ক্রীড়া প্রতিবেদক
‘পারফরম্যান্স সবকিছুর ওষুধ’
দল থেকে অনেকবার বাদ পড়েছেন। আবার ঢুকেছেনও। তবে নাসির হোসেনের এবারের ফেরাটা হলো ‘অন্যরকম’। একটু লম্বা বিরতি দিয়েই প্রত্যাবর্তন হলো তার। দুই বছর টেস্ট দলে ফিরেছেন ‘ফিনিশার’ খ্যাত এই তারকা। স্বাভাবিকভাবেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন তিনি। ফেরার এই উচ্ছ্বাসটা চাপা রাখেননি তিনি।
স্বভাবসুলভ রসিক মানুষ নাসির। কিন্তু কাল সংবাদ সম্মেলনে হাজির হলেন গুরু গম্ভীর চেহারা নিয়ে। তবে সেটার স্থায়িত্ব বেশিক্ষণের নয়। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে এসেছেন ২৫ বছর বয়সী অলরাউন্ডার। সংবাদ সম্মেলন কক্ষ ফাটিয়ে তুললেন কৌতুকপ্রবণ নাসির।
দুই পর দলে ফেরা। আগের সেই নাসির এবং বর্তমান নাসিরের পার্থক্যটা কোথায় জানতে চাইলে টাইগার অলরাউন্ডারের উত্তর, ‘আগে নাসিরের গোঁফ ছিল না, এখন আছে।’ কোনো খেলোয়াড়ের মুখ থেকে যখন এমন কথা বেড় হয় তখন হাসিতে পেট ব্যথা হওয়ার উপক্রম। হাসির রেশ যেন থামতেই চাইছিল না প্রচারমাধ্যম কর্মীদের।
সবার হাসি থামানোর পরই খেলোয়াড়সুলভ জবাব নাসিরের, ‘পার্থক্য তেমন কিছু না। বাদ পড়েছি...খারাপ করলে একজন খেলোয়াড় দলে থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। আবার এটাও সত্য, ভালো খেললে আবার এখানে আসা যাবে। বাদ পড়ার পর থেকেই চেষ্টা করেছি ভালো খেলতে। ক্যারিয়ারে অনেক ভুল ছিল। চাইলে আরও লম্বা ইনিংস খেলতে পারতাম। একটু ক্যাজুয়াল ছিলাম। এখন চেষ্টা করি যত বেশি সম্ভব উইকেটে থেকে ব্যাটিং করার।’
ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দল থেকে আগেই ছিটকে গেছেন নাসির। আর টেস্টের জায়গা হারিয়েছেন আরো আগে। ধারাবাহিক জবাবটা ব্যাট হাতেই দিয়েছেন এই অলরাউন্ডার। ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের বন্যা বইয়ে দিয়েছেন তিনি। সবশেষে জাতীয় লিগে তাঁর গড় ১০৯.৩৩! মোট রান ৩২৮ রান। প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে হাঁকিয়েছেন ডাবল সেঞ্চুরি। ঢাকা লিগের গত আসরেও তার ব্যাটিং গড় ছিল ২৪০! এবং লিগে মোট রান ৪৮০ রান। কদিন আগে চট্টগ্রামে প্রস্তুতি ম্যাচেও হেসেছে তার ব্যাট। করেছেন অর্ধশতক।
সবমিলিয়ে ব্যাটিংয়ে চেনারূপেই ফিরলেন নাসির। এসবকিছুর সম্ভাব্য সেরা পুরস্কার হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে ডাক পেয়েছেন নাসির। কাল টাইগার অলরাউন্ডার নিজেও বললেন সেই কথা, ‘পারফরম্যান্সই এখানে শেষ কথা। এটা ছাড়া কোথাও টিকে থাকার সুযোগ নেই। পারফরম্যান্স হচ্ছে সবকিছুর ওষুধ। চেষ্টা করব ভালো খেলতে। সত্য কথা বলতে সামনে যে টেস্ট আছে, এসব নিয়ে চিন্তা করছি না। জানি, যদি এখানে ভালো করতে পারি, সুযোগ অবশ্যই আসবে। যদি ভালো না খেলতে পারি, সুযোগগুলো আসবে না।’
অবশ্য দলে থাকুক বা না থাকুক। নাসির বরাবরই আলোচনায়। ‘জনতার হিরো’ বলেও ইতোপূর্বে আখ্যা দেওয়া হয়েছে তাকে। ভক্তদের এই ভালোবাসা ছুঁয়ে যায় নাসিরকে, ‘আমি খেললে নিউজে থাকি, না খেললেও থাকি! এর যত ইতিবাচক দিক আছে, নেতিবাচক দিকও আছে। এখন যদি ভালো খেলি, ভক্তদের ভালো লাগবে। আর ভালো না খেললে সেটি নেতিবাচকভাবে হয়ে যাবে। চাপ তো একটু থাকবেই। বাংলাদেশের মানুষ আমাকে ভালোবাসে। তাদের কিছু দিতে হবে। চেষ্টা করব সব সময় ভালো খেলতে।’
কিন্তু নাসির শেষ পর্যন্ত ব্যাট হাতে ধরার সুযোগ পাবেন তো? কালই যে মুমিনুল হক দলে ঢুকে পড়েছেন। দলে আছেন সাব্বির, সৌম্য, ইমরুলদের মতো ব্যাটসম্যানরা। মিডল অর্ডারে সাকিব-মুশফিকদের মতো নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যা। একাদশ নির্বাচনে তাই মাথার ঘাম পায়েই ফেলতে হবে নির্বাচকদের। তবে নাসির বুঝতে পারছেন টপ অর্ডারে ব্যাটিংয়ের সুযোগ নেই তার, ‘আমি যতটুকু বুঝছি, যদি খেলার সুযোগ হয় তাহলে ৬ কিংবা ৭ নম্বরে খেলবো। এই সময়ে আরও দুয়েকজন ব্যাটসম্যান থাকে। আমার সঙ্গে যখন ব্যাটসম্যান থাকে তখন চেষ্টা করি ইনিংসটাকে বড় করার জন্য।’
"