ক্রীড়া ডেস্ক

  ২৯ মার্চ, ২০২০

হিদালগো বেঁচে থাকবেন ফরাসিদের হৃদয়ে

রক্ষণের তোয়াক্কা তিনি কখনোই করেননি। খেলোয়াড়ি জীবনে ছিলেন আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার। কোচিং জীবনেও দলের খেলোয়াড়দের শুধু একটি কথাই বলে গেছেন টিপু সুলতানের মতোÑ আক্রমণ, আক্রমণ ও আক্রমণ!

খেলোয়াড়ি বা কোচিং জীবনে যেমন গোলবার আগলে রাখার কথা ভাবেননি, জীবন নিয়েও তার দর্শনটা অনেকটা সে রকমই ছিল। শেষ জীবনে এসে রোগ-ব্যাধি বাসা বেঁধেছিল শরীরে। কিন্তু তিনি তোয়াক্কা করেননি জীবন বাঁচানোর। শেষ পর্যন্ত হাসিখুশি থেকে গেছেন। এই তো সপ্তাহ কয়েক আগে ফ্রান্সের ১৯৮৪ ইউরো জয়ী কোচ মিশেল হিদালগোর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন মিশেল প্লাতিনিসহ তার সাবেক শিষ্যদের অনেকেই। রোগে আক্রান্ত হিদালগো হাসিখুশিতে ভরা সময় কাটিয়েছেন তাদের সঙ্গে।

এভাবে হাসতে হাসতেই গত বৃহস্পতিবার মার্শেইয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন হিদালগো। পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে অবিনশ্বরের পথে যাত্রাকালে প্লাতিনিদের গুরুর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। ১৪ বছরের পেশাদার খেলোয়াড়ি জীবনে খেলেছেন মাত্র তিনটি ক্লাবের হয়েÑ লা হাভরে, রাঁস ও মোনাকো। অর্জন বলতে তিনটি লিগ শিরোপা আর একবার ইউরোপিয়ান কাপের রানার্সআপ। রাঁসের হয়ে ১৯৫৬ সালে ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে ৪-৩ গোলে হেরে যাওয়া ম্যাচে গোল পেয়েছিলেন হিদালগো। অনেক বছর ধরেই ভালো ফুটবল উপহার দিলেও কোনো শিরোপা জিততে পারছিল না ফ্রান্স। সাফল্য-বুভুক্ষু দেশটির ফেডারেশন তাই দলের দায়িত্বভার তুলে দেন হিদালগোর কাঁধে। ১৯৭৬ সালে দায়িত্ব পেয়ে দলটিকে নিজের মতো করে সাজান হিদালগো। মাঝ মাঠে তিনি গড়ে তোলেন ‘জাদুকরী চতুষ্টয়’। যে চতুষ্টয়ের নেতা ছিলেন প্লাতিনি। তার সঙ্গে ছিলেন আলাইন জিরেসে, জিন তিগানা ও বানার্ড জেংহিনি। ৪ শিষ্যের কানেই হিদালগো দিয়েছিলেন সুন্দর ফুটবল আর আক্রমণের মন্ত্র। আর দিয়েছিলেন লাগামহীন স্বাধীনতা। এই চতুষ্টয়ের সামনে তিনজন ফরওয়ার্ড। এভাবেই দল সাজাতেন হিদালগো। আর এভাবে আক্রমণাত্মক আর সুন্দর ফুটবলের মন্ত্রে উজ্জীবিত ফ্রান্স হিদালগোর অধীনে ওঠেছিল ১৯৮২ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে আর জিতেছিল ১৯৮৪ ইউরো।

১৯৫৮ বিশ্বকাপের পর ১৯৮২ সালেই প্রথম বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলে ফ্রান্স। অসাধারণ ফুটবল খেলে ১২০ মিনিটের খেলা শেষে পশ্চিম জার্মানির সঙ্গে ৩-৩ গোলে ড্র করে ফ্রান্স। এরপর টাইব্রেকারে ৫-৪ গোলে হারে তারা। ১৯৬০ থেকে ১৯৮০ এই কয়েক বছর ইউরোর বাছাইপর্ব উতরাতে না পারা ফ্রান্স ১৯৮৪ সালে হয়ে গেল চ্যাম্পিয়ন! এরপর ২০০০ সালেও ইউরোর শিরোপা জিতেছে ফ্রান্স, রানার্সআপ হয়েছে ২০১৬ সালে। জিতেছে দুটি বিশ্বকাপ। কিন্তু হারিয়ে যাওয়া ফ্রান্সকে আবার ফুটবল মানচিত্রে ফিরিয়ে এনেছিলেন হিদালগোই।

সেই সময়ের কথা স্মরণ করে প্লাতিনি হিদালগোকে নিয়ে বলেছেন, ‘মিচেলই (হিদালগোই) ফ্রান্সকে জাগিয়ে তুলেছিলেন। ফিরিয়ে দিয়েছিলেন আমাদের শিল্পিত ফুটবল। সুন্দর ফুটবল খেলাটাকে বেছে নিয়েছিলেন তিনি। আর আমাদের সবাইকে দিয়েছিলেন নিজেকে মেলে ধরার স্বাধীনতা। তিনি মাঠে আমাকে ফুল হয়ে ফুটতে সাহায্য করেছেন। আজ মানুষ যে আমাকে যেমন খেলোয়াড় হিসেবে মনে রেখেছে, এর পুরোটাই তার অবদান।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close