ক্রীড়া প্রতিবেদক
নতুন আঙ্গিকে বিপিএল-৫
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) পঞ্চম আসর শুরু হওয়ার কথা ছিল ৪ নভেম্বর। টুর্নামেন্ট শুরুর তারিখটা দুদিন এগিয়ে এনে ২ নভেম্বর করা হয়েছে। বল মাঠে গড়ানোর দুদিন আগে জমকালো কনসার্টের মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটাও আয়োজনের ইচ্ছের কথাও জানাল বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল। শুধু তারিখই নয়, আসন্ন বিপিএলে বদলে যাচ্ছে অনেককিছুই। বেড়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজি দল ও আইকনের সংখ্যা। ইচ্ছে মতো দল বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হযেছে আইকনদের। একাদশে দেশি-বিদেশি খেলোয়াড়দের সমণ¦য়েও আনা হয়েছে পরিবর্তন। প্রথমবারের মতো নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে কারোর ওপর। সবমিলিয়ে নতুন আঙ্গিকে শুরু হতে যাচ্ছে বিপিএল-৫।
বিপিএলে দল বাড়ার আভাসটা আগে থেকেই মিলছিলো। সে হিসেবে একজন আইকন ক্রিকেটারের সংখ্যাও উন্নিত হওয়ার কথা ছিলো। সেই একজন মুস্তাফিজুর রহমান। যিনি বর্তমানে ঠিক চেনাছন্দে নেই। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি ‘কাটার মাস্টার’। তবুও নিজেকে ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ে নামবেন ‘আইকন’ হিসেবেই। কাল অষ্টম ‘আইকন’ ক্রিকেটার হিসেবে তার নাম ঘোষণা করেছে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল। আর আগের সাতজন হলেন- মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, সৌম্য সরকার এবং সাব্বির রহমান।
আইকন হওয়ার দৌড়ে মুস্তাফিজের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ইমরুল কায়েস। শোনা যাচ্ছিল নাসির হোসেনের নামও। কিন্তু টুর্নামেন্ট গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচির ইসমাইল হায়দার মল্লিক কাল ঘোষণা করলেন বাঁ-হাতি পেসারের নাম। যিনি গত আসরটি খেলতে পারেননি চোটের কারণে। সবশেষ ২০১৫ সালে ঢাকা ডায়নামাইটসের জার্সিতে মাঠে নেমেছিলেন তিনি।
মুুস্তাফিজ সুসংবাদ শুনলেও দুঃসংবাদ শুনতে হলো সানোয়ার হোসেন ও জুপিটার ঘোষকে। গত আসরে এ দুজন ছিলেন আলোচনার তুঙ্গে। ম্যাচ গড়াপেটা ইস্যুতে অভিযোগ উঠেছিল রংপুর রাইডার্সের ম্যানেজার সানোয়ার ও ক্রিকেটার জুপিটারের বিরুদ্ধে। বিতর্ক এড়াতে তাই দুজনকেই এবারের আসরে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কাল বিপিএলের সংক্রান্ত সভা শেষে ইসমাইল হায়দার মল্লিক বলেছেন, ‘জুপিটার ঘোষের নাম খেলোয়াড় তালিকায় থাকবে না। আর সানোয়ার ভাই কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারবেন না। বিপিএলের প্রথম আসরেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল। আমরা বিপিএলে কোনো বিতর্কিত ব্যক্তিকে রাখব না।’ বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এবং বিসিবি পরিচালক আফজালুর রহমান সিনহা পাশে থেকেই বলছিলেন টুর্নামেন্ট সদস্যসচিব।
এবারের বিপিএলে প্রতি দলের একাদশে পাঁচজন বিদেশি ক্রিকেটার খেলানোর নিয়ম চূড়ান্ত করেছে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল। সবশেষ সম্মেলনে ৫ বিদেশির ইঙ্গিত দেওয়ার পরই প্রশ্নের মুখে পড়েছিল গভর্নিং কাউন্সিল। গত কিছুদিনে এনিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে প্রবল। সিনিয়র ক্রিকেটারদের অনেকেও এটির বিপক্ষে। তবু এই সিদ্ধান্তই নেওয়া হলো। মল্লিক জানালেন ফ্র্যাঞ্চাইজি দলগুলোর চাপের কাছে নত হতে হয়েছে তাদের। তিনি বলেছেন, ‘ফ্র্যাঞ্চাইজিদের কাছ থেকে আমরা চাপ পাচ্ছিলাম। তাদের কাছ থেকে আমরা লিখিত নিয়েছি। সাতটি ফ্র্যাঞ্চাইজিই তাদের মত জানিয়েছে। বেশিরভাগই একাদশে ৫টি বিদেশি চেয়েছে। যেহেতু দল বেড়েছে, সব দিক বিচার-বিবেচনা করে এবার আমরা ৫ জন বিদেশি খেলানোর অনুমতি দিচ্ছি।’
‘আইকন’ কয়েকজনের দলও ইতোমধ্যে চূড়ান্ত হয়ে গেছে। ৫টি ফ্র্যাঞ্চাইজি তাদের নামও লিখিতভাবে জমা দিয়েছে টুর্নামেন্টের কর্তাব্যক্তিদের কাছে। কিন্তু দল এবং খেলোয়াড় কারোরই নাম খোলাসা করেননি মল্লিক। বাকি ৩ ফ্র্যাঞ্চাইজি তাদের আইকনের নাম জমা দিলেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল থেকে।
এবারের আসরে দল নির্বাচনে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে আইকনদের। কে কোন দলে নাম লিখিয়েছেন সেটা প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেছে এই কদিনেই। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ছেড়ে রংপুর রাইডার্সের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন মাশরাফি। ফ্র্যাঞ্চাইজি থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও দিয়েছে। ওয়ানডের অধিনায়কের মতো ঠিকানা পরিবর্তন হচ্ছে বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়কেরও। বরিশাল বুলসকে বিদায় বলা মুশফিকের সম্ভাব্য গন্তব্য রাজশাহী কিংস। তামিম ইকবালকে দেখা যাবে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের জার্সিতে। তবে দল বদল হচ্ছে না মাহমুদ উল্লাহ রিয়াদ ও সাকিব আল হাসানের। প্রথমজন খুলনা টাইটানস এবং দ্বিতীয়জন থেকে যাচ্ছেন ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ঢাকা ডাইনাইমাইটসে। বাকি তিন আইকন সৌম্য, সাব্বির এবং মুস্তাফিজের দল নিশ্চিত না হলেও গুঞ্জন আছে ফিজ খেলবেন চিটাগাং ভাইকিংসে, সাব্বির সিলেট রয়্যালস এবং সৌম্য বরিশাল বুলসের হয়ে। এসব ক্রিকেটাররা নিজেরাই ঠিক করে নিচ্ছেন নিজেদের পারিশ্রমিক। তাই সব খেলোয়াড়ের পারিশ্রমিকের দায়িত্ব নিলেও আইকনদের দায়িত্ব নিচ্ছে না বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল। কাল যেমনটি বলেছেন টুর্নামেন্টের সদস্য সচিব, ‘যেহেতু আইকনরা নিজেরাই দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে, আমরা এটার (পারিশ্রমিক) দায়িত্ব নেব না। বাকি খেলোয়াড়দের টাকা বাড়েনি। গতবারের মতো এবারও তাদের শ্রেণিও একই থাকবে। তাদের দায়িত্ব আমরা নেব। এমনকি ড্রাফটের মাধ্যমে যে বিদেশিরা আসে, তাদের দায়িত্বও নেব। ড্রাফটের বাইরে অনেক বড় বড় খেলোয়াড় আসছে, তাদের দায়িত্ব বোর্ড নেবে না। আইকনদের দায়িত্বও নেবে না। যেহেতু তারা ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে সমঝোতা করে নিয়েছে। এটা ফ্র্যাঞ্চাইজি-আইকনদের ব্যাপার।’
দুই পক্ষের মধ্যে ঠিকমতো বোঝাপরা হলেই ভালো। না হলে যে পুরনো সমস্যা দেখা দেবে নতুন করে!
"