সিলেট স্টেডিয়ামের এক নম্বর নেটে মাশরাফি বিন মর্তুজার অফ স্টাম্পের বাইরের বলটায় তামিম ইকবাল খেললেন লফটেড ড্রাইভ, কিন্তু ঠিক মাঝ ব্যাটে লাগল না। বল উড়ে গেল কাভারের দিকে। মাশরাফি ‘আউট’, ‘আউট’ বলে উল্লাস করতে শুরু করলেন। কিন্তু তামিম কিছুতেই মানছেন না সেটা আউট। দেশসেরা ওপেনারের কথা, বল পেরিয়েছে ৩০ গজের বৃত্ত, এটা চার। মাশরাফির পাল্টা জবাব, ‘আরে কাভারে ইজি ক্যাচ’। তামিম না মানায় মাথায় হাত দিয়ে বসে বিস্মিত মাশরাফি। আম্পায়ারের ভূমিকায় থাকা পেস বোলিং কোচ ওটিস গিবসন যেন এমন মজার দৃশ্য জীবনে দেখেননি। দীর্ঘদিন পর জাতীয় দলের অনুশীলন নেটে টাইগারদের ওয়ানডে অধিনায়ককে পাওয়া গেল এমন ফুরফুরে মেজাজে। নেটে বল করেছেন খুব সামান্য সময়। ওতেই বেশ ধারাল দেখা গেছে তাকে। তবে মাশরাফিকে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে অনেক দিনের মরিচা ধরা পুরোনো আবহ ফেরানোর চেষ্টায়।

কাল সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে ছিল বাংলাদেশ দলের অনুশীলন। সময়ের কিছুটা আগে কোচ আর সব খেলোয়াড় নেমে গেলেন মাঠে। গুরু রাসেল ডমিঙ্গো সবাইকে নিয়ে গোল হয়ে বৈঠকের মতো করে বসলেন। দেরি হয়ে যচ্ছিল বলে ড্রেসিং রুম থেকে দৌড়ে গিয়ে সেখানে যোগ দিলেন মাশরাফি। গিয়েই সেই বৈঠকের মধ্যমণি তিনি! লম্বা একটা বক্তব্য দিতে দেখা গেল তাকে। আঙুল নেড়ে কী যেন সব বোঝালেন। তাতে পাওয়া গেল চিরচেনা নেতারই ছবি।

এরপর শুরু অনুশীলন। মাশরাফি ঘুরেফিরে এর-ওর কাছে গিয়ে কথা বলেছেন। ডমিঙ্গোর সঙ্গেই অবশ্য তাকে দেখা গেছে বেশির ভাগ সময়। পরে নেটে মাশরাফি বল করেছেন ৫ ওভারের মতো। শুরুতে ছোট রানআপে কম এফোর্ট দিয়ে চালিয়েছেন বোলিং। ধীরে ধীরে এফোর্ট বাড়িয়েছেন। বঙ্গবন্ধু বিপিএলের পর শরীর থেকে বাড়তি মেদ ঝরিয়েছেন। ওয়ানডে সিরিজের জন্য ঢাকায় নেটে তাকে দারুণ বল করতে দেখা গেছে। সিলেটেও মিলল তার ছিটেফোঁটা। হিসেবে ধরলে ম্যাশের বলে এদিন অন্তত তিনবার আউট হয়েছেন তামিম, বার কয়েক হয়েছেন পরাস্ত। এমনিতে বাংলাদেশের নেটে মাশরাফি-তামিম কাউকে ছাড় না দিয়ে চালান লড়াই। নির্মোহ দৃষ্টিতে দেখলে কালকের লড়াইয়ে ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’কেই এগিয়ে রাখতে হয়।

বোলিং শেষ করে পরে নেটে তেড়েফুঁড়ে ব্যাট করতেও দেখা গেছে তাকে। অনুশীলন সেরে কোচের সঙ্গে একান্তে লম্বা সময় নিয়ে কথা হয়েছে অধিনায়কের। একাদশ, দলের পরিকল্পনা ঠিক করারই সভা হয়তো।

জিম্বাবুয়ে সিরিজ দিয়ে মাশরাফি জাতীয় দলের চেনা আঙিনায় ফিরলেন প্রায় সাত মাস পর। হতাশার বিশ্বকাপ শেষে জুলাই মাসে দেশে ফিরে শ্রীলঙ্কা যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে যাওয়ার আগের দিন ছিটকে যান তিনি। এরপর এই কমাস বাংলাদেশ খেলেনি কোন ওয়ানডে, মাশরাফিকেও জাতীয় দলের অনুশীলনে দেখার সুযোগ তাই ছিল না।

তবে না থেকেও পুরোটা সময় ‘অবসর বিতর্ক’ নিয়ে তুমুল আলোচনায় ছিলেন ৩৬ বছর বয়সি তারকা। পাঁচ মাস খেলা ও অনুশীলনের বাইরে থেকে ফিরেছিলেন বঙ্গবন্ধু বিপিএলে। ভালো-মন্দের ওই আসরের পর ফের চাঙা হয় তার অবসর বিতর্ক। মাশরাফিকে মাঠ থেকে বিদায় দিতে অনেকবারই নিজেদের ইচ্ছা জানিয়ে আসছে বিসিবি, মাশরাফি নিজে অবশ্য সেই বিদায় নিতে রাজি নন। সম্প্রতি বোর্ড প্রধান বলেছেন, মাসখানেকের মধ্যে পরবর্তী ওয়ানডে অধিনায়ক ঘোষণা করবেন তারা। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই সিরিজই অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফির শেষ কি না, এই নিয়েও আছে ধোঁয়াশা। এপ্রিলে পাকিস্তানের মাটিতে ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে যাওয়ার ইচ্ছা এরই মধ্যে যে পোষণ করেছেন তিনি!

"