ক্রীড়া ডেস্ক
পয়েন্টের সঙ্গে শিরোপাও হাতছাড়া!
আবার একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি। ফের দুই দফায় এগিয়ে গিয়েও ড্র করল বার্সেলোনা। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে পয়েন্ট হারিয়ে শিরোপার সঙ্গে তাই বার্সার দূরত্ব বাড়ল আরেকটু। কিন্তু ম্যাচে শেষ পর্যন্ত আরেকবার বিতর্ক উসকে দিয়েছে রেফারির পেনাল্টি সিদ্ধান্ত। ম্যাচে রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজিয়েছেন মোট তিনবার। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের পাওয়া শেষ পেনাল্টিটাই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিয়েছে। সাউল নিগুয়েজ স্পট কিক থেকে জোড়া গোল করে ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছেন দলকে।
ম্যাচের ৫০ মিনিটে পেনাল্টি থেকে পানেনকা শটে ক্যারিয়ারের ৭০০তম গোলের মাইলফলক ছুঁয়েছেন মেসি। ওই গোলে বার্সাও এগিয়ে গিয়েছিল ২-১ ব্যবধানে। এর আগে বার্সার এগিয়ে যাওয়ার সূত্রও ছিল মেসি। তার কর্নার থেকেই ডিয়েগো কস্তা আত্মঘাতী গোল করেছিলেন। সেই লিড অবশ্য ৮ মিনিটও টেকেনি। ১৯ মিনিটে ইয়ানিক কারাস্কোকে বক্সের ভেতর ফাউল করে বসেছিলেন আর্তুরো ভিদাল। সেখান থেকেই ম্যাচে প্রথম পেনাল্টি বাঁশি বাজান রেফারি।
প্রথম কিকে ডিয়েগো কস্তার শট ঠেকিয়েও দিয়েছিলেন টের স্টেগেন। কিন্তু কস্তা শট করার সময় স্টেগানের পা ছিল গোললাইনের বাইরে। ভিএআর চেকের পর তাই রেফারি ওই কিক বাতিল করে আবার কিক নেওয়ার সংকেত দেন। এবার কস্তার বদলে কিক নিতে আসেন সাউল। স্টেগানকে ভুল দিকে পাঠিয়ে ডানদিকের বটম কর্নারে বল জড়ান অ্যাটলেটিকো মিডফিল্ডার।
৬২ মিনিটে দ্বিতীয় পেনাল্টিও একই দিকে, একইভাবে মেরেছিলেন সাউল। সে দফায় স্টেগান বলের নাগাল পেলেও শেষ রক্ষা করতে পারেননি। এবারো পেনাল্টি আদায় করে নিয়েছিলেন কারাস্কো। বক্সের ভেতর ঢোকার সময় অবশ্য নেলসন সেমেদো তাকে কতখানি টাচ করেছিলেন, সেটি নিয়েই যত বিতর্ক।
৩৩ ম্যাচ শেষে লা লিগায় বার্সেলোনার পয়েন্ট এখন ৭০। রিয়াল মাদ্রিদের ৭১ পয়েন্ট নিয়ে আছে সবার ওপরে, তাদের হাতে আছে আরো এক ম্যাচ বেশি। আজ রাতেই টেবিলের পাঁচে থাকা গেটাফের মুখোমুখি হবে রিয়াল। জিনেদিন জিদানের শিষ্যরা যে আগুন ফর্মে আছে, তাতে লস ব্ল্যাঙ্কোসরা পূর্ণ পয়েন্ট তুলে নেবে বলেই ধারণা করছেন ফুটবলবোদ্ধারা। সেটা হলে শিরোপার দৌড় থেকে এক রকম ছিটকেই যাবে বার্সা। কাতালানদের এই দুর্দশার জন্য কোচ কিকে সেতিয়েনকে কাঠগড়ায় তুলছেন সবাই।
পরশুর ম্যাচে ৪-৪-২ ফর্মেশনে মেসি আর সুয়ারেজ ছিলেন ফরোয়ার্ড লাইনে। মিডফিল্ড ডায়মন্ডের মাথায় ছিলেন রিকি পুজ। তরুণ মিডফিল্ডার নিজের কাজটা করেছেন ভালোভাবেই। ভিদাল অবশ্য বক্স টু বক্স ভূমিকায় থেকেও প্রায়ই সঙ্গ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন দলকে। দ্বিতীয়ার্ধে ভালো দুটি সুযোগ ভিদাল কাজে লাগাতে পারলে হয়তো ম্যাচের ভাগ্য অন্যরকম হতে পারত। যদিও এসব ‘যদি, কিন্তুর’ চেয়ে আপাতত বার্সার কোচের সিদ্ধান্তগুলো চোখে লাগছে বেশি।
সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে আঁতোয়া গ্রিজম্যানকে বেঞ্চে রেখেছিলেন সেতিয়েন। আর দ্বিতীয় দফায় অ্যাটলেটিকো ম্যাচে ফেরার পর আরো ২৮ মিনিট সময় ছিল বার্সার হাতে। সেই গ্রিজম্যানকে সেতিয়েন মাঠে নামিয়েছেন নির্ধারিত সময় পার করে। সুয়ারেজ পুরোটা সময় ছিলেন দিশাহারা। অথচ সবে চোট কাটিয়ে ফেরা এই উরুগুয়েনকে দিয়েই পুরো ম্যাচ খেলিয়েছেন সেতিয়েন।
এখানেই শেষ নয়। পাঁচ বদলির নতুন নিয়মেও সেতিয়েন প্রথম বদলিটা করিয়েছেন ৬৩ মিনিটে। রাকিটিচকে বসিয়ে তখন মাঠে নেমেছিলেন সার্জি রবার্তো। তাতেও বার্সার মিডফিল্ডে গতি বাড়েনি। আক্রমণেও তাই কোনো প্রভাব পড়েনি। অ্যাটলেটিকো ন্যারো ডিফেন্ডিং ভাঙতে দুই প্রান্তে যে ধরনের আক্রমণ গড়ার দরকার ছিল বার্সার, সেটাও তারা পারেনি। এরপরও দ্বিতীয় বদলি করাতে সেতিয়েন সময় নিয়েছেন ৮৫ মিনিট পর্যন্ত। তখন মাঠে নেমেছেন আনসু ফাতি। অথচ তার আগেই নেতিয়ে পড়েছিল বার্সার খেলা।
সেতিয়েনের ওপর থেকে খেলোয়াড়দের আস্থা উঠে যাওয়ার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরে। এই ম্যাচের পর তার আসন হয়ে গেল আরো নড়বড়ে।
"