ক্রীড়া ডেস্ক
ভারত না পাকিস্তান?
টুর্নামেন্ট শুরুর আগে পাকিস্তানের পক্ষে বাজি ধরার লোক খুঁজে পাওয়া-ই দুষ্কর। প্রথম ম্যাচে চিরশত্রু ভারতের কাছে অসহায় আত্মসমর্পন করার পর তো ‘আন্ডারডগ’ তকমাও জুড়ে দেওয়া হয়েছিল তাদের গায়ে। সবাইকে চমকে দিয়ে সেই দলটাই প্রথমবারের মতো আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে উঠে গেছে। সরফরাজ আহমেদের দল যেখান থেকে টুর্নামেন্ট শুরু করেছিল, আজ সেখানেই সমাপ্তি টানবে। আজ শিরোপা লড়াইয়ে যে চেনা শত্রু ভারতেরই মুখোমুখি হচ্ছে পাকশিবির! কী হবে আজ লন্ডনের ওভালে! সেই রোমাঞ্চই খেলা করছে ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে। পাকিস্তানকে কাঁদিয়ে তৃতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হবে ভারত? নাকি মধুর প্রতিশোধ নিয়ে স্বপ্নের প্রথম শিরোপা শিরোপা ঘরে তুলবে পাকিস্তান? উত্তরটা দূরে নয়।
প্রান্ত সীমায় আসা চ্যাম্পিয়নস ট্রফি অনুষ্ঠিত হচ্ছে ব্যাটসম্যানদের স্বর্গরাজ্যে। ওভাল, কার্ডিফ কিংবা এজবাস্টন তিনটি ভেন্যুতেই ব্যাটসম্যানরা রাজত্ব করেছেন। মরুর বুকে পাকিস্তানি বোলাররা যেন ঝড় তুলেছেন। আসরের সবচেয়ে সফল হয়েছে তাদের বোলিং বিভাগই। হাসান আলি-জুনাইদ খানদের দুর্দান্ত তোপের কারণেই ফাইনালে উঠেছে পাকিস্তান।
পাকিস্তান যেখানে বল হাতে ঝড় তুলেছে তেমনি ব্যাট হাতে ভারতীয়রা। আসরের সবচেয়ে ব্যাটিং গভীরতা ছিল ভারতেরই। শিখর ধাওয়ান, বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মাদের ব্যাটিং ভেলায় চড়ে শিরোপা ধরে রাখার শেষ দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে তারা। আজ তাদের সামনে মূল বাধা পাকিস্তানি বোলিং বিভাগ। কারণ ভারতীয়দের ব্যাটিং এবং পাকিস্তানিদের বোলিং শক্তিই গড়ে দিতে পারে আজকের ফাইনালের ভাগ্য। আক্ষরিক অর্থে তাই শিরোপা লড়াইটা হচ্ছে ব্যাটিং বনাম বোলিংয়ের।
গ্রুপপর্বের ম্যাচ গুলোতে দ্যুতি ছড়িয়েছিলেন মোহাম্মদ আমির। কিন্তু অতর্কিত চোট সেমিফাইনালে দর্শক বানিয়ে দিয়েছিল এই পেসারকে। তার অভাবটা বুঝতেই দেননি অভিষিক্ত রূম্মন রইস। আমির ফিট হয়ে ওঠায় তাই স্বাভাবিকভাবেই একাদশ থেকে ছিটকে যাবেন রইস। আমিরকে নিয়ে মাঠে নামতে পারবে দল এটাই তো সবচেয়ে বড় সুখের খবর পাকিস্তান।
পুরো শক্তির একাদশ নিয়ে মাঠে নামতে পারাটা যেমন পাকিস্তানের জন্য স্বস্তি, তেমনি অস্বস্তি ভারতীয় শিবিরে। কারণ হাঁটুর চোটে এখনো কাৎড়াচ্ছেন অলরাউন্ডার রবিচন্দ্রন অশ্বিন। তাকে একাদশে পেতে মরিয়া ভারত ম্যাচের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে রাজি আছে। শেষ পর্যন্ত অশ্বিন ওভালের বাইশ গজে না থাকলে তার জায়গায় উমেশ যাববের খেলার সম্ভাবনা প্রবল।
দু দলের ১২৮ বারের সাক্ষাতে ৭২ বারই জিতেছে পাকিস্তানের। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের সঙ্গে পেরেই উঠছে না তারা। আইসিসির টুর্নামেন্টে তো অবস্থা একেবারেই নাজুক অবস্থা পাকবাহিনীর। ১৫-২ ব্যবধানের জয়ে এগিয়ে আছে ভারত। বিরাট কোহলির দলের অনুপ্রেরণা সেখানেই। শুধু তাই নয়, আইসিসির দুটি বড় টুর্নামেন্টের ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর বিপক্ষের জয়টা ভারতের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুন।
পাকিস্তানকে কী পারবে ইতিহাসের ধারাটা পাল্টে দিতে? দলের কোচ মিকি আর্থারের অবশ্য ভারতীয়দের হারানোর কৌশলটা নাকী জানা আছে। মূলত বোলারদের দিকেই তাকিয়ে থাকয়ে রইছেন পাকিস্তানের কোচ, ‘অবশ্যই আমাদেও আক্রমণাত্মক খেলতে হবে। আমাদের সামনে এর চেয়ে আর কোনো বিকল্পও খোলা নেই। জয়ের জন্যই চেষ্টা করতে হবে। এবং এটা নিশ্চিত করতে হবে যে নতুন বলটা আমাদের জন্য সত্যিই কাজ দিচ্ছে। আমাদেরকে চেষ্টা করতে হবে দ্রুত তাদের টপ অর্ডারকে ফিরিয়ে দেয়ার। তাহলে মিডল অর্ডারের পরীক্ষা নেয়া যাবে। কারণ, মিডল অর্ডার এখনও একটা বিধ্বংসী নয়। কারণ, এখনও চাপের মুখে তাদের ব্যাট করতে হয়নি।’
এবারের টুর্নামেন্টে টস এবং উইকেট বড় দুটি ফ্যাক্টর আজকের ম্যাচেও তাই। লন্ডনের ওভালের পিচ শুষ্ক থাকার কথা এদিন। সেক্ষেত্রে ব্যাটসম্যানদের জন্য এটা খুব সহায়ক হবে। তিনশ রান সংগ্রহ করার মতোই উইকেট। ভারতের জন্য এটাই জ্বালানি হিসেবে কাজ করবে। এজবাস্টন ম্যাচের মতো রানবন্যা করতে চাইবে তারা। টুর্নামেন্টে দ্বিতীয়বার হারাতে চাইবে পাকিস্তানকে। লক্ষ্যটা পাকিস্তানেরও এক। আজ ভারতকে হারিয়ে ইতিহাসের দুষ্টচক্র থেকে বেড়িয়ে আসতে মরণকামড় দেবে পাকিস্তান।
সম্ভাব্য একাদশ
ভারত : রোহিত শর্মা, শিখর ধাওয়ান, বিরাট কোহলি (অধিনায়ক), যুবরাজ সিং, এমএস ধোনি, হার্দিক পায়া, রবিন্দ্র জাদেজা, রবিচন্দ্রন অশ্বিন/উমেশ যাদব, ভুবনেশ্বর কুমার, জাস্প্রিত বুমরাহ
পাকিস্তান : আজহার আলি, ফখর জামান, বাবর আজম, মোহাম্মদ হাফিজ, শোয়েব মালিক, শরফরাজ আহমেদ (অধিনায়ক), ইমাদ ওয়াসিম, মোহাম্মদ আমির, শাদাব খান, হাসান আলি, জুনাইদ খান।
"