ক্রীড়া প্রতিবেদক

  ২০ আগস্ট, ২০১৭

প্রথম টেস্টের দল ঘোষণা

সব ছাপিয়ে আলোচনায় ‘মুমিনুল’

সর্বশেষ প্রস্তুতি ম্যাচেও সর্বোচ্চ স্কোরার তিনি। টেস্ট গড়ের দিকে তাকালে তার কাছাকাছি আছেন কেবল সাকিব-তামিম। কিন্তু তা-ও বেশ পেছনেই। বাকি ব্যাটসম্যানরা তো তার ধারে-কাছেও নেই। এর আগে ‘টেস্ট স্পেশালিস্ট’ হিসেবে তকমাও জুটেছিল মুমিনুল হকের কপালে। আর সেই মুমিনুলকেই কি না বাদ পড়তে হলো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে। কিন্তু মুমিনুল কেন বাদ, সেই প্রশ্নের প্রাসঙ্গিক কোনো উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না ক্রিকেটপ্রেমীরা। মুমিনুলের সঙ্গে বাদ পড়েছেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। এ দুজনের বাদ পড়ার দিন সুসংবাদ পেয়েছেন নাসির হোসেন ও শফিউল ইসলাম। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টেস্টের দলে ফিরেছেন এ দুজন। গত অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শফিউল টেস্ট ক্যাপ পরার সুযোগ পেলেও, নাসির শেষবার খেলেছেন ২০১৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঢাকায়। দলে মেহেদী হাসান মিরাজ ও মোসাদ্দেক হোসেনের পর তৃতীয় অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার হিসেবে দলে আছেন তিনি।

মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবার দুপুরে ১৪ সদস্যের দল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন অন্যতম নির্বাচক হাবিবুল বাশার ও প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।

এদিনের সংবাদ সম্মেলনে সবকিছু ছাপিয়ে প্রাধান্য পেয়েছে মুমিনুল হকের বাদ প্রসঙ্গ। বিসিবির প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীনের মতে, সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় নিয়ে টেস্ট স্কোয়াড গঠন করা হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক ফর্মকে বিবেচনা নিলে সবার আগে মুমিনুলের নামই উঠে আসে। টেস্ট সিরিজের প্রস্তুতি হিসেবে কিছুদিন আগে চট্টগ্রামে তিন দিনের ওয়ার্মআপ ম্যাচ খেলেছেন মুশফিক-তামিমরা। সর্বশেষ প্রস্তুতি ম্যাচের সর্বোচ্চ স্কোরার মুমিনুল। এ ম্যাচে তামিমের দলের হয়ে প্রথম ইনিংসে মুমিনুল হক করেছেন ৭৩ রান, যা ছিল ওই প্রস্তুতি ম্যাচে দুই দল মিলিয়ে সর্বোচ্চ। এর আগে ঘরোয়া ক্রিকেটেও কথা বলেছে মুমিনুলের ব্যাট। তাই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টেস্টের ১৪ জনে মুমিনুলের জায়গা না হওয়ায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে দল নির্বাচন।

একই প্রস্তুতি ম্যাচে খেলা বাকিদের সঙ্গে তুলনা করলে মুমিনুলের বাদ পড়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না। মুশফিকের দলের হয়ে প্রথম ইনিংসে ১ রান করেছিলেন সৌম্য সরকার। তার থেকে ৯ রান বেশি করেছেন তামিমের দলে খেলা সাব্বির। কিন্তু এ দুই ক্রিকেটারকে রাখা হয়েছে স্কোয়াডে। অন্যদিকে, এই প্রথমবারের মতো ‘অফ ফর্মে’র অজুহাতে টেস্ট স্কোয়াড থেকেই বাদ পড়লেন মুমিনুল। মুমিনুলের বিপক্ষে যুক্তি হতে পারে, গত দেড় বছরের পারফরম্যান্স। এ সময়ে সৌম্য, সাব্বির ও মুমিনুলের পারফরম্যান্সের তুলনা টানলে দেখা যায়, চলতি বছর চার টেস্ট খেলেছেন সৌম্য। ৪ ফিফটিসহ ৪৬.৭৫ গড়ে করেছেন ৩৭৪ রান। সর্বোচ্চ ৮৬ রান করেছিলেন ক্রাইস্টচার্চে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। তবে ৭ টেস্টের ক্যারিয়ারে কোনো সেঞ্চুরি নেই সৌম্যর। আরেকটি কথা হচ্ছে, টানা খারাপ খেলতে থাকা সৌম্যর ওপর যদি আস্থা রেখে রানে ফেরানো যায়, তবে মুমিনুলের দোষ কোথায়?

অন্যদিকে ৬ টেস্টের ক্যারিয়ারে ৩৩ গড়ে ৩৩০ রান করেছেন সাব্বির। তিন ফিফটি থাকলেও কোনো ইনিংসকেই তিন অঙ্ক পর্যন্ত টেনে নিতে পারেননি সাব্বির। কলম্বো টেস্টে দুটো চল্লিশোর্ধ্ব গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস আছে তার। কিন্তু মুমিনুলের অভিজ্ঞতার মূল্য এর চেয়ে কি কম?

মুমিনুল এ সময়ে পাঁচ টেস্টে ২৩.২ গড়ে ২৩২ রান করেছেন তিনি। ফিফটি মাত্র দুটি। অর্থাৎ, সর্বশেষ পাঁচ টেস্ট বিবেচনায় মুমিনুলের চেয়ে সাব্বির-সৌম্যর রান গড় শ্রেয়তর। কিন্তু তার পরও প্রশ্ন মুমিনুল নিজের ফর্ম ফিরে পাওয়ার যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছেন কি? এমন প্রশ্ন তুলেছেন দর্শক-সমর্থকরা।

গতকাল মুমিনুলের প্রসঙ্গে একরকম তোপের মুখেই ছিলেন নির্বাচক এবং কোচ। বেশির ভাগই প্রশ্ন ছিল মুমিনুলের বাদ পড়া প্রসঙ্গে।

‘মুমিনুল শেষ জানুয়ারি থেকে শ্রীলঙ্কা সিরিজ পর্যন্ত ৬ ইনিংসে মাত্র একটি ফিফটি করেছেন, তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে মূলত সামগ্রিক পারফম্যান্সের কারণে।’ বলছিলেন প্রধান নির্বাচক নান্নু। এই তথ্য মিথ্যা নয়। তবে অন্য একটা দিকও আছে। বাংলাদেশে এ যাবৎকালে যত টেস্ট ক্রিকেটার এসেছেন, তাদের মধ্যে নিঃসন্দেহে মুমিনুল অন্যতম সেরা। ঘরের মাঠে তার গড় ৬০-এর কাছাকাছি। অথচ সেই মুমিনুলকেই দর্শক হয়ে থাকতে হচ্ছে দেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজে। তিন নম্বর পজিশনে মুমিনুলের জুড়ি মেলাভার। যেকোনো দলের সেরা ব্যাটসম্যান এ পজিশনে খেলে থাকেন। সেখানে কিন্তু প্রধান নির্বাচকের পছন্দ সৌম্য এবং ইমরুল; প্রশ্ন হচ্ছে এই দুজন কি মুমিনুলের অভাব মেটাতে পারবেন?

মুমিনুল-সংক্রান্ত প্রশ্নের তোপে একসময় নান্নু বলতে বাধ্য হলেন, ‘তাকে হয়তো প্রথম টেস্টে রাখা হয়নি। দ্বিতীয় টেস্ট কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে ডাকা হতে পারে।’ কিন্তু এমনিতেই দীর্ঘ সময় খেলার বাইরে থাকা মুমিনুল কি তার আত্মবিশ্বাস ধরে রাখতে পারবেন।

এদিকে মুমিনুলের বাদ পড়ার আড়ালে ঢেকে গেছে মাহমুদউল্লাহর বাদ পড়ার প্রসঙ্গও। দলের সিনিয়র খেলোয়াড় তিনি। দলের অনেক উত্থান-পতনের সঙ্গী তিনি। পাড়ি দিয়েছেন বহু কঠিন পথ। সেই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টেস্টের দলে রাখার প্রয়োজন মনে করেননি নির্বাচকরা। তবে প্রস্তুতি ম্যাচের অধিনায়ক করা হয়েছে। এর আগে মুমিনুলের মতো রিয়াদও ছিলেন না শততম টেস্টের একাদশে। এরপর ওয়ানডে-টি-টোয়েন্টিতে বিশেষ করে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে জানান দিয়েছেন, ফুরিয়ে যাননি তিনি। কিন্তু সেই বার্তা টেস্টে সুযোগ করে দিতে যথেষ্ট হয়নি।

আগামী ২২-২৩ আগস্ট ফতুল্লায় দুদিনের প্রস্তুতি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম টেস্টের দলে না থাকা মুমিনুল হককেও এ দলে রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ দল

তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার, লিটন কুমার দাস, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, নাসির হোসেন, সাব্বির রহমান, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান ও শফিউল ইসলাম

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist