ক্রীড়া প্রতিবেদক

  ০২ জুন, ২০২০

ঢাবিতে পড়ার স্বপ্ন বুনছেন আঁখি

সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ নারী ফুটবল আসরের সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতিস্বরূপ জিতেছিলেন গোল্ডেন বুট। পাশাপাশি দেশকে শিরোপা এনে দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে পেয়েছিলেন বিশেষ উপহার। নিজ গ্রামে প্রায় এক কোটি টাকা মূল্যের খাস জমি বরাদ্দ করা হয়েছিল তার নামে। সেই আঁখি খাতুন দেখতে দেখতে এসএসসি পরীক্ষাও দিয়ে ফেলল। যার ফল প্রকাশিত হয়েছে গত পরশু।

মাঠের ফুটবলের মতো পড়ার টেবিলেও ভীষণ মনযোগী আঁখি কৃতিত্বের সঙ্গেই উত্তীর্ণ হয়েছেন। নারী দলের এই ডিফেন্ডার বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) মানবিক বিভাগ থেকে অর্জন করেছেন জিপিএ ৩.৮৩। লাল-সবুজের জার্সি গায়ে তুলে যাকে বছরব্যাপী ফুটবল মাঠ দাপিয়ে বেড়াতে হয়, তার এত পড়াশোনা করার সময় কই? তারপরও যতটুকু পড়ালেখার সময় বের করতে পেরেছেন, তাতেই করেছেন বাজিমাত। মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ ৩.৮৩ পাওয়াও চাট্টিখানি কথা নয়! নিজের এমন ফলে খুবই খুশি আঁখি। সিরাজগঞ্জ থেকে উঠে আসা এই ফুটবলার মনে করেন, এই ফল তার আত্মবিশ্বাস বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন তাই আরো বড় স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন তিনি। কলেজে ভর্তি না হতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ে পড়ার স্বপ্ন বুনছেন তিনি। সুযোগ হলে নাম লেখাতে চান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতেও।

করোনার কারণে প্রায় ৩ মাস হলো স্থবির দেশের ক্রীড়াঙ্গন। মাঠের খেলা বন্ধ। তাই অনেক আগেই ঢাকা ছেড়েছেন। বর্তমানে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া জমিতে বাড়ি তুলে পরিবার নিয়ে থাকছেন। সেখান থেকেই কাল মুঠোফোনে আঁখি গণমাধ্যমকে বললেন, ‘খুব খুশি লাগছে। যখন পরীক্ষা দিয়েছি, তখন চিন্তায় ছিলাম। কারণ সারা বছর খেলার ব্যস্ততা ছিল। ভালোভাবে পড়াশোনা করার সুযোগ সেভাবে পাইনি। বিকেএসপিতে যখন পরীক্ষা দিতে গেলাম, দেখলাম আমার সহপাঠীরা পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত। অথচ আমি তখনো প্র্যাকটিস করতে মাঠে যেতাম। এরপরও যে পাস করেছি, তাতেই আমার খুব আনন্দ লাগছে।’

আঁখির মা-বাবাও পরীক্ষার সময় থেকেই চিন্তায় ছিলেন। খেলার জন্য সেভাবে পড়াশোনায় মন দিতে না পারা মেয়েটা না জানি কেমন রেজাল্ট করে। আঁখি বললেন, ‘রেজাল্ট শোনার পর চিন্তামুক্ত হয়েছেন বাবা-মা। যেদিন থেকে পরীক্ষা শুরু হয়েছে, তারা সেদিন থেকেই খুব চিন্তায় ছিলেন। কিন্তু এখন খুবই খুশি।’ আঁখি আরো জানালেন, ফুটবলের পাশাপাশি পড়াশোনাটাও ভালোভাবে চালিয়ে যেতে চান। তার প্রধান লক্ষ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া। সেটা না হলে সেনাবাহিনীর কমিশন্ড অফিসার হওয়া।

দারুণ ফলের জন্য আঁখিকে অভিনন্দন জানিয়েছে সিরাজগঞ্জ ফুটবল খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতি। তার সঙ্গে এবার মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসির বাধা পেরিয়েছেন জাতীয় দলের স্ট্রাইকার সিরাত জাহান স্বপ্না, শামসুন্নাহার (সিনিয়র), ঋতুপর্ণা চাকমা, আনাই মগিনী, রেহেনা, মাহফুজা ও সাজেদা। ফরোয়ার্ড ঋতুপর্ণা পেয়েছেন জিপিএ ৩.৫০। রংপুরের মেয়ে স্ট্রাইকার স্বপ্না পেয়েছেন জিপিএ ৩.৯৪। এছাড়া ময়মনসিংহের কলসিন্দুর স্কুলের শামসুন্নাহার (সিনিয়র) জিপিএ ৩.০৬, রেহেনা জিপিএ ৩.৭৫, মাহফুজা জিপিএ ৪.৩৩ ও সাজেদা পেয়েছেন জিপিএ ৩.৮৩। অন্যদিকে রাঙামাটির স্থানীয় স্কুল থেকে জিপিএ ২.০০ পেয়ে পাস করেছেন আনাই মগিনী। তারা সবাই এই সাফল্য ধরে রাখার কথা ব্যক্ত করেছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close