প্রিন্স রাসেল, কক্সবাজার থেকে

  ২৮ জুলাই, ২০১৭

শেখ কামাল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের দুর্গতি

দরকার সম্মিলিত প্রচেষ্টা

একটি আদর্শ ভেন্যুর পারিপার্শ্বিক প্রায় সব ধরনের উপাদান আছে কক্সবাজার শেখ কামাল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের। যাকে ঘিরে রেখেছে চোখে প্রশান্তি এনে দেওয়ার মতো সবুজ নির্মল পরিবেশ। বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্রতটবর্তী শহর কক্সবাজারে আছে বিলাসবহুল হোটেল। আকাশপথে আছে যোগাযোগের দারুণ সুবিধা। অথচ মাঠের বয়স অর্ধদশক পার হওয়া সত্ত্বেও এখানে আয়োজন হচ্ছে না জাতীয় পর্যায়ের কোনো ম্যাচ। আন্তর্জাতিক ম্যাচ মঞ্চায়ন তো দূরের কথা! অবকাঠামোগত উন্নতি না থাকার কারণেই স্টেডিয়ামের এমন দুর্গতি। মানসম্পন্ন ভেন্যু হিসেবে এটিকে প্রতিষ্ঠিত করতে দরকার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি), জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটাররা অন্তত এমনটাই মনে করছেন।

পর্যটকদের জন্য দারুণ উপভোগ্য একটা জায়গা কক্সবাজার। বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্রতটের পাশেই তৈরি করা হয়েছে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। এখানে ‘আন্তর্জাতিক’ শুধু নামেই, বাস্তবায়নে নয়। স্টেডিয়াম যেন ‘সীমাহীন’ সবুজের কোনো ময়দান। নেই কোনো প্রাচীর। গ্যালারি, ফ্ল্যাডলাইট স্থাপন তো আরো দূরের কথা! তার ওপর মাঠ নিচু। এতটাই যে, হালকা বর্ষণেই স্টেডিয়াম ডুবে যায় পানিতে। বৃষ্টির কারণে পাশের পুকুরের জলে প্লাবিত হয়ে যায় নগরবাসীর স্বপ্নের স্টেডিয়াম। এখানেই চলছে মাস্টার্স ক্রিকেট কার্নিভালের (এমসিসি) দ্বিতীয় আসর। মাঠের জলাবদ্ধতার কারণে পরশু উদ্বোধনী দিনের দুটি ম্যাচের একটিও হয়নি। তাই সাবেক ক্রিকেটারদের উৎসবের প্রথম দিনটা কেটেছে একটু দূরেই, একাডেমি মাঠে।

সৈকতের লাবণী পয়েন্টে পর্যটন করপোরেশনের গলফ মাঠে ৫১ একর জমিতে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। কিন্তু ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধনের পর থেকে বড় মঞ্চের নাম হয়ে উঠতে পারেনি স্টেডিয়ামটি।

সমুদ্রের তীরের পাশে সুদৃশ্য স্টেডিয়াম থাকা সত্ত্বেও এটা ব্যবহারে উপযোগী না হয়ে ওঠা, উন্নয়নের ধীরগতির কারণে একটু বেশিই মর্মাহত বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজন। স্টেডিয়ামে পাশে দাঁড়িয়েই আক্ষেপের সুরে তিনি বলেছেন, ‘এটা আমাদের জন্য লজ্জার। এ রকম সৈকতকেন্দ্রিক পরিবেশে অনেক কিছুই হয়। আবহটাই থাকে অন্য রকম। আমরা বিদেশে খেলতে গিয়ে এসব দেখেছি।’

নির্মাণের পর থেকে স্টেডিয়ামে এখন অবধি আয়োজন বলতে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ এবং নারী ক্রিকেট দলের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার সিরিজ। এই মাঠেই গত বছর সাবেক ক্রিকেটাররা প্রথমবারের মতো মিলিত হয়েছিলেন। এবারও হলেন। কিন্তু স্টেডিয়ামের অগ্রগতির না থাকায় স্বাভাবিকভাবেই হতাশ তারা।

কেন এখানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ম্যাচ আয়োজন করা যাচ্ছে না সেটা অবশ্য অনুধাবন করতে পারছেন বিসিবি পরিচালক সুজন। বলেছেন, ‘একটা সময় এটা (জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ম্যাচ) হবেই। এ জন্য অনেক কিছুই লাগে। মাঠটাকে আরো উন্নত করতে হবে। আরো কিছু কাজ আছে সেগুলো করলে আশা করছি, এ ধরনের ম্যাচ আয়োজন করতে পারব। এখানকার মাটি এবং পরিবেশটা দারুণ।’

শহর এবং সৈকতকে জমজমাট করে তুলতে সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন আশাবাদী সুজন, ‘হয়তো এটা নিয়ে সরকারের কিছু পরিকল্পনা আছে। তবে বাস্তবায়ন কবে হবে সেটাই সবচেয়ে বড় কথা। যত তাড়াতাড়ি হবে ততই আমাদের জন্য ভালো। কারণ আমাদের দেশে এত সুন্দর একটা জায়গা আছে, এটা হয়তো অনেক দেশের মানুষ জানেই না। আশা করছি এটা খুব শিগগিরই হয়ে যাবে।’

শেখ কামাল স্টেডিয়াম হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম একটা ভেন্যু। সে জন্য এখন থেকেই অবকাঠামো উন্নয়নটা খুব জরুরি। তবে পরিকল্পনার পূর্ণ বাস্তবায়ন যে বিসিবির একার পক্ষে সম্ভব না সেটা জানিয়ে দিলেন সুজন, ‘এখানে এনএসসিরও ব্যাপার আছে। আমি যতটুকু জানি, এটা নিয়ে পরিকল্পনাও করা হয়েছে। এটা বাস্তবায়নে সবার উদ্যোগ লাগবে।’

কক্সবাজারে বিদেশি দলগুলোকে আতিথ্য দেওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ বলে মনে করেন সুজন, ‘এ রকম দারুণ পরিবেশে বিদেশিরা খেলতে চায়। এটা হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য অন্যতম সেরা ভেন্যু। তা ছাড়া কক্সবাজার বিশ্বের সবচেয়ে বড় সৈকত। এখানে বাংলাদেশকে তুলে ধরার একটা ব্যাপারই থাকবে।’

স্টেডিয়ামটির পূর্ণতার জন্য সস্মিলিত প্রচেষ্টার বিকল্প দেখছেন না বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলটও। বলেছেন, ‘এটা বাস্তবায়নে করতে যৌথ উদ্যোগ লাগবে। ক্রিকেট বোর্ড, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, পর্যটন মন্ত্রণালয়-সবাই মিলে যদি উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলে এটার বাস্তবায়ন সম্ভব। এটা চমৎকার একটা ভেন্যু। এই জায়গায় ভালো খেলা হলে পর্যটকরা আসবেন এবং সৈকতটা উপভোগ করবেন। কিছু উন্নয়ন করলে এটা সম্ভব। এখানে সবচেয়ে বড় সুবিধাটা হচ্ছে সুন্দর সুন্দর হোটেল আছে।’

স্টেডিয়ামটি বদলে দিতে পারে শহরের চেহারাকে। এটাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে পারে নতুন ক্রীড়া সংস্কৃতি। কক্সবাজার পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে বলে বিশ্বাস করেন বিসিবিকর্তা সুজন, ‘এই স্টেডিয়ামে আরো কিছু উন্নয়ন হতে পারে। সমুদ্রের পাশে হতে পারে একটা গলফ কোর্স। তাহলে হয়তো ক্রীড়াবান্ধব শহর হিসেবে কক্সবাজার জমজমাট হয়ে উঠবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist