ক্রীড়া প্রতিবেদক
ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকের কাঠগড়ায় মুশফিক
কাঁদলেন টেস্ট অধিনায়ক
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের গত আসরের শুরুটা দারুণ হয়েছিল বরিশাল বুল্সের। কিন্তু ছন্দটা মাঝপথেই হারিয়ে ফেলে ফ্র্যাঞ্চাইজি দলটি। শেষ চারের আগেই ছিটকে যায় টুর্নামেন্ট থেকে। তখন দলের খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে ফিক্সিংয়ের অভিযোগ তুলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বিতর্কিত হয়েছিলেন বরিশালের বুলসের শুভেচ্ছাদূত, সংগীতশিল্পী আসিফ আকবর। এবার বিতর্কিত মন্তব্য করলেন খোদ ফ্র্যাঞ্চাইজিটির মালিক আবদুল আওয়াল।
মুশফিকুর রহিমের অধিনায়কত্ব পছন্দ হয়নি বরিশাল বুলসের অন্যতম এই কর্ণধারের। শুধু তাই নয়, মুশির শৃঙ্খলা এবং দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আবদুল আওয়াল। তাতে রীতিমত হতাশ জাতীয় দলের টেস্ট অধিনায়ক। তার হতাশার গভীরতা এতটাই ছিল যে, অপত্যাশিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে কেঁদেই ফেললেন মুশফিক।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে মুশফিকের সম্পর্ক প্রায় দেড় যুগের। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে ৫ বছরের পর জাতীয় দলে ১২ বছর। দীর্ঘ এই ক্যারিয়ারে ইতিবাচক-নেতিবাচক কত মন্তব্যই তো শুনেছেন মুশফিকুর রহিম। কিন্তু বিসিবির অন্যতম পরিচালক ও বিপিএলের দল বরিশাল বুলসের স্বত্বাধিকারী আবদুল আওয়াল তাঁকে নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, সে ধরনের মন্তব্য বা অভিযোগ আগে কখনো শুনেছেন কি না, মনে করতে পারেননি মুশফিক।
গত বিপিএলে মুশফিক খেলেছেন বরিশাল বুলসের ‘আইকন’ হিসেবে। যদিও তিনি নাকি সে দলে খেলতে রাজি ছিলেন না। বিসিবির অনুরোধেই পরে রাজি হয়েছিলেন। টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে ভালো খেললেও মাঝপথে ছন্দ হারিয়ে ফেলে তাঁর দল। পরে শেষ চারেও উঠতে পারেনি বরিশাল। দলের পারফরম্যান্স যাই হোক, মুশফিকের ব্যাটিং নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।
১২ ম্যাচে ৩৭.৮৮ গড়ে ৩৪১ রান করে দলের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তিনিই ছিলেন সবার ওপরে। তবে মুশফিকের অধিনায়কত্ব পছন্দ করেননি আবদুল আওয়াল। শুধু অধিনায়কত্বই নয়, পরশু একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ককে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে অনেক অভিযোগ তুলেছেন ফ্র্যাঞ্চাইজিটির মালিক।
কাল বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলকে জানানোর পর সংবাদ সম্মেলনে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন মুশফিক। বলেছেন, ‘আপনারা নিশ্চয়ই জানেন আমাকে নিয়ে এমন প্রশ্ন ওঠে না। হ্যাঁ, মাঠের পারফরম্যান্স নিয়ে তিনি মন্তব্য করতে পারেন। বলতে পারেন আমি ভালো খেলোয়াড় নই। তবে আমার শৃঙ্খলা ও দায়িত্ববোধ নিয়ে তিনি যে প্রশ্ন তুলেছেন কিংবা আমি খেলোয়াড়দের উজ্জীবিত করতে পারি না, টিম মিটিংয়ে কথা বলি না-এসব কথা খুব খারাপ লেগেছে।’
একজন ফ্র্যাঞ্চাইজি স্বত্বাধিকারীর এমন মন্তব্যে মুশফিক এতটাই মর্মাহত, নিজের কথাও ঠিকমতো শেষ করতে পারেননি। কেঁপে ওঠা কণ্ঠে বাংরাদেশ টেস্ট অধিনায়ক বলেছেন, ‘মল্লিক ভাই (বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্যসচিব) বলছেন, ওনারা ব্যাপারটা দেখবেন। আজ আমার সঙ্গে হয়েছে। কাল অন্যদের সঙ্গে যে হবে না, এ নিশ্চয়তা নেই। একজন খেলোয়াড় এতটুকু সম্মান আশা করতেই পারে। দেশকে এত দিন সেবা দিচ্ছি, এতটুকু সম্মান...।’ এসব বলার পরই সংবাদ সম্মেলেন ছেড়ে চলে যাচ্ছিলেন মুশফিক। যাওয়ার সময় তার টলমলে টল স্পষ্ট হয়ে ওঠে গণমাধ্যমের সামনে।
আবদুল আওয়ালের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অবশ্য ফোন ধরেননি। তবে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্যসচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিক বলেছেন, ‘পুরো ব্যাপারটা দেখেছি, শোভনীয় মনে হয়নি। এটা গ্রহণযোগ্য নয়। জাতীয় দলের অধিনায়ক ও একজন খেলোয়াড়কে নিয়ে তিনি এভাবে বলতে পারেন না। তাঁকে ডাকা হয়েছে। আমরা কারণ দর্শানোর নোটিশ দেব। যথাযথ উত্তর না পেলে ফ্র্যাঞ্চাইজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। সেটা হতে পারে আর্থিক কিংবা অন্য কোনো শাস্তি।’
কাল বিসিবি পরিচালক ইসমাইল হায়দার মল্লিক, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে বসেছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা, মুশফিক, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালরা। মুশফিকের ব্যাপারে বরিশাল বুলস ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকের বক্তব্য নিয়ে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছেন তারা।
"