ক্রীড়া ডেস্ক
ক্যারিবীয়দের করুণ পরিণতি
২০১৯ বিশ্বকাপে সরাসরি খেলতে হলে এ বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আইসিসি ওয়ানডে র্যাংকিংয়ের সেটা আটে থাকা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা ছিল না ওয়েস্ট ইন্ডিজের। সেজন্য স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ন্যূনতম ৪-০ ব্যবধানে সিরিজ জিততে হতো ক্রিস গেইল-মারলন স্যামুয়েলসদের। কিন্তু ৫ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতেই স্বাগতিকদের কাছে ৭ উইকেটে হেরে বসেছে। তাই পরবর্তী বিশ্বকাপে সরাসরি অংশগ্রহণের স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিতে হলো দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের।
বিশ্বকাপ শঙ্কায় ছিল র্যাংকিংয়ে আট নাম্বারে থাকা তরুণ প্রজন্মের শ্রীলঙ্কাও। ওল্ড ট্রাফোর্ডে অনুষ্ঠিত ম্যাচটিকে ঘিরে লঙ্কানদের আগ্রহই সবচেয়ে বেশি ছিল। ক্যারিবীয়দের যাতে অমঙ্গল হয় সেটাই প্রার্থনা ছিল লঙ্কানদের। ক্যারিবীয়রা হেরে যাওয়ায় বাসনা পূরণ হয়েছে ১৯৯৬ বিশ্বকাপজয়ীদের।
স্বাগতিক হিসেবে ইংল্যান্ড সরাসরি বিশ্বকাপে অংশ নেবে এটা আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল। সরাসরি মূলপর্বে অংশ নেওয়ার জন্য লড়তে হয়েছে অন্যদের। তাতে সফল হয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড এবং বাংলাদেশ। সপ্তম ও শেষ দল হিসেবে সরাসরি তাদের সঙ্গে ইংল্যান্ডের বিমানে চড়বে শ্রীলংকাও।
এই মুহুর্তে আইসিসি ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে ক্যারিবীয়দের রেটিং পয়েন্ট ৭৮। তাদের চেয়ে ৮ পয়েন্ট এগিয়ে আছে লঙ্কানরা। কাজেই সিরিজের বাকি ৪টা ম্যাচ ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতলেও কাজ হবে না। দশ দলের বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে হলে এখন বাছাইপর্ব পেড়িতে আসতে হবে একসময় দাপটের সাথে ক্রিকেটবিশ্ব শাসন করা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।
১৯৭৫ এবং ১৯৭৯ সালে বিশ্বকাপের প্রথম দুই আসরেই শিরোপা জিতেছিল উত্তর আমেরিকার ক্যারিবিয়ান সাগরপাড়ের দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোকে নিয়ে গড়া দলটি। ক্রিকেটে নিজেদের অবিসংবাদিত সেরা দল হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করেছিল তারা। ১৯৮৩ সালে হ্যাটট্রিক বিশ্বকাপ জয়ের খুব কাছাকাছি গিয়েও ফাইনালে কপিল দেবের ভারতের কাছে অঘটনের শিকার হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপর থেকেই ডুবতে শুরু করে ক্যারিবীয় ক্রিকেটের সূর্য।
১৯৮৭ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশ্বকাপের আরো আটটি আসর। আসরগুলোতে শিরোপা জেতা তো দূরের কথা, ১৯৯৬ বিশ্বকাপ ব্যতীত কোনো আসরের সেমিফাইনালেও পৌঁছাতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এবার তো তাদের বিশ্বকাপে খেলা নিয়েই দেখা দিয়েছে সংশয়।
অবশ্য ওয়ানডেতে দলের অবস্থা নাকাল হলেও টি-টোয়েন্টির সেরা দল ওয়েস্ট ইন্ডিজই। ৬ আসরের দুটিতেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা। গত বছর ভারতে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপে অবিশ্বাস্যভাবে শিরোপা জিতে নেয় ক্যারিবীয়রা। ওই শিরোপাটাই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের পুনর্জাগরণের স্বপ্ন দেখিয়েছিল। কিন্তু সেটা দিবা স্বপ্ন হয়েই থাকল। ক্রিকেটের উন্নয়ন হবে কী, উল্টো বোর্ডের সঙ্গে খেলোয়াড়দের রেষারেষি আর বেতন কাঠামো নিয়ে দ্বন্দ্বে একরকম পঙ্গু হয়ে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওয়ানডে বিশ্বকাপে সরাসরি অংশ করতে না পারা যেন এসবকিছুর করুণ পরিণিতি।
২০১৮ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত হবে বাছাইপর্ব। সেখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গী র্যাংকিংয়ের নিচের সারির তিন দল জিম্বাবুয়ে, আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ড।
"