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় টেস্টে তো ‘দানবীর’ হয়ে উঠেছিলেন টাইগার বোলাররা। স্বাগতিকদের চার ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরির বিপরীতে বল হাতে শতকের মাইকফলক স্পর্শ করেন তাইজুল ইসলাম (১৪৫), শুভাশিষ রায় (১১৮), রুবেল হোসেন (১১৩) এবং মুস্তাফিজুর রহমান (১১৩)।
ঐ সিরিজের পর দলে যোগ দেন ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। বিশ্রাম কাটিয়ে ফেরেন সেরা তারকা সাকিব আল হাসানও। সিনিয়র দুই ক্রিকেটারকে পেয়ে উজ্জীবিত হয়েছিল গোটা দল। টেস্টের হতাশা ভুলে ওয়ানডেতে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন টাইগাররা।
কিন্তু কিসের কী? ৫০ ওভারের ক্রিকেটে তো আরো ডরাডুবি মাশরাফিবাহিনীর। ব্যাটসম্যানরা তুলনামূলক ভালো করলেও একের পর এক ম্যাচে দেশকে লজ্জা উপহার দিচ্ছেন বোলাররা ।
১৫ জুন ২০১৭। আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমি ফাইনাল। স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চলমান ওয়ানডে সিরিজের আগে সেটিই ছিল বাংলাদেশের শেষ একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ। ঐদিন ভারতীয় ওপেনার শিখর ধাওয়ান আউট হবার পর ১৭৮ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন আরেক ওপেনার রোহিত শর্মা ও অধিনায়ক বিরাট কোহলি। এর ঠিক তিন মাস পর গত ১৫ অক্টোবর কিম্বার্লির ম্যাচটি দিয়ে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরে বাংলাদেশ। টাইগারদের ২৭৮ রানের জবাবে প্রথম ওয়ানডেতে কোনো উইকেট না খুইয়েই ম্যাচ জিতে নেয় প্রোটিয়ারা। এবার ২৮২ রানের রেকর্ড গড়ে অবিচ্ছিন্ন থাকেন দুই ওপেনার কুইন্টন ডি কক ও হাশিম আমলা। কাল পার্লে অনুষ্ঠিত সিরিজ বাঁচিয়ে রাখার ম্যাচে আবারো বিবর্ণ সেই বোলাররা। ব্যক্তিগত ৪৬ রানে আউট হবার আগে আমলার সাথে উদ্বোধনী জুটিতে ৯০ রান গড়েন ডি কক।
১৫ জুন থেকে ১৮ অক্টোবর। ধাওয়ান থেকে ডি কক। ৯৫ দিন পর প্রতিপক্ষকে ৫৫০ রান উপহার দিয়ে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অবশেষে কোনো উইকেট পায় বাংলাদেশ। ৪৬ বছরের ওয়ানডে ইতিহাসে এমন ‘জঘন্য’ রেকর্ড আর কোনো দেশের আছে কিনা সেটা জানতে হলে ঘাটতে হতো পরিসংখ্যান। কিন্তু এবি ডি ভিলিয়ার্স সেই সুযোগটা দিলেন কই? ১০৪ বলে ১৭৬ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলে সবার মনযোগ যে তার দিকে ঘুরিয়ে নেন ‘মিস্টার থ্রি সিক্সটি ডিগ্রি’! ১৫ বাউন্ডারি আর ৭ ওভার বাউন্ডারিতে বাংলাদেশের মুমূর্ষু বোলিং ডিপার্টমেন্টকে কচুকাটা করেন এবিডি। আর ছয়-সাতটা বল খেলতে পারলে হয়তো প্রথম আফ্রিকান হিসেবে দ্বি-শতকেরও রেকর্ড গড়ে ফেলতেন তিনি। কিন্তু ৪৮তম ওভারে রুবেলের বলে সাব্বিরের হাতে ধরা পড়লে বিভীষিকাময় দু’ঘন্টা শেষ হয় টাইগার বোলারদের।
তবে কাল থামলেও সামনের ম্যাচে যে এখান থেকেই শুরু করবেন- ফেরার সময় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই চরণ ‘শেষ হইয়াও হইলো শেষ’ এর মতোই বার্তা দিয়ে গেলেন আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। মুমূর্ষু টাইগার বোলারদের এখন যে অবস্থা তাতে সফরটা শেষ হলেই যেন তারা হাফ ছেড়ে বাঁচে!
"