ক্রীড়া প্রতিবেদক
তামিমকে আদর্শ দেখছেন সৌম্য
সৌম্য সরকার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার পথচলা অতটা দীর্ঘায়িত হয়নি। বাঁ-হাতি ওপেনারের ক্যারিয়ারটা আড়াই বছরের। এই স্বল্প সময়ের মধ্যেই দু’রকম অভিজ্ঞতা হয়েছে তার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বন্ধুর পথটা শুরুতে যেভাবে মাড়িয়েছেন এখন আর সেভাবে হচ্ছে না। এক সিরিজ ভালো করলে তো পরের সিরিজেই নিষ্প্রভ। এই সংকট নিরসনের উপায়টা নিজেই খুঁজতে চান সৌম্য। ক্যারিয়ারটা করতে চান সুদীর্ঘ। স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে আদর্শ হিসেবে সৌম্য বেছে নিয়েছেন সতীর্থ ওপেনার তামিম ইকিবালকে।
জাতীয় দলে তামিম ইকবালের অধ্যায় এক দশকেরও বেশি সময়ের। ক্যারিয়ারের এই লম্বা পথে উদ্বোধনী জুটিতে সঙ্গী হিসেবে মোট ১৮ জনকে পেয়েছেন বাঁ-হাতি ওপেনার। তন্মধ্যে সৌম্যকেই ভাবা হচ্ছিল তামিমের যোগ্য সঙ্গী। কিন্তু ভাবনটা যে একেবারেই অমূলক ছিল সেটা ক্রিকেটবোদ্ধারা বুঝে গেছেন সময়ের ব্যবধানে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পিচ্ছিল পথে আত্মবিশ্বাস নিয়ে হাঁটতে পারছেন না। পা হড়কাচ্ছেন প্রায়ই। ক্যারিয়ারের সূচনালগ্নে দুর্দান্ত খেলা সৌম্য বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে থাকলেন নিজের ছায়া হয়ে।
বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান ভাবা হয় তামিমকে। বাঁ-হাতি এই ওপেনারও দেখেছেন তার ক্যারিয়ারের উত্থান-পতন। সেই তিনিই এখন ব্যাটিংয়ে বিভাগের সবচেয়ে নির্ভরতার প্রতীক। প্রতিপক্ষ, কন্ডিশন, ফরমেট, সিরিজ কিংবা টুর্নামেন্ট যেটাই হোক ব্যাট হাতে তামিম হয়ে উঠলেন ধারাবাহিক পারফরর্মার। বদলে যাওয়া এই ওপেনারকেই তাই অনুকরণ করতে চান সৌম্য। ক্যারিয়ারটা সুদীর্ঘ করতে তামিমের কাছে অনেক কিছুই শেখার আছে বলে মনে করেন তিনি। কাল অনুশীলন শেষ প্রচারমাধ্যমকে সৌম্য বলেছেন, ‘উনি যখন স্ট্রাইকে থাকেন, তাকে দেখি আর চিন্তা করি, এই বলটা কীভাবে খেলতাম! তামিম ভাইয়ের আগের খেলার চেয়ে এখনকার খেলা অনেক আলাদা। তিনি এখন অনেক পরিণত। ম্যাচের পরিস্থিতি খুব দ্রুত ধরতে পারেন। মাঠে ও মাঠের বাইরে তার কাছ থেকে শেখার চেষ্টা করি। তার আগের ব্যাটিংয়ের হাইলাইটস দেখি। দেখি আগে কীভাবে আক্রমণাত্মক খেলতেন আর এখন কীভাবে খেলেন।’
এক দশকের ক্যারিয়ারে ৪৯ টেস্ট, ১৭৩ ওয়ানডে ও ৫৬ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন তামিম। পক্ষান্তরে ২০১৪ সালের প্রান্তসীমায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখা সৌম্য খেলেছেন ৭ টেস্ট, ৩১ ওয়ানডে ও ২৪ টি-টোয়েন্টি। তামিমের মতো ক্যারিয়ারটা বড় করার স্বপ্ন দেখেন সৌম্য। বলেছেন, ‘ওপেনিংয়ে নেমে বড় পর্দায় যখন দেখি, উনি ১৬০-১৭০ ওয়ানডে খেলে ফেলেছেন, আমি ৩০। স্বপ্ন দেখি, আমিও একদিন ১৬০-১৭০ ম্যাচ খেলব।’
কিন্তু তামিম হওয়াটা সহজ নয়। সেটা সৌম্য নিজেও অনুধাবন করতে পারছেন। কারণ তামিম যেখানে ধারাবাহিক সেখানে সৌম্যের ক্যারিয়ারের গ্রাফটা উঁচু-নীচু হয়ে চলছে। যে কারণে ফর্মের কারণে প্রথমবারের মতো গত বছরের শেষ দিকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দল থেকে বাদ পড়েছিলেন তিনি। তাকে ঘিরে যথেষ্ট আলোচনা-সমালোচনাও হয়েছে। ধারাবাহিক হতে না পারার বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন সৌম্য। সমস্যার সমাধানের পথটা নিজেই খুঁজে নিতে চান সৌম্য। বলেছেন, ‘কাজ করে যেতেই হবে। একদিন ভালো করছি, আরেকদিন হচ্ছে না। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খারাপ করেছি। তার আগের সিরিজটা আবার ভালো করেছি। সবাই হয়ত বলছে, আমি সবার কথা শুনছি না। আমি নিজেই উপলব্ধি করছি। আমার সমস্যার সমাধান আমাকেই বের করতে হবে।’
শুরুতে তাকে ভাবা হয়েছে সীমিত ওভারের ক্রিকেটের সম্পদ। গত কিছুদিনে টেস্টেই ছিলেন বেশি ধারাবাহিক। বাংলাদেশের পরের সিরিজটিও টেস্ট সিরিজ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেই সিরিজটির জন্য মুখিয়ে আছেন সৌম্য। স্বপ্ন দেখছেন অজিদের হারানোর, ‘অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে আমরা মুখিয়ে আছি। আশা করি, আমরা ভালো ক্রিকেট খেলে অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে পারব। যেহেতু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আমার প্রথম টেস্ট সিরিজ হবে, এটাকে স্মরনীয় করে রাখতে চাই। আমার ব্যাটিংয়ের মাধ্যমে যেন আমরা দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে কোনো টেস্ট জিততে পারি, সেই চেষ্টাই করব।’ সৌম্যের আশাটা পূরণ হোক এমনটাই তো প্রত্যাশা ভক্তকূলের।
"